IPL 2025

বিতাড়িত শ্রেয়স করলেন শূন্য, তবু কেকেআর ডুবল নিজের অধিনায়কের ভুলে, পঞ্জাবই ‘কাল-বৈশাখী’ হল কলকাতার

পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ম্যাচ কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে ছিল মর্যাদার লড়াই। অ্যাওয়ে ম্যাচে কেকেআর সম্মান রক্ষা করতে পারল না। শ্রেয়স আয়ার রানই পেলেন না। তবু তিনিই জিতলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩৯
picture of Ajinkya Rahane

অজিঙ্ক রাহানে। ছবি: বিসিসিআই।

হতে পারত পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণের উৎসব। তার বদলে পঞ্জাবের বোলিং কালবৈশাখীর মতো তছনছ করে দিয়ে গেল কলকাতাকে। সেই বৈশাখী ঝড়ই কাল হল কলকাতার।

Advertisement

দৃশ্য ১: পঞ্জাব কিংসের দুই ওপেনার মাঠে নামার আগেই ব্যাট করতে নামার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান শ্রেয়স আয়ার। ধারে ছটফট করছিলেন। যেন কত ক্ষণে মাঠে নেমে অপমানের জবাব দেবেন।

দৃশ্য ২: কেকেআরের ইনিংস শুরুর আগে শ্রেয়সকে হতাশ দেখাচ্ছিল। নিজে রান পাননি। তাঁর পঞ্জাব কিংসও লড়াই করার মতো রান করতে পারেনি। গত বার কেকেআরকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করা অধিনায়ক যেন হার মেনেই নিয়েছিলেন।

দৃশ্য ৩: আট বলের মধ্যে কেকেআরের দুই ওপেনার সুনীল নারাইন এবং কুইন্টন ডি’কক আউট হয়ে যাওয়ার পর শ্রেয়সের চোখ দু’টি চকচক করছিল। জয়ের একটা হালকা গন্ধ হয়তো পাচ্ছিলেন শ্রেয়স। ব্যাটার হিসাবে না পারলেও অধিনায়ক শ্রেয়স জবাব দেওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখছিলেন।

দৃশ্য ৪: অঙ্গকৃশ রঘুবংশী এবং অজিঙ্ক রাহানে দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে দ্রুত রান তুলতে শুরু করার পর আবার হতাশায় ভরে ওঠে শ্রেয়সের মুখ। দিশাহারা দেখাচ্ছিল তাঁকে।

লন্ডনের আবহাওয়ার মতোই নিয়মিত ব্যবধানে বদলাল শ্রেয়সের মুখের অভিব্যক্তি। কখনও মনোরম। কখনও শুষ্ক। শেষে আবার ঝলমলে। পঞ্জাবের করা ১১১ রানও টপকাতে পারল না কেকেআর! রাহানেরা থামলেন ৯৫ রানে। মর্যাদার লড়াইয়ে ১৬ রানে হেরে গেল কেকেআর।

গত বার কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন করেও প্রত্যাশিত মর্যাদা পাননি। সেই অসন্তোষ আইপিএলের নিলামের পরই প্রকাশ করেছিলেন শ্রেয়স। সরাসরি কারও নাম করেননি। সম্ভবত ব্যাট হাতে জবাব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না শ্রেয়স। পুরনো সতীর্থের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে গেলেন। মুল্লানপুরের ২২ গজেই অপমানের জবাব দিতে পারতেন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। মঞ্চও সাজানো ছিল। অথচ নিজের হাতে রাহানেদের জয়ের নৈবেদ্য সাজিয়ে দেন ‘বিতাড়িত’ শ্রেয়স।

শ্রেয়সের করে দেওয়া সুযোগ কজে লাগাতে পারল না কেকেআর। পঞ্জাবের জঘন্য ফিল্ডিংও জেতাতে পারল না রাহানেদের। সোনার সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার দায় এড়াতে পারবেন না কেকেআর অধিনায়ক। যুজবেন্দ্র চহলের যে বলে তিনি এলবিডব্লিউ আউট হলেন, সেটি অবশ্যই রিভিউ নেওয়া উচিত ছিল। বল অফ স্টাম্পের লাইনের বাইরে ছিল। অথচ রঘুবংশীর সঙ্গে আলোচনা করার পর রিভিউ না নিয়েই মাঠ ছাড়লেন রাহানে। অভিজ্ঞ অধিনায়কের একটা সিদ্ধান্তই ছন্দ নষ্ট করে দিল কেকেআরের ইনিংসের। ৩ উইকেট ৭২ রান থেকে ৮ উইকেটে ৭৯ রান! পরের ৭ রানে ৫ উইকেট হারাল কেকেআর।

চহল-সহ পঞ্জাবের বোলারেরা ভাল বল করলেন। চহল একাই ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচটা ছিনিয়ে নিলেন। কৃতিত্ব দিতে হবে শ্রেয়সের চতুর নেতৃত্বকেও। প্রতিটি ব্যাটারের জন্য আলাদা ফিল্ডিং সাজালেন। প্রাক্তন সতীর্থদের আউট করলেন নিখুঁত পরিকল্পনায়। ব্যাটিংয়ের খামতি ঢেকে দিলেন অধিনায়কত্ব দিয়ে। কেকেআরকে বাগে এনে ফেলেছিলেন শ্রেয়স। সেই সময় নিজের শেষ ওভারে চহলই আবার ১৬ রান দিয়ে কেকেআরকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আন্দ্রে রাসেলের মরিয়া লড়াই আশাও জাগায়। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্যাটারদের অযথা তাড়াহুড়োয় জেতা ম্যাচ মাঠে রেখে এল কেকেআর।

লড়াইটা হল আসলে দুই মুম্বইকরের। রাহানে ফাঁদ তৈরি করলেন, শ্রেয়সও পাল্টা করলেন। দুই অধিনায়কই পরস্পরকে চেনেন খুব ভাল করে। দু’জনেই জানেন কী করতে পারেন প্রতিপক্ষ। বলা যায় সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হল। রঞ্জি দলের সতীর্থকে ঠেকাতে পারলেন না মুম্বইয়ের অধিনায়ক। এই ম্যাচে বলার মতো ব্যাটিং কেউ করেননি। লড়াই হল আসলে দু’দলের বোলারদের। রণকৌশলের। কোনও ব্যাটারকে নিয়েই আলাদা করে উল্লেখ করার কিছু নেই। শ্রেয়সের ‘শূন্য’-ই এই ম্যাচে ব্যাটারদের বেহাল দশার প্রতীক। আবার তাঁর চতুর নেতৃত্বই সেরা পাওনা। অভিজ্ঞ রাহানের নিজের উইকেট বাঁচানোর চেষ্টা না করাই আসল পার্থক্য গড়ে দিল। কেকেআর কর্তৃপক্ষ হয়তো চর্মচক্ষুতে বুঝলেন কী হারিয়েছেন তাঁরা।

মঙ্গলবারের ম্যাচ থেকে কেকেআরের ২ পয়েন্ট দরকার ছিল নিশ্চই। তার থেকেও বোধহয় জরুরি ছিল মর্যাদা রক্ষা। প্রাক্তন অধিনায়কের ঘর থেকে খালি হাতে ফিরতে হল নাইটদের। পয়েন্ট, মান কিছুই রক্ষা হল না। ঠকে কি শিখবে কেকেআর?

Advertisement
আরও পড়ুন