Qatar World Cup 2022

মেসি, আর দু’টো ম্যাচ!

নেদারল্যান্ডসে বিরুদ্ধে খুব উত্তপ্ত ম্যাচ খেলে সেমিফাইনালে আসছে আর্জেন্টিনা। ওদের দেখে কিন্তু মনে হচ্ছিল, স্নায়ুর চাপে রয়েছে। এমন একটা ফাউল করল যে, লাল কার্ড হতে পারত।

Advertisement
জিকো
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:০০
সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনে মেসি।

সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনে মেসি। ছবি রয়টার্স।

সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচ যখন হারছিল আর্জেন্টিনা, তখন অনেকেই হয়তো আশঙ্কায় ছিলেন। লিয়োনেল মেসিকে কি তা হলে আর বিশ্বকাপ হাতে দেখা যাবে না? কিন্তু বিশ্বকাপ এ রকমই। অনিশ্চয়তায় ভরা। খারাপ শুরু করে অতীতে অনেক দলই কিন্তু বিশ্বকাপ জিতেছে।

মেসি শুধু থাকেনি, ওর দলকে দারুণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। স্বপ্নপূরণের জন্য বাকি আর দু’টি ধাপ। আর দু’টি ম্যাচ জিততে হবে, তা হলেই এত কালের না জেতা কাপ হাতে ধরার সুযোগ পাবে মেসি। ছিয়াশিতে দিয়েগো মারাদোনা যেমন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ দিয়েছিল, এ বার তেমন সুযোগ থাকছে মেসির সামনে। দু’জনের তুলনা চলছে সব সময়। কে বড় ফুটবলার? আমি তুলনা করতে পছন্দ করি না। দু’জনেই অসামান্য প্রতিভাবান, অসাধারণ দুই ফুটবলার। মারাদোনাকে আমি আমার প্রজন্মের সেরা ফুটবলার মনে করি। মেসি তেমনই এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফুটবলার। আমি খুশি যে, দু’জনকেই দেখতে পেরেছি। আমি মনে করি, মারাদোনার মতোই মেসি ওর দেশের বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। তবে এটাও যেন ভুলে না যাই যে, মেসির প্রতিপক্ষ খুব শক্তিশালী একটা দল। ক্রোয়েশিয়া আসছে ব্রাজিলকে হারিয়ে। আর্জেন্টিনাকে মনে রাখতে হবে, ক্রোয়েশিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল জয় কিন্তু সেই অর্থে অঘটন নয়। যে দলটা আগের বিশ্বকাপেই ফাইনাল খেলেছে, তাদের জয় কী করে অঘটন হতে পারে? তা ছাড়া, ক্রোয়েশিয়া জেতার জন্য অপেক্ষা করতে জানে। ধৈর্য হারায় না। খুব ঠান্ডা মাথায়, সুপরিকল্পিত ভাবে গোছানো ফুটবল খেলে। আর বিশ্বকাপে আগের ম্যাচগুলোতে বারবার দেখা গিয়েছে, একটা মুহূর্তই ম্যাচের রং সম্পূর্ণ ভাবে পাল্টে দিয়ে যেতে পারে। টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার সম্ভবত সেরা। দুর্দান্ত মিডফিল্ডও রয়েছে ওদের। আর একটা ব্যাপার। ক্রোয়েশিয়া চাপ নিতে জানে। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে সেটাও কিন্তু বড় ব্যাপার।

Advertisement

তবে ক্রোয়েশিয়াও জানে, সব হিসাবনিকাশ উল্টে দিয়ে যেতে পারে একটা লোক। লিয়োনেল মেসি। ও এত বড় ফুটবলার যে, সব সময় মার্কিংয়ে রাখলেও সামান্য সুযোগ পেল‌েই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়ে যেতে পারে। মেসির একটা মুভ, একটা পাস বা একটা শটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সারাক্ষণ ও ব্যস্ত থাকে দলের জন্য অবদান রাখতে। কখনও নিজে গোল করছে, আবার কখনও সতীর্থদের জন্য গোলের বল সাজিয়ে দিচ্ছে। কোয়ার্টার ফাইনালে যেমন দিয়েছিল মোলিনার জন্য।

