যুযুধান: ফাইনালের অনুশীলনে মহম্মদ সালাহ এবং বেঞ্জেমা। ছবি রয়টার্স।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার আক্রমণের পরে রাতারাতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে প্যারিসে নিয়ে আসার ঘোষণা করে দিয়েছিল উয়েফা।
সঙ্কট তৈরি হয় সেই ঘোষণায়। রীতিমতো যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে স্তাদ দে ফ্রান্সের মাঠকে নতুন করে তৈরির কাজ শুরু করে দেন আয়োজকেরা। সেই কাজ শেষ হয়েছে শুক্রবার দুপুরে। স্পেন থেকে বারোটি ট্রাকে করে নতুন মাটি নিয়ে এসে তৈরি করা হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের জন্য নতুন মাঠ। আজ, শনিবার ফাইনালে স্তাদ দে ফ্রান্সের নতুন ভাবে তৈরি হওয়া মাঠ করিম বেঞ্জেমা, মহম্মদ সালাহদের সুন্দর ফুটবলের পক্ষে কতটা উপযোগী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে নতুন মাঠ নিয়ে চিন্তা করার মতো পরিস্থিতি নেই দুই শিবিরে, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে ১-৩ গোলে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ফাইনালে হারের ক্ষত এখনও তাজা লিভারপুল শিবিরে। যে ম্যাচে রিয়ালের প্রাক্তন ডিফেন্ডার সের্খিয়ো র্যামোসের কড়া ট্যাকলে চোখের জলে মাঠা ছাড়তে হয়েছিল মিশরের তারকাকে। যা নিয়ে উয়েফাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিভারপুল তারকা বলে দিয়েছেন, ‘‘এ বার আমাদের কাছে এই ফাইনাল সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার মঞ্চ।’’ দলের অন্যতম সেরা তারকার বক্তব্যে সায় দিয়ে ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপের মন্তব্য, ‘‘ফুটবলাররা এই ম্যাচের জন্য নিজেদের তৈরি করে ফেলেছে। আমার তো নতুন ভাবে কিছু বোঝানোর প্রয়োজন নেই।’’
প্রতিশোধের ভাবনা কিন্তু সমান ভাবে প্রাধান্য পাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ ড্রেসিংরুমেও। ম্যানেজার কার্লো আনচেলোত্তি যেমন উদাহরণ টেনেছেন ১৯৮১ সালের। সে বারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের সাক্ষী ছিল প্যারিস। লিভারপুলের কাছে পরাস্ত হয়েছিল রিয়াল। তিনি বলেছেন, ‘‘সালাহর বক্তব্যকে স্বীকৃতি দিয়ে যদি প্রতিশোধের তত্ত্বকে গুরুত্ব দিতে হয়, তা হলে বলব ১৯৮১ সালে রিয়ালকে হারতে হয়েছিল লিভারপুলের কাছে। তার চেয়ে আমি বলব, শনিবার ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের দুই সেরা দল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। যে দল সাহসী এবং ইতিবাচক ফুটবল উপহার দিতে পারবে, তারাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিয়ে দেশে ফিরবে।’’
শনিবারের মহারণের আগে সাদিয়ো মানে আবার নতুন বিবৃতি দিয়ে অস্বস্তি বাড়িয়েছেন লিভারপুল জনতার। গত সপ্তাহেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানায়, নতুন মরসুমে লিভারপুল ছেড়ে সেনেগাল তারকা পাড়ি দিতে চলেছেন বায়ার্ন মিউনিখে। এ দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মানে বলেছেন, ‘‘উত্তরটা এখন দিতে পারলে হয়তো খুব ভাল হত। তবে ফাইনাল খেলার পরেই সেটা নিয়ে কথা বলব। এই মুহূর্তে লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়ন করা ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে ভাবতে চাই না।’’ যে মন্তব্য শোনার পরে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও গোলকিপার আদ্রিয়ান বলেছেন, ‘‘আমরা কিন্তু সকলেই ২০১৮ সালের সেই ফাইনালে হারের শোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছি। বলা যেতে পারে, এটা বক্সিং ম্যাচ দলের কাছে।’’
ফুঁসছে রিয়াল শিবিরও। এই মরসুমে অনবদ্য ফর্মে থাকা ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেঞ্জেমা যেমন বলে দিয়েছেন, এ বার তিনি যে ছন্দে রয়েছেন, তার সবচেয়ে সুন্দর সমাপ্তি হতে পারে একমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারলেই। স্পেনীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘এ মরসুমে ক্লাবের হয়ে ৪৫ ম্যাচে ৪৪টি গোল করেছি। জানি না, রিয়ালের সুদীর্ঘ সাফল্যের ইতিহাসের কোন স্তরে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। তবে একটা কথা বলে দিতে চাই এবং তা হল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ না জিততে পারলে গোটা বছরের লড়াই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বলা যেতে পারে, নিজের জন্যই এই ট্রফি জিততে হবে আমাকে।’’ যোগ করেন,, ‘‘মাঠে নামার আগে সকলের মতো আমার মধ্যেও উৎকণ্ঠা কাজ করে। কিন্তু মাঠে নামলেই আমি সব ভুলে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি গোলের জন্য। রবিবার সেই লক্ষ্যেই খেলতে নামব।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।