India vs South Africa 2022

ছ’বলে শাপমুক্তি আরশদীপের, বিশ্বকাপের আগে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে সূর্যকুমারকে

গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামের পিচে একটু সবুজ আভা ছিল। সেখানে নতুন বল ভারতের দুই পেসারের হাতেই কথা বলতে শুরু করল। যশপ্রীত বুমরা হঠাৎ চোট পেয়ে সরে দাঁড়ানোয় দলে চলে আসে দীপক চাহার।

Advertisement
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:২৬
শাসন: রাহুল ও সূর্যের অপরাজিত ৯৩ রানের জুটি আনল অনায়াস জয়। তিরুঅনন্তপুরমে। বিসিসিআই

শাসন: রাহুল ও সূর্যের অপরাজিত ৯৩ রানের জুটি আনল অনায়াস জয়। তিরুঅনন্তপুরমে। বিসিসিআই

ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন প্রজন্ম কিন্তু স্বপ্ন দেখানো শুরু করেছে। এক দিকে যদি হয় সূর্যকুমার যাদব, অন্য দিকে তা হলে রয়েছে আরশদীপ সিংহের মতো তরুণ।

মাস খানেক আগে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্যাচ ফেলে এক শ্রেণির মানুষের কাছে খলনায়ক হয়ে গিয়েছিল আরশদীপ। বুধবার তিরুঅনন্তপুরমে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অসাধারণ সুইং বোলিংয়ে সবার মন জিতে নিল ভারতের এই বাঁ-হাতি পেসার। ছ’টা বলে শাপমুক্তি ঘটল আরশদীপের।

Advertisement

গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামের পিচে একটু সবুজ আভা ছিল। সেখানে নতুন বল ভারতের দুই পেসারের হাতেই কথা বলতে শুরু করল। যশপ্রীত বুমরা হঠাৎ চোট পেয়ে সরে দাঁড়ানোয় দলে চলে আসে দীপক চাহার। প্রথম ওভারের পাঁচটা বল ও বাইরে নিয়ে গেল। ছ’নম্বরটা ছিল বিষাক্ত একটা ইনসুইং। যা টেম্বা বাভুমার মিডল স্টাম্প ছিটকে দেয়।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে বিশ্রামে ছিল আরশদীপ। এই সিরিজ়ে ফিরে এসেছে। আর এসেই বুঝিয়ে দিল, কেন ওর ওপর আস্থা রাখছে ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি।

দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারটা ছিল আরশদীপের কাছে শাপমুক্তির ওভার। দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ফিরে গেল কুইন্টন ডি’কক। বলটা অনেকটা বাইরে ছিল। কুইন্টন কাট করার চেষ্টায় ভিতরে নিয়ে এসে বোল্ড হল। পঞ্চম বলটা বাঁ-হাতি রাইলি রুসোর কাছে আউটসুইং ছিল। রুসো ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিল।

ব্যাট করতে নামে আর এক বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার। এ বার বলটা ভিতরে এসে মিলারের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে ঢুকে স্টাম্প ভেঙে দেয়। এই ডেলিভারিটাকে ম্যাচের সেরা বলতেই হবে। ডাগ আউটে বসে মিলার দেখছিল, আরশদীপের বলগুলো বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে। মিলারও বোধ হয়সে রকমই একটা ডেলিভারি আশা করেছিল। কিন্তু ঠকে গেল। এক ওভার, সাত রান, তিন উইকেট। হ্যাটট্রিকের সামনে ছিল আরশদীপ। পরের ওভারের প্রথম বলে হ্যাটট্রিক বাঁচাল এডেন মার্করাম।

পরের ওভারে চাহার নিজের দ্বিতীয় শিকার তুলে নিলে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৯ রানে পাঁচ উইকেট! মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার জেট ল্যাগটা কাটেনি এখনও! শেষ পর্যন্ত কেশব মহারাজের (৩৫ বলে ৪১) লড়াকু ইনিংসের সৌজন্যে ২০ ওভারে তুলল ১০৬-৮। ২৪ রানে দু’উইকেট নিল চাহার। আরশদীপ নিল ৩২ রানে তিন।

ইনিংস বিরতিতে দেখলাম, রোহিত শর্মা ভাবছে, কোন রোলার নেবে— ভারী না হাল্কা? দেখলাম, রাহুল দ্রাবিড় এসে কী একটা বলে গেল। তার পরে ভারী রোলারই নিল ভারত। এতে পিচ একটু সহজ হল। এ জন্যই তো এক জন কোচের দরকার। যদিও সেই পিচেও আগুন ঝরাচ্ছিল কাগিসো রাবাডা-অনরিখ নখিয়ারা। দ্রুত ফিরে যায় রোহিত এবং বিরাট কোহলি। সত্যি বলতে কী, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ধরনের পিচ দেখা যায় না। ভারত এ দিন প্রথম ছ’ওভারে করে ১৭ রান! যা ভারতের পাওয়ার প্লে-তে সর্বনিম্ন রান।

কিন্তু রোহিতদের যে এক জন সূর্যকুমার ছিল। এত কঠিন পিচ বলেই সূর্যের এই ইনিংসের জৌলুস অনেক বেশি। নখিয়ার প্রথম বলটাই ওর পেটে আঘাত করল।ওটা হয়তো ওকে তাতিয়ে দিয়েছিল। নখিয়াকে পর পর দু’টো ছয় মেরে বুঝিয়ে দিল, ঘুম ভেঙেছে। তার পরে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের নিয়ে ছেলেখেলা করল। এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানের নাম সূর্য (৩৩ বলে অপরাজিত ৫০)।

এ দিন কে এল রাহুলও (৫৬ বলে অপরাজিত ৫১) রান পাওয়ায় ওর ওপর থেকে চাপটা হাল্কা হয়ে যাবে। রাহুল অপেক্ষা করেছিল রাবাডার ওভার শেষ হওয়ার। তার পরে নিজের খেলাটা খেলতে লাগল। ১৬.৪ ওভারে দু’উইকেট হারিয়ে জয়ের রান তুলে নিল ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজ়ে এগিয়ে গেল ১-০।

বিশ্বকাপে আরশদীপ আছে ১৫ জনে। এই ছেলেটাকে ঠিকঠাক তৈরি করতে পারলে ভবিষ্যতের সম্পদ হবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এই বাঁ-হাতি পেসার ভারতের বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে।

কেন বলছি? আরশদীপ বলের সিম পজিশনটা ভাল রাখে। দু’দিকে বল মুভ করায়। ওভার দ্য উইকেটে তো ভালই, রাউন্ড দ্য উইকেটেও খারাপ নয়। নতুন বলে সুইং করাতে পারে। শেষের দিকে দারুণ ইয়র্কার দেয়। ছেলেটার মানসিকতাও মুগ্ধ করেছে। পাকিস্তান ম্যাচে ক্যাচ ছাড়ার পরে ওকে যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল গণমাধ্যমে, তাতে যে কোনও তরুণ ক্রিকেটারের মনোবল ভেঙে যেতে পারত। কিন্তু আরশদীপ সে জায়গা থেকে ফিরে এসেছে। এবং, ক্রমে ভারতীয় বোলিং আক্রমণের বড় শক্তি হয়ে উঠছে। বাঁ-হাতি হওয়াটা ওর বাড়তি সুবিধে।

আরও পড়ুন
Advertisement