IPL 2025 Match Report Today

শক্ত পিচে কী ভাবে ব্যাট করতে হয় কোহলিকে দেখে শিখুক ১৪ বছরের বৈভব, বিরাট-ব্যাটে জয় বেঙ্গালুরুর

বেঙ্গালুরুর উইকেট কিছুটা হলেও সমস্যায় ফেলছে ব্যাটারদের। সেখানে কী ভাবে ব্যাট করা উচিত তা ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশীকে শিখিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি। তাঁর ব্যাটে জিতল বেঙ্গালুরু।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:২৩
cricket

(বাঁ দিকে) বিরাট কোহলি ও বৈভব সূর্যবংশী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

জফ্রা আর্চারের বলটা তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে যেতেই চোখ বড় হল বিরাট কোহলির। তিনি বুঝতে পারলেন, এই পিচে চাইলেই শট মারা কঠিন। খেলার ধরন বদলে ফেললেন কোহলি। তিনি মারার বল অবশ্য পেলেন। সেই সব বলে মারলেনও। কিন্তু বাকি বলে কী করলেন? সেটা ক্রিকেটের ছাত্রদের কাছে শিক্ষণীয়। কোহলি দেখালেন, শক্ত পিচে ঠিক কী ভাবে ব্যাট করা উচিত। সেই শিক্ষাটা নিতে হবে বৈভব সূর্যবংশীকে। ১৪ বছরের বৈভব আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচে নজর কেড়েছিল। সেই কারণেই হয়তো দ্বিতীয় ম্যাচে যে কয়েকটা বল সে খেলল, প্রতিটিতে ছক্কা মারার চেষ্টা করল। দুটো লাগল। বাকিগুলো নয়। সেই ছক্কা মারতে গিয়েই আউট হল সে। কোহলির ব্যাটে জিতল বেঙ্গালুরু। চলতি মরসুমে ঘরের মাঠে প্রথম জয় পেল তারা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ঘরের মাঠে প্রথমে ব্যাট করে ২০৫ রান করে বেঙ্গালুরু। পিচ শক্ত হলে কী ভাবে এত রান হয়? প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। তার প্রথম কারণ কোহলি। বেঙ্গালুরুর ভিত গড়ে দিয়ে যান তিনি। বাকিটা করে শিশির। পরিস্থিতি এমন হয় যে আইপিএলে প্রথম বার কোনও ম্যাচে প্রথম ইনিংসেই বল বদলাতে হয়। সেই শিশিরের কারণেই দ্বিতীয় ইনিংসে রাজস্থানের ব্যাটিং দেখে মনে হল, পাটা উইকেটে খেলছে তারা। শিশির বেঙ্গালুরুকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এ বার জয়ের পরিস্থিতি থেকে এর আগেও দু’টি ম্যাচ হেরেছে রাজস্থান। যে দল দু’টি ম্যাচে ৬ বলে ৯ রান করতে পারেনি সেই দলের কাছে বেশি আশা করা ভুল। আরও একটি ম্যাচে জেতার মতো পরিস্থিতি থেকে হারতে হল রাজস্থানকে।

আর্চার শুরু থেকেই ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বল করছিলেন। কোহলিকে একটি বল ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় করলেন তিনি। পিচে বল পড়ে লাফাচ্ছিল। বেশ কয়েকটি বল ঘাড়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। ফিল সল্টের মতো স্ট্রোক প্লেয়ারও শট মারতে পারছিলেন না। তাঁর ক্যাচ পড়ল। কয়েকটা বল ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারিতে গেল। তার পরেও ২৩ বলে ২৬ রান করলেন তিনি।

কোহলি অন্য দিকে নিজের পুরনো খেলায় চলে গেলেন। অপেক্ষা করলেন খারাপ বলের। যে বল মাঝ পিচে বা ব্যাটের কাছে পড়ছিল, সেগুলি বাউন্ডারিতে গেল। যে বল লেংথে পড়ছিল সেগুলি কব্জির মোচড়ে মাঠের ফাঁকা জায়গায় পাঠাচ্ছিলেন তিনি। দৌড়ে রান নিচ্ছিলেন। ৩৬ বছরের কোহলির সঙ্গে দৌড়ে পারছিলেন না ২৪ বছরের দেবদত্ত পড়িক্কলও। কোনও বলে দু’রান নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা না হলে কোহলি বিরক্ত হচ্ছিলেন। আবার কোনও বলে চার মারার সুযোগ নষ্ট হলে নিজের উপর রাগ করছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল, তিনি কতটা খেলার মধ্যে ডুবে রয়েছেন।

