রোহিত বেশি সফল কোহলীর থেকে।
অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলীর ট্রফি নেই। রোহিত শর্মার রয়েছে। এক দিনের ক্রিকেটে মুম্বইকরকে নতুন অধিনায়ক করার পিছনে এটাও একটা কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, বোর্ড সভাপতির কথা মোটেও অমূলক নয়।
দেশের জার্সিতে দলকে এশিয়া কাপ, নিদাহাস ট্রফি জিতিয়েছেন রোহিত। তিনি নিজেও সেই ম্যাচে ভাল খেলেছিলেন। ২০১৭ থেকে কোহলীর অনুপস্থিতিতে মাঝে মাঝেই জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত। কোহলীর মতো ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিতে রোহিতের সাফল্যের পরিসংখ্যান রীতিমতো ঈর্ষণীয়।
দেখা যাচ্ছে, দেশের জার্সিতে এক দিনের ক্রিকেটে দলকে মোট ১০টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত। জিতেছেন ৮টি ম্যাচে। এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে মোহালিতে একটি ম্যাচে অপরাজিত ২০৮ রান করেছিলেন তিনি। দু’টি করে ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে ভারতীয় দলকে ট্রফি জেতান তিনি। সে বার পাকিস্তানকে দু’টি সাক্ষাতেই হারিয়েছিল ভারত। দুবাইয়ে ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে ট্রফি জেতে তারা। ১০ ম্যাচে রোহিতের রান ৫৪৩।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রেকর্ড আরও ভাল। ২২টি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত। জিতেছেন ১৮টি ম্যাচে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বাধিক ৭টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৬টি এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৫টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২২ ম্যাচে তাঁর রান ৮৭১। এই ফরম্যাটে ভারতকে নিদাহাস ট্রফি জিতিয়েছেন তিনি।
The All-India Senior Selection Committee also decided to name Mr Rohit Sharma as the Captain of the ODI & T20I teams going forward.#TeamIndia | @ImRo45 pic.twitter.com/hcg92sPtCa
— BCCI (@BCCI) December 8, 2021
অন্য দিকে, কোহলী ৯৫টি এক দিনের ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে ৬৫টি ম্যাচে জিতেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ৫০টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৩০টি ম্যাচে জিতেছেন। দু’টি ফরম্যাটেই দেশকে কোনও ট্রফি দিতে পারেননি তিনি। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারে। ২০১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে বিদায় নিতে হয় নিউজিল্যান্ডের কাছে। অর্থাৎ পূর্ণ সময়ের অধিনায়ক থেকেও তিনি দেশকে কোনও ট্রফি দিতে পারেননি। শুধু তাই নয়, আইপিএল-এও তাঁকে বার বার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। রোহিত সেখানে পাঁচ বারের আইপিএল জয়ী।
দু’জনের তুলনা করতে গিয়ে এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌরভ বলেন, “নির্বাচকদের আশা অধিনায়ক হিসাবে সাফল্য পাবে রোহিত। সেই কারণেই নির্বাচকরা ওর উপর ভরসা রেখেছে। আমি আশা করছি কী ভাবে দল সাফল্য পাবে সেই রাস্তা খুঁজে বার করবে রোহিত। আইপিএল-এ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে রোহিতের রেকর্ড দুর্দান্ত। পাঁচ বার ট্রফি জিতেছে। কয়েক বছর আগে এশিয়া কাপে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছিল। কোহলীকে ছাড়াই ভারত জিতেছিল। কোহলীকে ছাড়া ভারতের জয় মানে বুঝতে হবে দলের শক্তি কতটা। বড় প্রতিযোগিতায় রোহিত সফল। ও একটা ভাল দল পেয়েছে। তাই আশা করছি দল ভাল খেলবে।”
তার আগে সৌরভ অপর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “এই (কোহলীকে সরানোর) সিদ্ধান্ত বোর্ড এবং নির্বাচকদের তরফে যৌথ ভাবে নেওয়া হয়েছে। বোর্ড এর আগে কোহলীকে অনুরোধ করেছিল টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব থেকে না সরতে। কোহলী রাজি হয়নি। এরপরেই নির্বাচকরা সিদ্ধান্ত নেন, দু’টি সাদা বলের ফরম্যাটে দু’জন আলাদা অধিনায়ক রাখার অর্থ নেই। তাই ঠিক করা হয় কোহলীকে টেস্ট অধিনায়ক রাখা হবে এবং সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেবে রোহিত। আমি নিজে সভাপতি হিসেবে ব্যক্তিগত ভাবে কোহলীর সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানও ওর সঙ্গে কথা বলেছেন।”
কোহলীকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানোয় অনেকেই বোর্ডের পক্ষে এবং বিপক্ষে মুখ খুলেছেন। সৌরভের উদ্দেশে তোপ দেগে কোহলীর ছোটবেলার কোচ রাজকুমার শর্মা বলেন, “সৌরভের মন্তব্য আমি পড়েছি। ও নাকি কোহলীকে বলেছিল (বিশ্বকাপের আগে) টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব থেকে ইস্তফা না দিতে। আমি এ রকম কিছু শুনেছি বলে মনে করতে পারছি না। ওর এই কথা আমাকে অবাক করেছে। এমনিতে চারদিকে বিভিন্ন মন্তব্যই উড়ে বেড়াচ্ছে।”
ইউটিউবে একটি ভিডিয়ো বার্তায় পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার সলমন বাট বলেন, “বিসিসিআই চায়নি কোহলী টি২০-র অধিনায়কত্ব ছাড়ুক। কিন্তু তার মানে এই নয় সাদা বলের ক্রিকেটে দু’জন অধিনায়ক থাকতে পারবে না। সব থেকে ভাল হত যদি কোহলীকে এক দিনের অধিনায়ক রেখে রোহিত শর্মাকে শুধু টি২০-র দায়িত্ব দেওয়া হত।”
প্রাক্তন কোচ মদন লালও ছিলেন কোহলীর পক্ষে। তিনি বলেছিলেন, “জানি না ওরা (নির্বাচকরা) কী ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিল। যখন কোহলী ওদের কাঙ্ক্ষিত ফল এনে দিচ্ছে তখন ওকে সরানোর কী দরকার ছিল? টি-টোয়েন্টি থেকে ওর সরে যাওয়াটা বুঝতে পেরেছি। কারণ এখন এত ক্রিকেট খেলা হয় যে একসঙ্গে তিনটি ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেওয়া সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু সফল হওয়ার পরেও যখন আপনাকে সরে যেতে হয় তখন আঘাত লাগবেই। ভেবেছিলাম ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত কোহলীকে রেখে দেওয়া হবে। কিন্তু একটা দলকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না তো?”
বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন নির্বাচক দিলীপ বেঙ্গসরকর। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “টি২০ ও এক দিনের ক্রিকেটে রোহিতকে অধিনায়ক করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিসিসিআই। বেশ কয়েক বছর ধরে সাদা বলের ক্রিকেটে ভাল খেলছে রোহিত। তাই এ বার ওর অধিনায়ক হওয়ার সময় এসেছে। আমার মনে হয় এটা খুব ভাল সিদ্ধান্ত।”
পাশাপাশি প্রাক্তন নির্বাচক সাবা করিম বলেছেন, “এটা বলা যেতেই পারে কোহলীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নেতৃত্ব ছাড়ার সময় ও বলে দিয়েছিল টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটের নেতৃত্বের দিকে নজর দিতে চায়। এটার অর্থ একদিনের ক্রিকেটে ও অধিনায়ক থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে না পারার জন্যই অধিনায়কত্ব হারাতে হল কোহলীকে।”