ঋষভ পন্থ। ছবি: বিসিসিআই।
গত কয়েক মাস ধরে লেগ সাইডে অদ্ভুত একটি শট খেলছেন ঋষভ পন্থ। অফ সাইডের বল লেগে তুলে মারতে গিয়ে পিচে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। টেস্ট ক্রিকেটে মেরেছেন। আইপিএলেও মারছেন। দুর্ঘটনার পর মাঠে ফেরা থেকে চার বা ছয় মারার চেষ্টায় পন্থের গড়াগড়ি খাওয়ার ছবি প্রতীকী হতে পারে। পন্থ নন, গড়াগড়ি খাচ্ছে আসলে তাঁর ক্রিকেট ভবিষ্যৎ।
৬ ম্যাচে ৪০ রান। গড় ৮। স্ট্রাইক রেট ৮০। ৫০টি বল খেলে চার মেরেছেন চারটি। ছয় ১টি। এ বারের আইপিএলে এই পরিসংখ্যান কোনও বোলারের নয়। ২৭ কোটি টাকার পন্থ উইকেটে সামনে ব্যর্থ। পিছনেও তথৈবচ। চারটি ক্যাচ নিয়েছেন। একটি স্টাম্পড করতে পারেননি। উইকেটরক্ষক হিসাবে একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছেন।
বছর আড়াই আগেও বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসাবে চিহ্নিত করা হত ২৭ বছরের ক্রিকেটারকে। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পথদুর্ঘটনার অভিঘাত শারীরিক ভাবে কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন পন্থ। ক্রিকেটার পন্থ এখনও ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ম্যাচে সাফল্য পেয়েছেন ঠিকই। ধারাবাহিকতা নেই। সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের আস্থা হারিয়েছেন। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোচ গৌতম গম্ভীর পন্থকে বসিয়ে রেখেছিলেন সাজঘরে। পেশাদার কোচের মনে জায়গা পায়নি দিল্লির আবেগ। তারও আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে পন্থের বিরুদ্ধে বার বার দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আউট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গম্ভীর ছাড়াও তাঁর মানসিকতায় বিরক্ত হয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অথচ পন্থ রয়েছেন নিজের খেয়ালে।
আইপিএলে পন্থের লখনউ জিতছে। জেতাচ্ছেন নিকোলাস পুরান, এডেন মার্করাম, দিগ্বেশ রাঠী, ডেভিড মিলার, মিচেল মার্শ, রবি বিশ্নোই, শার্দূল ঠাকুরের মতো ক্রিকেটারেরা। যেমন শনিবার শুভমন গিলের গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে জিতল পন্থের লখনউ। এ দিনের অনায়াস জয়েও পন্থের ভূমিকা অতি সীমিত। ক্রিকেটার পন্থের অবদান বলতে অধিনায়কত্ব। তাতেও ভুল করছেন। সব মিলিয়ে ক্রিকেটার ঋষভকে চেনা পন্থের মতো দেখাচ্ছে না। ফর্মে না থাকার প্রভাব পড়ছে আত্মবিশ্বাসের উপর। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারের পিছতে পিছতে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতেই নামেননি। আবার গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ওপেন করতে নেমে পড়লেন। কখনও ব্যাটার পন্থ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছেন। আবার কখনও পাওয়ার প্লের সুযোগ কাজে লাগিয়ে রানে ফেরার চেষ্টা করছেন।
ব্যক্তিজীবনে ভারসাম্য রাখতে না পারার মাসুল দিয়েছেন পন্থ। জীবনের সেই শিক্ষা এ বার ক্রিকেটেও কাজে লাগাতে হবে পন্থকে। ভারসাম্য আনতে হবে। বুঝতে হবে, আগ্রাসী ক্রিকেট সব সময় প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে না। কখনও কখনও নিজের দলকেও বিপদে ফেলে দেয়। কখনও নিজেকেও। যা প্রত্যাশিত নয়। ক্রিকেটার পন্থের কাছে এ বারের আইপিএল শুরু থেকেই ছিল পরীক্ষা। ক্রিকেটীয় দক্ষতার সঙ্গে ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়ার পরীক্ষা। লখনউ অধিনায়ক এখনও পরীক্ষায় পাস করার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি। সতীর্থেরা সাফল্য এনে দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু অধিনায়ক দিনের পর দিন ব্যর্থ হলে দলের মধ্যে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। ক্ষুণ্ণ হতে পারে অধিনায়কের কর্তৃত্ব।
শনিবার ঘরের মাঠে পন্থের দল ৭ উইকেটে হারাল শুভমনদের। প্রথমে ব্যাট করে গুজরাত করে ৬ উইকেটে ১৮০। জবাবে ৩ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে ১৮৬ রান তুলল লখনউ। দল জবাব দিলেও অধিনায়কের ব্যাট উত্তরহীন থাকল আরও একটা ম্যাচ। ১৮ বলে ২১ রান করলেন এ দিন। মার্করাম (৩১ বলে ৫৮) এবং পুরান (৩৪ বলে ৬১) জয়ের মঞ্চ প্রস্তুত করে দেন। কাজে এল না গুজরাতের সাই সুদর্শন (৩৭ বলে ৫৬) এবং শুভমনের (৩৮ বলে ৬০) লড়াই। সতীর্থের কাঁধে চড়ে ভাসছেন পন্থ। এই কাঁধে চড়ার মধ্যে গর্ব নেই। প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস নেই। আইপিএল যত এগোচ্ছে, পন্থের উপর চাপ তত বাড়ছে। ফর্মে ফেরার চাপ। নিজেকে প্রমাণ করার চাপ। ভারতীয় দলে জায়গা ফিরে পাওয়ার চাপ। অবশ্যই ২৭ কোটি টাকার চাপ।