জোরে শট মারার বদলে কোহলি জোর দিচ্ছিলেন টাইমিংয়ে। ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গের একটি বল তিনি যে ভাবে সোজা সাইট স্ক্রিনের উপর মারলেন তা মনে করিয়ে দিল ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হ্যারিস রউফকে মারা সোজা ছক্কার কথা। সেটি ছিল পেসারের বিরুদ্ধে। এটি স্পিনারের বলে। কিন্তু দু’টি শটই স্রেফ টাইমিংয়ে ভর করে মারলেন কোহলি। একটি শটই বুঝিয়ে দিল বাকিদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য কতটা। আর্চারের যে বলটিতে কোহলি আউট হলেন সেটির গতি বুঝতে পারেননি তিনি। ব্যাটের উপরের দিকে লেগেছিল বলটি। ফলে বল হাওয়ায় ওঠে। ৪২ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলে তিনি যখন ফিরছেন তখন তাঁর মুখে হতাশা। বুঝতে পারছিলেন, একটি শতরান হাতছাড়া হয়েছে তাঁর।

কোহলি ব্যাট করার সময় ডাগ আউটেই বসেছিল বৈভব। সে নিশ্চয় দেখেছিল, এই পিচে কী ভাবে ব্যাট করতে হবে। তা ছাড়া রাজস্থানের ইনিংসের আগে শিশির পড়ে পিচ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। বৈভবের উচিত ছিল একটু সময় নেওয়া। প্রতিপক্ষ দলে জশ হেজ়লউড, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো পোড়খাওয়া বোলার ছিলেন। তাঁদের কয়েকটা ওভার সামলে দিলে রান করার অবাধ সুযোগ ছিল। কিন্তু সে যে এখনও পরিণত হয়নি তা বুঝিয়ে দিল এই ইনিংস।

১২ বলে ১৬ রান করল বৈভব। মারল দু’টি ছক্কা। যে ১২টা বল সে খেলেছে তার প্রতিটাই ছক্কা মারার চেষ্টা করেছে। উইকেট ছেড়ে আড়াআড়ি ব্যাট চালিয়েছে। অপর প্রান্তে যশস্বী জয়সওয়ালও সেই ভুলটাই করছিলেন। হেজ়লউডের প্রথম তিনটি বল তিনি ওড়ানোর চেষ্টা করেন। ব্যাটে-বলে হয়নি। ধারাভাষ্যকার সুনীল গাওস্কর বার বার বলছিলেন, “বোলারের নাম হেজ়লউড। বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন। ওর বলে এ ভাবে উইকেট ছেড়ে মারতে যাওয়া বোকামি। যশস্বীর উচিত এক জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা।” কী ভাবে যেন গাওস্করের কথা শুনতে পেলেন যশস্বী। পরের তিনটি বল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে খেললেন। তিনটি বলই বাউন্ডারিতে গেল।

যশস্বীকে দেখেও শিখতে পারত বৈভব। শেখেনি। পঞ্চম ওভারের প্রথম বল বাউন্সার করেন ভুবনেশ্বর। মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা মারে বৈভব। পরের বলটি পড়ল লেংথে। সামান্য আউট সুইং হল। বৈভব উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে অফসাইডে বড় শট খেলার চেষ্টা করল। বল ব্যাটে না লেগে উইকেট ভেঙে দিল। সে যদি পাওয়ার প্লে শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত তা হলে নিজে আরও একটু থিতু হতে পারত। কিন্তু সেই সময়টাই নিজেকে দিল না সে।

বৈভবের সুযোগ ছিল দু’ম্যাচেই প্রথম একাদশে নিজের জায়গা পাকা করার। তাকে মাথায় রাখতে হবে সে যার বদলে খেলছে সেই সঞ্জু স্যামসন এই দলের অধিনায়ক। তিনি হয়তো পরের ম্যাচেই ফিরে আসবেন। আবার বাইরে বসতে হবে বৈভবকে। সে ক্ষেত্রে কবে আবার সুযোগ আসবে কেউ জানে না। যে সুযোগ সে পেয়েছিল তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ বৈভব। তবে কোহলির কাছে যে শিক্ষাটা সে পেল তা কাজে লাগাতে পারলে আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা হয়ে উঠতে পারবে সে।

রান তাড়া করতে নেমে এক সময় জয়ের পথে এগোচ্ছিল রাজস্থান। শেষ আট ওভারে জেতার জন্য দরকার ছিল ৮০ রান। অর্থাৎ, প্রতি ওভারে ১০ রান করে করতে হত তাদের। আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে তা কঠিন নয়। তার উপর শিশির পড়লে সেটা অনেক সহজ হয়ে যায়। চিন্নাস্বামীতে এত শিশির পড়ছিল যে ১৩ ওভারের পর বল বদলাতে হল। তার পরেও ম্যাচ জিততে পারল না রাজস্থান। কারণ তাদের মিডল অর্ডার। কেউ ফর্মে নেই। মাঝেমাঝে দু’-একটি চার-ছক্কা হলেও ধারাবাহিক ভাবে বড় রান হচ্ছিল না। ফলে চাপ বাড়ছিল রাজস্থানের উপর। ভুবনেশ্বর, হেজ়লউড, ক্রুণাল পাণ্ড্যেরা নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালেন। সেখানেই চাপে পড়ে গেল রাজস্থান। ধ্রুব জুরেল-শিমরন হেটমেয়ার জুটি আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ। আরও একটি ম্যাচ হারল রাজস্থান।

Advertisement
আরও পড়ুন