শতরানের পর অভিষেক শর্মার অভিনব উচ্ছ্বাস। ছবি: বিসিসিআই।
৪ ওভারে ৭৫ রান! সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জন্য ম্যাচটা একাই কঠিন করে দিলেন মহম্মদ শামি। আইপিএলে খারাপ বল করেননি প্রথম পাঁচটি ম্যাচে। শনিবার তাঁর কোনও কিছুই ঠিকঠাক হল না। পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে প্রথম ওভার থেকেই রান দিলেন। তাঁর হাতে নতুন বল তুলে যে ভরসা রেখেছিলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, তার মর্যাদা দিতে পারলেন না বাংলার জোরে বোলার। তবু পঞ্জাবের ৬ উইকেটে ২৪৫ রানের জবাবে হায়দরাবাদ ৯ বল বাকি থাকতে করল ২ উইকেটে ২৪৭। অভিষেক শর্মার ১৪১ রানের আগ্রাসী ইনিংসই ম্যাচের রং বদলে দিল।
শামির খামতি রান তাড়া করতে নেমে ঢেকে দিল অভিষেকের ব্যাট। পঞ্জাবের সব বোলারকে তুলে তুলে মাঠের বাইরে ফেললেন। নিজের দিনে কী করতে পারেন আরও এক বার দেখিয়ে দিলেন পঞ্জাবের তরুণ। নিজের রাজ্যের দলের বিরুদ্ধে নিজের জাত চিনিয়ে দিলেন। গত কয়েকটি ম্যাচে রান পাননি। এ দিন তাঁকে দেখে এক বারও মনে হয়নি। তাঁর সামনে সুবিধা করতে পারেননি পঞ্জাবের কোনও বোলারই। ৪০ বলে শতরান পূর্ণ করার পর পকেট থেকে একটি কাগজ বের করেন। তাতে লেখা ছিল, ‘‘দিস ওয়ান ইজ ফর অরেঞ্জ আর্মি।’’ এ বারের আইপিএলে নতুন নতুন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। যেমন লখনউ সুপার জায়ান্টসের দিগ্বেশ রাঠী উইকেট নিয়ে হাতে বা মাঠে কিছু লিখে দেখাচ্ছেন। অভিষেক আগে থেকেই লিখে এনেছিলেন। এক জন ক্রিকেটারের আত্মবিশ্বাস কোন পর্যায় থাকলে আগে থেকে লিখে আনা যায়! টানা হারে হতাশ হয়ে পড়া হায়দরাবাদের সমর্থকদের মুখে হাসি ফেরাতেই যেন মাঠে নেমেছিলেন অভিষেক। তাঁর ব্যাটে ভেঙে গেল আইপিএলে কোনও ভারতীয় ব্যাটারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড। লোকেশ রাহুলের অপরাজিত ১৩২ রানের রেকর্ড ভেঙে নতুন নজির গড়লেন অভিষেক। শেষ পর্যন্ত অর্শদীপ সিংহের বলে আউট হলেন ৫৫ বলে ১৪১ রানের ইনিংস খেলে। মারলেন ১৪টি চার এবং ১০টি ছক্কা।
এক সময় যুবরাজ সিংহের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতেন অভিষেক। ছোটবেলার কোচ তাঁর বাবা রাজকুমার শর্মাই। দ্বিতীয় কোচ মনোজ কালরা। বর্তমানে যুবরাজের অ্যাকাডেমির অন্যতম কোচ। যুবরাজ তাঁর ব্যাটিং স্টান্স বদল করে দেন। যুবরাজের নির্দেশ ছিল, ১০০ মিটারের বাউন্ডারি পার করতে পারলে ছয় রান ধরা হবে। না হলে আউট। প্রথম দিকে অভিষেকের হাতে বেশি জোর ছিল না। হেভিওয়েট ট্রেনিং করতে হয়। শরীরের ওজনও বাড়াতে হয়। যুবরাজের ছোঁয়ায় অভিষেক ক্রমে তাঁর মতোই আগ্রাসী ব্যাটার হয়ে উঠেছেন।
অভিষেকের সঙ্গে শুরুতে ভাল সঙ্গ দেন ট্রেভিস হেডও। তিনি করেন ৩৭ বলে ৭৭ রান। মারেন ন’টি চার এবং ৩টি ছয়। তাঁদের প্রথম উইকেটের জুটিতে ওঠে ১২.২ ওভারে ১৭২ রান। তাতেই হায়দরাবাদের জয়ের ভিত তৈরি হয়ে যায়। শ্রেয়স আয়ারদের সমস্যা বৃদ্ধি করে লকি
ফার্গুসনের চোট। মাত্র দু’টি বল করেই চোটের জন্য মাঠ ছাড়েন নিউ জ়িল্যান্ডের জোরে
বোলার। পরে হাইনরিখ ক্লাসেন (১৪ বলে ২১) এবং ঈশান কিশনও (৬ বলে ৯) রান তোলার গতি বজায় রাখেন।
এর আগে টস জিতে হায়দরাবাদের ২২ গজে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পঞ্জাব অধিনায়ক। প্রথম থেকে আগ্রাসী মেজাজে শুরু করেন দুই ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য এবং প্রভশিমরন সিংহ। প্রিয়াংশ করেন ১৩ বলে ৩৬। ২টি চার এবং ৪টি ছয় মারেন তরুণ ব্যাটার। প্রভশিমরনের ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ বলে ৪২ রান। ৭টি চারের পাশাপাশি ১টি ছয় মেরেছেন তিনি। তিন নম্বরে নেমে প্রায় শেষ পর্যন্ত দলের ইনিংস টেনে নিয়ে গেলেন অধিনায়ক শ্রেয়স। ৬টি করে চার এবং ছক্কার সাহায্যে ৩৬ বলে ৮২ রানের ইনিংসে শ্রেয়স আবার বুঝিয়ে দিলেন কী হারিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। মাঠের সব দিকে অনায়াসে শট মেরেছেন শ্রেয়স। চালিয়ে খেললেন চার নম্বরে নামা নেহাল ওয়াধেরাও। তিনি করেন ২২ বলে ২৭।
হায়দরাবাদের ২২ গজ ব্যাটারদের সহায়ক ছিল নিশ্চিত। তবু কামিন্সের দলের অন্য বোলারেরা খানিকটা নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলেন। শামিকে দেখে এ দিন চেনা গেল না। শামি যে ভাবে রান বিলোলেন, তা পাড়ার ক্রিকেটেও দেখা যায় না। আইপিএলে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান খরচ করার নজির গড়লেন তিনি। পঞ্জাবের ইনিংসের শেষ চার বলে তাঁকে চারটি ছক্কা মারলেন মার্কাস স্টোইনিস। যা হায়দরাবাদের জয়ের লক্ষ্যকে পৌঁছে দেয় ২৪৬-এ।