Rafael Nadal

Nadal vs Djokovic: স্যাক্সোফোন বনাম ইলেকট্রিক গিটার, মঙ্গলবারের টেনিস মূর্ছনার দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

মঙ্গলবার ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচ। কে এগিয়ে রয়েছেন এই ম্যাচে?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২২ ১৯:৪২
নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদাল।

নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদাল। ফাইল চিত্র

রজার ফেডেরার? ভায়োলিন। বেহালা।

রাফায়েল নাদাল? ইলেকট্রিক গিটার।

নোভাক জোকোভিচ? অর্কেস্ট্রা। নাহ্, স্যাক্সোফোন।

Advertisement

কে বলছেন? নোভাক জোকোভিচ। কেন বলছেন? কারণ, তাঁকে বলা হয়েছিল, তিন যুগন্ধর টেনিস তারকার কাকে কোন বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। কখন বলছেন? যখন রাত পোহালে তাঁর সঙ্গে নাদালের লড়াই। কোথায় বলছেন? প্যারিসে। ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালের আগে।

মঙ্গলবার যে ম্যাচ দেখা যাবে সোনি লাইভ চ্যানেলে। খেলা শুরুর সময় এখনও ঠিক হয়নি। সেটা নির্ভর করছে তার আগের ম্যাচ কখন শেষ হয়, তার উপর। কিন্তু ভারতীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে ওই ম্যাচ হওয়ার কথা।

সেই মহারণ শুরুর আগে দুই মেরুতে দু’জন। চোট-আঘাতে কাবু নাদাল বলছেন, তাঁর মনে হচ্ছে সব ম্যাচই শেষ ম্যাচ!। তবু হাল ছাড়বেন না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন। আর তাঁর প্রবল প্রতাপশালী প্রতিপক্ষ জোকোভিচ বলছেন, ‘‘নাদাল মানেই তুমুল এনার্জি। তাই ও ইলেকট্রিক গিটার। আর আমি তো সব কিছু! তাই আমি অর্কেস্ট্রা।’’ তার পরেই শুধরে নিয়ে বলছেন, ‘‘না-না, আমি হলাম স্যাক্সোফোন। যে কোনও ধরনের মিউজিকের সঙ্গেই অনায়াসে মানিয়ে যায়।’’

রাফায়েল নাদাল।

রাফায়েল নাদাল। ফাইল চিত্র

ফুরফুরে মনোভাব থেকে স্পষ্ট, বিশ্বের এক নম্বর এবং ফরাসি ওপেনের শীর্ষবাছাই জোকোভিচ ম্যাচটায় মানসিক ভাবে এগিয়ে থাকবেন। এমনিতে জোকোভিচ স্বভাবরসিক। মারিয়া শারাপোভা থেকে নাদাল— কোর্টে সকলের ভাবভঙ্গি নিখুঁত নকল করে দেখাতে পারেন। ফলে তাঁর থেকে এমন জবাব একেবারে অপ্রত্যাশিত নয়। যেমন অপ্রত্যাশিত নয় যে, মঙ্গলবারের ম্যাচ তিনিই ‘ফেভারিট’ হিসেবে শুরু করবেন।

মধ্যরাতে ম্যাচ হওয়ায় তিনি যে অসুবিধায় পড়বেন, তা মেনে নিয়েছেন নাদাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি দিনের আলোয় ম্যাচ চেয়েছিলাম। রাতে খেলা হওয়ায় আমার আলাদ করে সমস্যা হবে। কারণ, রাতে আর্দ্রতা বেশি। তাতে ক্লে কোর্টের চরিত্র বদলে যায়। সেই ক্লে কোর্টে আমি স্বচ্ছন্দ নই।’’

তাঁর প্রতিপক্ষের বক্তব্য, ‘‘খেলার সময় নিয়ে আমাদের দু’জনের বক্তব্য যে একেবারে পরস্পর-বিরোধী হবে, সেটাই স্বাভাবিক। নাদালের বিরুদ্ধে ক্লে কোর্টে নামতে হলে ম্যাচ যত রাতে হয়, আমার জন্য ততই ভাল।’’

ভারতের প্রাক্তন ডেভিস কাপার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, এগিয়ে জোকোভিচই। তবে তার পুরো কারণ নাদালের মানসিক অবস্থা বা চোট নয়। তার চেয়েও বেশি কোর্টের জন্য। সোমবার তিনি বলছিলেন, ‘‘এ বার দেখছি ফরাসি ওপেনের কোর্টের গতি তুলনায় একটু বেশি।’’

নোভাক জোকোভিচ।

নোভাক জোকোভিচ। ফাইল চিত্র

তবে বিশ্বের এক নম্বরের চিন্তা একটাই—এই বছরে অনেক কমসংখ্যক টুর্নামেন্টে খেলে ফরাসি ওপেনে নেমেছেন তিনি। কোভিডের টিকা না নেওয়ায় বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে তাঁকে কার্যত বিতাড়িত করা হয়েছে। তার পর আমেরিকাও একই কারণে দেশে ঢুকতে দেয়নি তাঁকে। ফলে ইন্ডিয়ান ওয়েলস এবং মায়ামিতে খেলা হয়নি জোকোভিচের। কম প্রতিযোগিতায় খেলে গ্র্যান্ড স্লামের মতো খেলতে নামলে যে কোনও সময় পা হড়কানোর ভয় থাকে। কিন্তু জোকোভিচ হলেন জোকোভিচ। রোমে ক্লে-কোর্টে ইটালিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্যারিসে গিয়েছেন। প্রথম চারটি ম্যাচে জাপানের ইয়োশিহিতো নিশিয়োকা, স্লোভাকিয়ার অ্যালেক্স মলক্যান, স্লোভেনিয়ার আলিয়াজ বেদেন এবং আর্জেন্টিনার স্কোয়ার্টম্যানকে স্ট্রেট সেটে হারিয়েছেন।