নেদারল্যান্ডসে বিরুদ্ধে খুব উত্তপ্ত ম্যাচ খেলে সেমিফাইনালে আসছে আর্জেন্টিনা। ওদের দেখে কিন্তু মনে হচ্ছিল, স্নায়ুর চাপে রয়েছে। এমন একটা ফাউল করল যে, লাল কার্ড হতে পারত। তার পরে প্রতিপক্ষ বেঞ্চের দিকে বল মারল। তাতে দু’পক্ষে প্রায় হাতাহাতি লেগে গিয়েছিল। এই বিশ্বকাপে এ রকম উত্তপ্ত ম্যাচ আর দেখা যায়নি।

এর পরেই হঠাৎ করে দেখলাম, সকলে রেফারিদের তাক করছে। যারা তোপ দাগছে, তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, এই বিশ্বকাপে কিন্তু প্রযুক্তি আরও বেশি করে নিয়ে আসা হয়েছে। অফসাইড প্রযুক্তি এসে গিয়েছে। তাতে খেলাটাই লাভবান হয়েছে। ‘ভার’ (ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) কোনও ভুল সিদ্ধান্ত দিচ্ছেই না বলা যায়। সারা বছর ধরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যে রকম ‘ভার’ আমরা দেখতে পাই, তার চেয়ে বিশ্বকাপে প্রযুক্তির পারফরম্যান্স অনেক ভাল। মাঠের রেফারিরাও যথেষ্ট ভাল ট্রেনিংপ্রাপ্ত, তাই অভিযোগের কিছু দেখছি না। আমি বলব, ওঁরা যথেষ্ট ভাল কাজই করছেন।

বুধবার অন্য সেমিফাইনালে মুখোমুখি ফ্রান্স ও মরক্কো। আর কেউ নিশ্চয়ই মরক্কোকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার বোকামি দেখাবে না। আমার সব চেয়ে যেটা ভাল লেগেছে, তা হচ্ছে, মরক্কো আগ্রাসী ফুটবল খেললেও প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান দেখাতে ভুলছে না। ওদের খেলায় হুড়মুড় করে কিছু করতে যাওয়ার তাড়না নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোনোর চেষ্টা করছে। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে ওদের খেলায়, কিন্তু সব কিছু ঢেকে দিচ্ছে ইচ্ছাশক্তি দিয়ে। কাউন্টার অ্যাটাকে যখন আক্রমণে উঠছে, পরিষ্কার ভাবে গোলের রাস্তা খুলে ফেলতে পারছে। পর্তুগালের বিরুদ্ধে শনিবারের কোয়ার্টার ফাইনালে কিন্তু শেষের দিকে আরও একটা গোল করতে পারত মরক্কো।

ফ্রান্স যে খুবই শক্তিশালী দল, তা বলার জন্য ফুটবল পন্ডিত হওয়ার দরকার নেই। চোটের জন্য ওরা সেরা ফুটবলারদের হারিয়েছে। যেমন করিম বেঞ্জেমা বা পল পোগবা। তার পরেও দলটায় এত প্রতিভার গভীরতা যে, বেঞ্জেমাদের অভাব চোখে পড়তে দিচ্ছে না। আমার তো সময়-সময় মনে হচ্ছে, ছিটকে যাওয়া তারকাদের চেয়েও যারা তাদের জায়গায় নামছে, তারা বেশি ভাল খেলছে। সকলে তাকিয়ে ছিল এমবাপে-বেঞ্জেমা জুটির জৌলুস দেখার জন্য। বেঞ্জেমা না থাকায় এমবাপে-জিহু জুটি খেলছে। খারাপ কিছু হচ্ছে কি? ফ্রান্সের অগ্রগতিতে গ্রিজ়ম্যানও খুব বড় ভূমিকা নিচ্ছে। ক্লাব ফুটবলে খুব একটা ভাল সময় যাচ্ছিল না গ্রিজ়ম্যানের। কিন্তু বিশ্বকাপে এসে দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে। আমার মতে, এমবাপে-জিহু-গ্রিজ়ম্যান এ বারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভাগ্য গড়ে দিচ্ছে। এ রকম তিন জন ফুটবলারকে একসঙ্গে পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। যারা টেকনিক্যালি নিখুঁত, দুরন্ত ফিনিশার আর সেরা ছন্দে রয়েছে। মরক্কোর রথ থামানোর জন্য ফ্রান্সের ত্রয়ীকে ফের সেরা ছন্দে থাকতেই হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement