জুতো বিক্রি করছেন প্রাক্তন আম্পায়ার ফাইল ছবি
এক সময় চুটিয়ে আম্পায়ারিং করেছেন। তিন ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ১৭০টি ম্যাচে আম্পায়ার হিসাবে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। এক মডেলকে যৌন হেনস্থা এবং জুয়াড়িদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে কালিমালিপ্ত হয় তাঁর জীবন। পাকিস্তানের সেই আম্পায়ার আসাদ রউফ এখন লাহৌরের বাজারে পুরনো জুতো বিক্রি করছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে রউফের এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর এখন কোনও সম্পর্ক নেই। খবরও রাখেন না। এখন তাঁর মাথায় শুধু ব্যবসা। বলেছেন, “জীবনে অনেক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছি। আর নতুন করে কিছু দেখার নেই। ২০১৩-র পর থেকে খেলার সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই। পুরোপুরি ক্রিকেট থেকে দূরে রয়েছি।”
২০১২ সালে রউফের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন এক মডেল। দাবি করেছিলেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছিলেন রউফ। পরে পিছিয়ে এসেছিলেন। সেই সময় রউফ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এখনও তিনি ওই ঘটনা স্বীকার করতে চান না। বলেছেন, “মেয়েটি অভিযোগ করার পরের মরসুমেও আইপিএলে আমি আম্পায়ারিং করেছিলাম।” তবে এটা মানছেন, ওই ঘটনা কিছুটা হলেও তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছিল।
রউফের জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছিল ২০১৬ সালে। তাঁকে পাঁচ বছর নির্বাসিত করেছিল বিসিসিআই। ২০১৩ সালে আইপিএলে ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছিল রউফের। অভিযোগ ছিল, জুয়াড়িদের থেকে দামি দামি উপহার এবং টাকা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩-র পর থেকেই ক্রিকেটের মূলস্রোত থেকে দূরে সরতে থাকেন রউফ। তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আর ম্যাচ পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। সেই প্রসঙ্গে রউফ বলেছেন, “জীবনের সেরা সময় আইপিএলে কাটিয়েছি। ওই অভিযোগ নিয়ে এখন আর কিছু বলার নেই। বিসিসিআই নিজেরাই অভিযোগ করেছিল, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
রউফ জানিয়েছেন, আইসিসি-র অনুরোধের কারণেই আম্পায়ারিংয়ে আসা তাঁর। দীর্ঘ দিন আগে তৎকালীন পাক বোর্ডের সিইও মজিদ খানকে আইসিসি বলেছিল সে দেশ থেকে উন্নতমানের আম্পায়ার তুলে আনার জন্য। প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসাবে আম্পায়ারিং শেখা শুরু করেন রউফ এবং এক সময় তিনি পুরোদস্তুর আম্পায়ার হয়ে যান। আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করা শুরু করেন। রউফ জানান, যতই ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে তাঁর নাম জড়াক, ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক বরাবরই ভাল ছিল। বলেছেন, “আমি খুব খোলামেলা ভাবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিশতাম। ক্রিকেটার তো বটেই, ওদের স্ত্রীরাও বলত যে আমার সঙ্গ ওরা উপভোগ করে।”
লাহৌরের লান্ডা বাজারে যে দোকান রউফ চালান, সেখানে পুরনো জামাকাপড়, জুতো কম দামে পাওয়া যায়। হঠাৎ করে এ রকম একটা দোকান তিনি খুলতে গেলেন কেন? রউফ বলেছেন, “আমার কর্মচারীদের জন্য এই কাজ করি। ওদের সংসার যাতে চলে, সেটার চেষ্টা করি। কোনও লোভ নেই। অনেক টাকা দেখেছি জীবনে। আমার এক সন্তান বিশেষ ভাবে সক্ষম। আর এক জন সদ্য আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করে ফিরেছে। ওদের নিয়েই সময় কেটে যায়। আমি যেটাই করি, সেটার শিখরে পৌঁছনোর চেষ্টা করি। ক্রিকেট খেলার সময়েও তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আম্পায়ারিংয়ের সময়েও তাই। এখন দোকানদার হিসেবেও সবার উপরে পৌঁছতে চাই।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।