ইতিহাস বলছে, নাদাল ফরাসি ওপেনে যে তিনটি ম্যাচ হেরেছেন, তার মধ্যে দু’টিতে হারতে হয়েছে জোকোভিচের কাছে। তার মধ্যে গত বারের চার সেটের সেমিফাইনালও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জোকোভিচই ফরাসি ওপেনে ট্রফি নিয়ে যান। আর এ বার? জোকোভিচের মুখোমুখি হওয়ার আগে নাদাল বলছেন, ‘‘গত তিন মাসে এত কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়নি। ফলে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা আমার কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। রোম আর প্যারিস মিলিয়ে ক্লে-কোর্টে টানা ন’টা ম্যাচ জিতে ও (জোকোভিচ) খেলতে নামবে। এখানে তো সবক’টা ম্যাচ স্ট্রেট সেটে জিতেছে! অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবে। আমার অবস্থা কী, সেটা আমি জানি। সেটা মেনে নিয়েই মঙ্গলবার নামব। শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’’

রবিবার প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ৩৬ ছুঁই-ছুঁই নাদালকে পাঁচ সেট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান নবম বাছাই ২১ বছরের ফেলিক্স অগার আলিয়াসিমে। সাড়ে চার ঘণ্টার লড়াইয়ের পর ৩-৬, ৬-৩, ৬-২, ৩-৬, ৬-৩ জেতেন নাদাল। তথ্য বলছে, ফরাসি ওপেনে ১১২টি ম্যাচ খেলে ১০৯ নম্বর ম্যাচটি জিতলেন নাদাল। রোলাঁ গারোয় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই তথ্যটি যথেষ্ট হলেও ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নকে দেখে মনে হচ্ছিল, ২০০৯ সালের পর এই প্রথম প্রি-কোয়ার্টারেই তাঁর বিদায় হয়ে যেতে পারে। ফরাসি ওপেনে এ নিয়ে মাত্র তৃতীয় বার নাদালকে পঞ্চম সেটে পর্যন্ত যেতে হল। শুরু থেকেই মন্থর ছিলেন। একের পর এক আনফোর্সড এরর করেছেন, যা ক্লে-কোর্টে একেবারেই নাদালোচিত নয়।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

আর জোকোভিচ? এই ফরাসি ওপেনে অদ্যাবধি তাঁর সেরা খেলাটা খেলে ১৫ নম্বর বাছাই দিয়েগো স্কোয়ার্টম্যানকে হারিয়েছেন ৬-১, ৬-৩, ৬-৩ গেমে। স্ট্রেট সেটে।

সেই জয়ের পরেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তিন মহারথীকে নিয়ে। তখনই এসেছিল ভায়োলিন, ইলেকট্রিক গিটার আর স্যাক্সোফোনের প্রসঙ্গ। তবে জোকোভিচ সেই ম্যাচে যা খেলছেন, তাতে তিনি অর্কেস্ট্রা এবং স্যাক্সোফোন দু’টোই। ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড, ড্রপ শট, ভলি, নেট লাইন, বেস লাইন— সবেতেই সাবলীল। দম দেওয়া যন্ত্রের মতো। আবার স্যাক্সোফোনের মতোই সব ধরনের মিউজিকের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন— সুরকির কোর্ট, ঘাসের কোর্ট, সিন্থেটিক কোর্ট— সর্বত্র।

বিএনপি পারিবাস ওপেনের পর প্রায় দেড় মাস পাঁজরের চোটে কাবু ছিলেন নাদাল। সঙ্গে যোগ হয় হাঁটু আর গোড়ালির চোট। মুতুয়া মাদ্রিদ ওপেনে কোয়ার্টার ফাইনালে হারার পরে রোম মাস্টার্সে তৃতীয় রাউন্ডেই ছিটকে গিয়েছিলেন। আশ্চর্য নয় যে নাদাল বলেছেন, ‘‘আড়াই সপ্তাহ আগেও জানতাম না, আদৌ এখানে খেলতে পারব কি না। সত্যি কথা বলতে কী, এখানে প্রতিটা ম্যাচে নামার আগে মনে হচ্ছে, রোলাঁ গারোয় বোধ হয় জীবনের শেষ ম্যাচটা খেলতে নামছি!’’

তথ্য বলছে, রোলাঁ গারোয় দশম বারের জন্য জোকোভিচের মুখোমুখি হতে নামছেন নাদাল। দু’জনের লড়াই হয়েছে মোট ৫৯ বার। সার্বিক লড়াইয়ে জোকোভিচ এগিয়ে ৩০-৮ ফলাফলে। কিন্তু ফরাসি ওপেনে নাদাল। ৭-২। যে নাদাল জানেন, রোলাঁ গারো তাঁর নিজস্ব ভূমি। তিনি লালমাটির সম্রাট।

নতুন ফিলিপ শাতিয়ের বিশাল দেওয়ালে বড় বড় করে লেখা হয়েছে, ‘যারা কঠিন এবং দৃঢ়, জয় তাদের জন্য।’ ইলেকট্রিক গিটারকে কি স্যাক্সোফোনের সুর ছাপিয়ে যাবে? নাকি স্যাক্সোফোনের সুরমূর্ছনা ঢাকা পড়বে ইলেকট্রিক গিটারের ঝঙ্কারে!

আরও পড়ুন
Advertisement