Wriddhiman Saha

Wriddhiman Saha: চোটের জন্য সুযোগ পেয়েছিলেন, চোটেই কি ক্রিকেটজীবন শেষ হবে ঋদ্ধিমানের

একের পর এক চোট ভুগিয়েছে ঋদ্ধিকে। যোগ হয়েছে পড়ে পাওয়া সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে না পারা। ইতিমধ্যেই ঋষভ এক নম্বর জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।

Advertisement
অনির্বাণ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ১৪:৫৩
একের পর এক চোট ভুগিয়েছে ঋদ্ধিকে।

একের পর এক চোট ভুগিয়েছে ঋদ্ধিকে। —ফাইল চিত্র

২০১০ সাল। নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টের আগে ভিভিএস লক্ষ্মণ চোট থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। রোহিত শর্মা ম্যাচের দিন সকালে ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট পান। যেহেতু ওই সময়ের মধ্যে নতুন কোনও ব্যাটসম্যানকে দলে ঢোকানো সম্ভব ছিল না, ভারতের টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে যান ঋদ্ধিমান সাহা

লক্ষ্ণণ-রোহিতের চোটে চিচিং ফাঁকের মতো ঋদ্ধির সামনে টেস্ট দলের দরজা খুলে গিয়েছিল। একের পর সেই চোটই এখন জাতীয় দলে ঋদ্ধির দরজা চিচিং বন্ধ করে দিতে চলেছে।

ঋদ্ধির চোটের তালিকায় নতুন সংযোজন ঘাড়ের চোট। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কানপুর টেস্টের তৃতীয় দিন, শনিবার হঠাৎ দেখা যায় ঋদ্ধি নেই। তার বদলে কিপিং করতে নেমেছেন শ্রীকর ভরত। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘ঘাড়ে ব্যথা হয়েছে ঋদ্ধিমানের। বোর্ডের মেডিক্যাল দল তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাঁর বদলে কিপিং করবেন ভরত।’

Advertisement

টেস্টের মাঝপথে, বিশেষ করে ভারতের উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ করে দলের এক নম্বর উইকেটরক্ষককে না পাওয়া অজিঙ্ক রহাণেদের কাছে বিরাট ধাক্কা। হাফ ক্রিজে চলে যাওয়া রস টেলরের ক্যাচ-স্টাম্প ভরত এক সঙ্গে যে ভাবে ফস্কালেন, তাতে এই ধাক্কা ক্রমশ জোরালো হতে পারে। কিন্তু ধাক্কাটা আরও বেশি ঋদ্ধির নিজের কাছে।

ঋদ্ধির অভিষেকের পর থেকে এই ১১ বছরে ভারত এখনও পর্যন্ত ১২১টি টেস্ট খেলেছে। অথচ এই মুহূর্তে দেশের, হয়ত বিশ্বের এক নম্বর উইকেটরক্ষক হয়েও বাংলার ঋদ্ধি ওই ১২১টির মধ্যে মাত্র ৩৮টি টেস্ট খেলতে পেরেছেন।

একের পর এক চোট ভুগিয়েছে ঋদ্ধিকে। সঙ্গে যোগ হয়েছে পড়ে পাওয়া সুযোগগুলিকে একেবারেই কাজে লাগাতে না পারা।

—ফাইল চিত্র

ঋদ্ধির প্রথম বড় চোট ২০১৮ সালে। জানুয়ারিতে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে যান। সেই চোট নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক হয়। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সারাতে ঋদ্ধিকে পাঠানো হয় বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (এনসিএ)। সেখানে গিয়ে কাঁধের ব্যথার কথাও বলেন ঋদ্ধি। এমআরআই স্ক্যান হয়। ডাক্তার নারায়ণস্বামীর তত্ত্বাবধানে আলট্রাসাউন্ড ইঞ্জেকশন দিয়ে বলা হয়, ঋদ্ধি সুস্থ। এনসিএ-ও খেলার ছাড়পত্র দেয় ঋদ্ধিকে।

আইপিএল খেলেন তিনি। কিপিং করতে গিয়ে ওই কাঁধের উপরে ভর দিয়েই দু’ বার পড়েন। ব্যথা অনুভব করলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ফিজিয়ো তাঁকে দিল্লির এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। সেখানে দ্বিতীয় একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।

সমস্যা বাড়ে নিজের ঘরের মাঠ ইডেনে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে প্লে-অফ ম্যাচে শিবম মাভির বলে বুড়ো আঙুল ভেঙে যায়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে যান। মাস দেড়েকের রিহ্যাবের নির্দেশ দেওয়া হয়। আঙুল ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে এনসিএ-তে অনুশীলন শুরু করেন। নতুন করে কাঁধে ব্যথা অনুভব করেন। ফের স্ক্যান করে দেখা যায়, অবস্থা আগের থেকে খারাপ হয়েছে। মুম্বইয়ের ডাক্তার তৃতীয় একটি ইঞ্জেকশন দেন। কোনও উন্নতি হয়নি। ইতিমধ্যে ইংল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষিত হয়। ঋদ্ধির ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।

২০১৯ সালের অক্টোবরে রাঁচিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে অশ্বিনের বলে ফের ডান আঙুলে চোট পান। সেই বছরই ই়ডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিন-রাতের টেস্টে ডান হাত ভেঙে যায় ঋদ্ধির। অস্ত্রোপচার করতে হয়।

এরপর গত বছরের আইপিএল। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ম্যাচে কুঁচকিতে চোট পান।

ইতিমধ্যেই ঋষভ পন্থ ভারতীয় দলের এক নম্বর উইকেটরক্ষকের জায়গা নিয়ে নিয়েছেন। সেটা স্রেফ ব্যাটিংয়ের জোরে। টেস্টে ঋষভের ব্যাটিং গড় যেখানে ৪০ ছুঁইছুঁই, সেখানে ঋদ্ধির ৩০-ও পেরোয়নি। এ বার ঋষভ বিশ্রামে থাকায় ঋদ্ধিকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি টেস্টে প্রথম ইনিংসে এক রানের বেশি করতে পারেননি। তারপর চোট।

এমনকী তাঁর জায়গায় খেলা ভরতও যে তুলনায় ভাল ব্যাটসম্যান, এরকম ধারনা ভারতীয় ক্রিকেটে তৈরি হয়েছে। আইপিএল-এ বিরাট কোহলী নিজের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলে ভরতকে নিয়ে রেখেছেন। উদ্দেশ্য, তাঁকে নিজের হাতে তৈরি করে নেওয়া। বিশেষ করে ভরতের ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে কোহলীকে।

ভারতীয় ক্রিকেটের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সবকটি জায়গায় ভোটের টিকিট পাওয়ার মতো লড়ালড়ি। উইকেটকিপারের জায়গাটিও ব্যতিক্রম নয়। ঋদ্ধির চোট কাহিনি যে ভাবে ছোট গল্প থেকে উপন্যাসের চেহারা নিচ্ছে, তাতে চিচিং ফাঁক অদূর ভবিষ্যতে চিচিং বন্ধ না হয়ে যায়।

Advertisement
আরও পড়ুন