টোকিয়োর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শনিবার শেষ হতে পারে সুদীর্ঘ অপেক্ষার। জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়ার সামনে বিরল সুযোগ, ভারতকে অ্যাথলেটিক্সে পদক দেওয়ার!
নীরজকে নিয়ে প্রত্যাশা আরও বেড়েছে যোগ্যতা অর্জন রাউন্ডে তিনি প্রথম হওয়ায়। যেখানে ২৩ বছর বয়সি এই অ্যাথলিট চমকে দেন ৮৬.৫৯ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন ছুড়ে। হরিয়ানার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে নীরজের বাবা কৃষক। শুধুই রোগা হওয়ার জন্য তিনি অ্যাথলেটিক্সে এসেছিলেন। অথচ তাঁর সামনেই এখন ইতিহাস গড়ার সুযোগ। যে নজির অল্পের জন্য গড়তে পারেননি মিলখা সিংহ, পি টি উষারা।
যোগ্যতা অর্জন রাউন্ডে প্রথম হয়ে নীরজ বলেছিলেন, ‘‘এটাই আমার প্রথম অলিম্পিক্স। এখানে সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। ওয়ার্ম-আপে আমি খুব ভাল কিছু করতে পারিনি। কিন্তু যোগ্যতা অর্জনের সময় আমার প্রথম থ্রো-টা খুব ভাল কোণে গিয়েছে। যেটা অবশ্যই একটা নিখুঁত ছোড়া।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আমাকে থ্রোয়ে আরও বেশি করে মনঃসংযোগ করতে হবে। এবং যোগ্যতা অর্জনের থ্রো-টা আবার করাই আমার লক্ষ্য। তবে আরও ভাল স্কোর করতেই হবে।’’ প্রসঙ্গত নীরজ টোকিয়োয় নামার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন ৮৮.০৭ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে। যা এ’বছরের চতুর্থ সেরা থ্রো।
বলা হচ্ছে, এ বারের অলিম্পিক্সে জ্যাভলিনে সোনার দাবিদার ২০১৭-র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির ইয়োহানেস ফেইটা। তিনি যোগ্যতা অর্জন রাউন্ডে ছোড়েন ৮৫.৬৫ মিটার। যার অর্থ যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে তাঁকেও নীরজ ছাপিয়ে যান। কিছু দিন আগেই ফেইটা প্রায় হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, অলিম্পিক্সে নীরজের পক্ষে তাঁকে হারানো খুবই কঠিন। টোকিয়োয় এখনও ফেইটাকে তাঁর পরিচিত ছন্দে পাওয়া যায়নি। তার উপরে যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে প্রথম দু’টি থ্রোয়ের সময় তাঁকে রীতিমতো নড়বড়ে দেখিয়েছে। তাই আশায় বুক বাঁধছেন ভারতের অনেকেই। বলছেন, হরিয়ানার তরুণ অ্যাথলিটের সামনে পদক জেতার ভাল সুযোগ রয়ছে।
অবশ্য টোকিয়োয় শুরুটা খারাপ হলেও ২৮ বছরের ফেইটা এই বছরে অন্য কিছু প্রতিযোগিতায় সাত বার অসাধারণ সব থ্রো করেন। যার কোনওটা আবার ৯০ মিটারেও পৌঁছে যায়। ধরা হয়েছিল, নীরজকে কঠিন লড়াইয়ের সামনে ফেলতে পারতেন দুই অলিম্পিক্স পদকজয়ী মারসিন কুরুকোভস্কি এবং কেসর্ন ওয়ালকট। কিন্তু তাঁরা এ বার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেননি। একই ঘটনা ঘটে, প্রাক্তন বয়সভিত্তিক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গাটিস ক্যাকস ও বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অ্যান্ডারসন পিটার্সের ক্ষেত্রেও। এ সবের জন্যই ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স মহল নীরজকে নিয়ে
স্বপ্ন দেখছে।
তবে ফেইটা ছাড়াও নীরজের সামনে কিন্তু আরও কঠিন প্রতিপক্ষরা আছেন। যাঁরা ভারতীয় তরুণকে কড়া পরীক্ষায় ফেলতে পারেন। যেমন, জার্মানিরই জুলিয়েন ওয়েবার। চেক প্রজাতন্ত্রের দুই অভি়জ্ঞ অ্যাথলিট। ইয়াকুব ভাডলেইখ এবং ভিটেজ়স্লাভ ভেসেলি। এঁরা দু’জনেই অতীতে নীরজের চেয়ে বেশি দূরে জ্যাভলিন ছুড়েছেন। ধরে নেওয়া হচ্ছে, নীরজকে পদক নিশ্চিত করতে গেলে ৯০ মিটারের উপরে ছুড়তে হবে। এই ফাইনালে দেখা যাবে ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথও। ফাইনালে উঠেছেন আর্শাদ নাদিমও। যোগ্যতা অর্জন পর্বে পাকিস্তানের এই অ্যাথলিট তৃতীয় হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে নীরজই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।