T20 World Cup 2024

সূর্য থেকে শিবম, বিশ্বকাপে ব্যর্থ ভারতের মিডল অর্ডার, পাকিস্তানকে হারালেও থাকছে চিন্তা, খেলবেন রিঙ্কু?

পাকিস্তানকে ভারত হারিয়েছে বটে, কিন্তু রোহিতদের ব্যাটিং চিন্তা বাড়াচ্ছে। যে ভাবে সূর্যকুমার, শিবমেরা বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন তাতে এই দল নিয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখা মুশকিল হচ্ছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ১৬:১২
cricket

বিশ্বকাপে ভারতীয় দল। ছবি: রয়টার্স।

যেখানে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা রান করতে পারছেন না সেখানে কোন আক্কেলে চার নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হল অক্ষর পটেলকে? তা-ও আবার সূর্যকুমার যাদবের আগে। তা হলে কি টি-টোয়েন্টি ক্রমতালিকায় বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার সূর্যের উপর ভরসা করতে পারছেন না রাহুল দ্রাবিড়েরা। নইলে কেন সূর্যকে আগে নামানো হল না? পাকিস্তানের চার পেসারকে সামলানোর জন্য যে কোনও দিন অক্ষরের থেকে ভাল ব্যাটার সূর্য। তাঁকে কি আড়াল করার চেষ্টা করছে ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট? যে ভাবে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে শিবম দুবে, রবীন্দ্র জাডেজাদের। অলরাউন্ডার তকমার আড়ালে ব্যাট হাতে তাঁদের ব্যর্থতা ঢাকছে ম্যানেজমেন্ট। পাকিস্তানকে ভারত হারিয়েছে বটে, কিন্তু রোহিতদের ব্যাটিং চিন্তা বাড়াচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটারেরা যে খেলা দেখিয়েছেন তাতে এই দল নিয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখা মুশকিল হচ্ছে।

Advertisement

সমস্যার শুরুটা বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় থেকে। আইপিএলের কয়েকটা ম্যাচের পারফরম্যান্স দেখে নিয়ে নেওয়া হল শিবমকে। তিনি নাকি মাঝের ওভারে শুরু থেকে নেমে বড় শট খেলতে পারেন। মাঝের ওভারে শিবম নামছেন বটে, কিন্তু বড় শট খেলা তো দূর, ব্যাটে-বলে করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ৯টি বল তিনি খেলেছেন, তাতে এক বারের জন্যও দেখে মনে হয়নি বড় শট মারতে পারবেন। অথচ তখন বল করছিলেন ইমাদ ওয়াসিম। বাঁহাতি স্পিনারের বিরুদ্ধে বাঁহাতি ব্যাটার অনেক সুবিধা পায়। শিবম হাত খোলার চেষ্টাও করলেন না। নাসিম শাহের যে বলে তিনি আউট হলেন সেটি উইকেটে পড়ে একটু থমকে এল। তাতে কী? এই উইকেটে বলের গতি ও বাউন্স যে অসমান তা ব্যাট করতে নামার আগে থেকেই সবাই জানেন। সেখানে ও ভাবে বলের সামনে ব্যাট এগিয়ে দেওয়া পাড়ার ক্রিকেটেও কেউ করে না।

শিবম না হয় ভারতীয় ক্রিকেটে তরুণ, কিন্তু যিনি বিরাট কোহলির সময় থেকে খেলছেন, সেই জাডেজা কী করছেন? প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে দেখা যাচ্ছে ব্যাট করতে নেমে জাডেজার নাকানিচোবানি খাওয়া। পাকিস্তান ম্যাচেও সেটাই হয়েছে। শিবমের মতো তিনিও হঠাৎ ব্যাট এগিয়ে দিলেন। কঠিন উইকেটে সবাই প্রথম বলটি অন্তত শরীরের কাছে খেলার চেষ্টা করে। তা না করে শরীর থেকে দূরে ব্যাট নিয়ে গেলেন জাডেজা। ফল যা হওয়ার তাই হল। প্রথম বলেই শূন্য রানে ফিরলেন তিনি।

সূর্যেরও একই হাল। আইপিএলের আগে চোট পেয়েছিলেন। চোট সারিয়ে ফিরে এখনও নিজের ফর্মে ফিরতে পারেননি। সূর্যের দুর্বলতা ধরে ফেলেছে প্রতিপক্ষ। তিনি ব্যাট করতে নামলে তাই এখন আর কেউ তাঁর শরীর লক্ষ্য করে বল করেন না। কারণ, উইকেটের পিছনে খুব ভাল খেলেন তিনি। বলের গতি ব্যবহার করে বড় শট মারেন। তাই তিনি নামলেই বোলারেরা এখনও অফ স্টাম্পেই বেশি বল করেন। বলের গতিও কম রাখেন বোলারেরা। তাতেই সূর্যের অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি স্ট্রেট ড্রাইভ ছাড়া কোনও বল ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলতে পারেননি। যে বলে তিনি আউট হয়েছেন তা অন্য সময় বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে পারতেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৩০ গজও পার করতে পারেননি। শট মারতে গিয়ে তাঁর হাতেই ব্যাট ঘুরে গিয়েছে। ফলে শটে জোর পাননি।

