ফরাসি ওপেনের ট্রফি হাতে শিয়নটেক। ছবি: রয়টার্স
ফরাসি ওপেনের নতুন রানি কি এখন থেকে ইগা শিয়নটেকই?
শনিবার আবার তাঁর ফরাসি ওপেন জয় দেখার পর সেটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত চার বছরের মধ্যে তিন বার ফরাসি ওপেন জিতলেন তিনি। তবে এ দিন গোটা ম্যাচে দারুণ লড়াই হল। একটি সেট খোয়ালেন শিয়নটেক। লড়াই দিলেন প্রতিপক্ষ ক্যারোলিনা মুকোভা। কিন্তু হেরেই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত শিয়নটেক জিতলেন ৬-২, ৫-৭, ৬-৪ গেমে। টানা দ্বিতীয় বার ফরাসি ওপেন জিতলেন তিনি। মোট চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম হল পোল্যান্ডের খেলোয়াড়ের।
এই ফাইনাল যে এত ক্ষণ ধরে চলবে এবং দুই খেলোয়াড় যে এ ভাবে নিজেদের নিংড়ে দেবেন, তা আগে ভাবা যায়নি। চোটের কারণে দীর্ঘ দিন কোর্টের বাইরে থাকা এবং সফল ভাবে প্রত্যাবর্তন ঘটানো মুকোভাকে নিয়ে একটা আশা ছিল। কিন্তু যে খেলা তিনি দেখালেন, তা অনেকেই প্রত্যাশা করেননি।
সুরকির কোর্টে দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম থাকা এবং ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলতে থাকা ইগাকে খুব একটা চাপে ফেলতে পারবেন মুকোভা, এমনটা কেউই মনে করেননি। কিন্তু মুকোভা তাঁদের ভুল প্রমাণিত করলেন। শুরুতে তাঁকে অবিন্যস্ত লাগলেও, যত খেলা এগোল তত ছন্দে ফিরলেন। খেলা শেষের কয়েক মিনিট আগেও বোঝা যায়নি যে শিয়নটেক ম্যাচটা বের করে নেবেন। এতটাই ভাল হয়েছে দুই খেলোয়াড়ের লড়াই।
প্রথম সেটে স্বাভাবিক ভাবেই দাপট দেখিয়েছেন ইগা। বেশ কয়েকটি ব্যাকহ্যান্ড এবং ড্রপ শট ছাড়া মুকোভার থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় সেটেও শুরুতে ০-৩ পিছিয়ে পড়েন তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর প্রত্যাবর্তন। দু’বার ব্রেক করেন ইগাকে। ০-৩ পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি সেট ছিনিয়ে নেন ৭-৫ গেমে।
🔙✌️🔙@iga_swiatek overcomes Muchova 6-2, 5-7, 6-4 to successfully defend her title and earn a third Roland-Garros crown.#RolandGarros pic.twitter.com/q1OPO4qRJa
— Roland-Garros (@rolandgarros) June 10, 2023
তৃতীয় সেটে মুকোভা ২-০ এগিয়ে যান। ফিলিপে শাঁতিয়ের কোর্টে হাজির থাকা দর্শকরা তখন অঘটনের প্রহর গোণা শুরু করে দিয়েছেন। শুরুর দিকে কার্যত হিসাবের বাইরে চলে যাওয়া মুকোভার এই প্রত্যাবর্তন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন হত। ইগাকেও তখন অচেনা লাগছিল। এমন কিছু শট খেললেন, ‘আনফোর্সড এরর’ করলেন, যা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। মুকোভার শটের কোনও দিশাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।
কিন্তু অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা যে ভাবে ম্যাচে ফেরেন সে ভাবেই ফিরলেন ইগা। তৃতীয় সেটে পর পর দু’বার ব্রেক করলেন মুকোভাকে। ম্যাচ ওখানেই ঘুরে গেল। নবম গেমে ইগা নিজের সার্ভ ধরে রাখতেই চাপে পড়েছিলেন মুকোভা। শেষ মেশ ম্যাচ হারতে হল ‘ডাবল ফল্ট’ করে।
ম্যাচের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল দিনটা হয়তো শিয়নটেকের হতে চলেছে। ম্যাচের বয়স তখন ৯ মিনিট। স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ইগা ৩-০ গেমে এগিয়ে। শুরুটাই এমন দাপটের সঙ্গে করলেন ইগা যে, ছন্দটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন মুকোভা। প্রথম গেমের ক্ষেত্রে লম্বা র্যালি দেখা যায়। মুকোভার র্যাকেট থেকে একটি ভাল ড্রপ শট দেখা যায় শুরুতেই। দ্বিতীয় গেমেই মুকোভাকে ব্রেক করেন ইগা। ৪০-১৫ এগিয়ে থাকা অবস্থায় মুকোভার একটি ফোরহ্যান্ড কোর্টের বাইরে যায়।
তৃতীয় গেমে ইগা নিজের সার্ভ ধরে রাখেন। চতুর্থ গেমে গিয়ে মুকোভা প্রথম বার ইগার থেকে গেম কেড়ে নেন। তবে দুই খেলোয়াড়ের আসল লড়াই দেখা যায় পঞ্চম গেমে। প্রায় দশ মিনিটের কাছাকাছি লড়াই হয় একটি গেম নিয়ে। মুকোভার র্যাকেট থেকে ভাল ‘স্লাইস’ দেখা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই খেলা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তাঁর একটি ক্রসকোর্ট ফোরহ্যান্ড রিটার্ন নেটে আছড়ে পড়তেই গেম জেতেন ইগা।
অষ্টম গেমে গিয়ে আবার মুকোভাকে ব্রেক করেন ইগা। কোনও পয়েন্টই পেতে দেননি মুকোভাকে। বেশ কয়েকটি ব্যাকহ্যান্ডের প্রচেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু কাজে লাগেনি কোনওটাই।
দ্বিতীয় সেটটিও শুরু হয় প্রথমটির মতোই। এ বারও অল্প সময়ের ব্যবধানে ৩-০ এগিয়ে যান ইগা। দ্বিতীয় গেমে ব্রেক করেন মুকোভাকে। নিজের সার্ভ ধরে রেখেছিলেন তৃতীয় গেমে। চতুর্থ গেমে নিজের সার্ভ ধরে রাখেন মুকোভা। ম্যাচের একমাত্র ব্রেক তিনি পান পঞ্চম গেমে। শেষ পয়েন্টটির ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে এসে তাঁর ‘ডাউন দ্য লাইন ফোরহ্যান্ড’ ম্যাচের অন্যতম সেরা শট। সেখান থেকে ম্যাচ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন মুকোভা।
তৃতীয় সেটে ২-০ এগিয়ে যান। কিন্তু এই সেটে দুই খেলোয়াড়ই নিজের সার্ভ ধরে রাখতে পারছিলেন না। একের পর এক ‘ব্রেক’ হচ্ছিল। নবম গেমে ইগা নিজের সার্ভ ধরে রাখার পরেই ম্যাচ তাঁর পকেটে চলে আসে।