ভারতের ওপেনিং জুটিও কি স্বস্তি দেবে দ্রাবিড়কে। আইপিএলে সবচেয়ে বেশি রান করা বিরাট বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি। রোহিত পাওয়ার প্লে-তে কয়েকটি শট মারছেন বটে, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে না, একা খেলা বার করতে পারবেন। এ বারের বিশ্বকাপ ভারতকে জিততে হলে বিরাট ও রোহিতের রান করা খুবই জরুরি। কারণ, ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার তাঁরা। সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতাও তাঁদের রয়েছে। তাই তাঁরা রান না পেলে চাপ বাড়ছে মিডল অর্ডারের উপর। সেই চাপ সামলাতে পারছেন না সূর্য, শিবমেরা। ভারতের ১৫ জনের দলে কিন্তু আর এক জন ওপেনার রয়েছেন। যশস্বী জয়সওয়াল। তাঁকে বসিয়ে বিরাটকে দিয়ে ওপেন করানো হচ্ছে। তাই বিরাটকে বাড়তি দায়িত্ব নিতেই হবে।

গোটা ব্যাটিং অর্ডারের অন্ধকারে একমাত্র আশার আলো ঋষভ পন্থ। সাবলীল ব্যাটিং করছেন। পিচ তাঁকে সমস্যায় ফেলতে পারছে না। নিজের স্বাভাবিক শট খেলছেন। ব্যাট করতে নেমে টি-টোয়েন্টির মেজাজে খেলছেন পন্থ। কয়েকটি সুযোগ অবশ্য প্রতিপক্ষকে দিয়েছেন। কিন্তু এটাই পন্থের ব্যাট করার কায়দা। যত ক্ষণ ক্রিজ়ে থাকবেন স্কোরবোর্ড সচল রাখবেন। আয়ারল্যান্ড ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমে ভাল খেলেছিলেন পন্থ। আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যাট থেকে ৪২ রান না এলে পাকিস্তানকে হারাতে পারত না ভারত। কিন্তু পন্থ একা তো আর সব ম্যাচে খেলতে পারবেন না। তিনি যে দিন ব্যর্থ হবেন সে দিন দায়িত্ব নেবেন কে?

বোলারদের দাপটে ম্যাচ জিতছে ভারত। বোলারেরা ঢেকে দিচ্ছেন ব্যাটারদের ব্যর্থতা। কিন্তু রোজ রোজ তো যশপ্রীত বুমরা, আরশদীপ সিংহেরা বাঁচাবেন না। যে দিন বোলারেরা ব্যর্থ হবেন, সে দিন ব্যাটারদের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রথম দুই ম্যাচের পর মনে হচ্ছে না, ব্যাটিং আক্রমণ সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি। ৮৯ রানে ৩ উইকেট থেকে যে দল ১১৯ রানে অল আউট হয়ে যায়, সেই দলের ব্যাটারদের উপর ভরসা করা কঠিন। নক আউটে এ রকম আয়ারাম গয়ারাম অবস্থা হলে কিন্তু ডুবতে হবে দলকে।

বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, গত এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার রিঙ্কু সিংহকে কেন দলে নেওয়া হল না? রিঙ্কু আমেরিকায় গিয়েছেন। রিজার্ভ হিসাবে। কোনও ক্রিকেটার চোট পেলে সুযোগ হতে পারে তাঁর। সেই সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু যে ভারে শিবম উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন, গ্যালারিতে বসে নিশ্চয় তা দেখে হাত কামড়েছেন রিঙ্কু। আইপিএলে ঘরোয়া বোলাদের বিরুদ্ধে ছক্কা মারা আর নাসিম শাহ, শাহিন আফ্রিদিদের বিরুদ্ধে ব্যাট করা যে এক নয় তা বুঝতে হবে শিবমকে। নিউ ইয়র্কের উইকেটে প্রয়োজন ধৈর্য ধরে ব্যাট করা। মাঠের আয়তন কাজে লাগিয়ে দৌড়ে রান নেওয়া। খারাপ বল পেলে বড় শট খেলা। যে কাজটা রিঙ্কু খুব ভাল করতে পারেন। এ বারের বিশ্বকাপের বেশির ভাগ মাঠের উইকেট মন্থর। সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল নির্বাচকদের। এই উইকেটে শিবমের থেকে রিঙ্কু অনেক বেশি কার্যকর। নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর জানিয়েছিলেন, শিবম অলরাউন্ডার হিসাবে রিঙ্কুকে টেক্কা দিয়েছেন। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়া তো তাঁকে বল করতেও দেখা যায়নি।

এই পরিস্থিতিতে আবার ভারতীয় সমর্থকেরা দাবি তুলেছেন, শিবমের বদলে রিঙ্কুকে নেওয়ার। কিন্তু চাইলেই তো দলে বদল করা সম্ভব নয়। তাই যে ক্রিকেটারেরা রয়েছেন তাঁদের নিয়েই খেলতে হবে ভারতকে। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান ছাড়া তেমন বড় দলের বিরুদ্ধে খেলবে না ভারত। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সামনে বড় দল পড়বে। তারা কিন্তু পাকিস্তানের মতো ব্যাট করবে না। তাই সামনের ম্যাচগুলিতে আরও সতর্ক থাকতে হবে রোহিতদের। যত দ্রুত ব্যাটারেরা ফর্মে ফিরতে পারেন তত মঙ্গল। নইলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যা হয়েছে, নক আউটে তেমনটা হলে আরও এক বার ব্যর্থ হয়ে দেশে ফেরার বিমানে উঠতে হবে রোহিতদের।

আরও পড়ুন
Advertisement