Ajaz Patel

Ajaz Patel: দুই ওভারে তিন উইকেট, জন্মভূমিকেই বিরাট আউটে কর্মভূমি করলেন অজাজ পটেল

মুম্বইয়েই তাঁর জন্ম। সেই শহরের মাঠ ওয়াংখেড়েতে নেমেই আগুন ঝরালেন অজাজ পটেল। তুলে নিলেন ভারতের প্রথম চারটি উইকেট।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৫০
বিরাটকে আউট করলেন অজাজ।

বিরাটকে আউট করলেন অজাজ।

মুম্বইয়েই তাঁর জন্ম। কিন্তু মাত্র আট বছর বয়সে শহর ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিল তাঁর পরিবার। সেখানেই বড় হওয়া, ক্রিকেট শেখা এবং নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া। ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম বার মুম্বইয়ে পা দিয়ে অতীতচারী হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে নেমেই আগুন ঝরালেন অজাজ পটেল। তুলে নিলেন ভারতের প্রথম চারটি উইকেট।

ওয়াংখেড়ের ঘূর্ণি পিচে অজাজ যেন ত্রাস হয়ে উঠেছেন ভারতীয় ব্যাটারদের কাছে। প্রথম উইকেটে তখন শুভমন গিল এবং ময়াঙ্ক আগরওয়াল মিলে ৮০ রান তুলে দিয়েছেন। জুটি ভাঙলেন অজাজ। প্রথমে ফেরালেন শুভমনকে। তার পরের ওভারেই চেতেশ্বর পুজারা এবং বিরাট কোহলীকে তুলে নিলেন। গত ম্যাচের সেরা শ্রেয়স আয়ার যখন ভারতের ইনিংসে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন তাঁকেও চা-বিরতির পর তুলে নেন অজাজ। নিজের জন্মভূমিতে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে এর থেকে মধুর আর কী হতে পারে।

Advertisement

অজাজের পরিবার আদতে গুজরাতি। ভারুচ জেলার তাঙ্করিয়া জেলায় তাঁদের আদি বাড়ি। কিন্তু অনেক দিন আগেই মুম্বইয়ে চলে আসেন অজাজের বাবা ইউনুস। সেখানে রেফ্রিজারেটরের ব্যবসা চালাতেন। মা শেহনাজ ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। মুম্বইয়ে থাকাকালীন স্কুলে অল্পবিস্তর ক্রিকেট খেলেছিলেন অজাজ। কিন্তু খেলাটাকে নিয়ে কখনওই মনোযোগী ছিলেন না।

আট বছর বয়সে পরিবার চলে যায় অকল্যান্ডে। সেখানেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি অজাজের। তাঁর কাকা সঈদ পটেল ভাইপোকে ভর্তি করিয়ে দেন নিউ লিন ক্রিকেট ক্লাবে। ততদিনে টিভি দেখে সচিন তেন্ডুলকর এবং শেন ওয়ার্নের ভক্ত হয়ে গিয়েছেন অজাজ। নিউ লিন থেকে অ্যাভনডেল কলেজে গিয়ে আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত জিত রাভালের সঙ্গে পরিচয় হয় অজাজের। দু’জনে একে অপরের প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠেন।

পাঁচ ফুট ছ’ইঞ্চি উচ্চতার অজাজ প্রথমে জোরে বোলার ছিলেন। সেখান থেকে স্পিন বোলার হয়ে ওঠা প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড স্পিনার দীপক পটেলের হাত ধরে। তখন দীপক নিউজিল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ না মেলায় দীপকই অজাজকে পরামর্শ দেন স্পিন বোলিং করার। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েক বছর অজাজের পিছনে পড়েছিলেন দীপক।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দীপক বলেছিলেন, “দশ বছর আগে ওকে দেখে মনে হয়নি নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারে। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা যে পরিশ্রম করেছি তারই সুফল এটা। ওর প্রতিভা ছিলই। তা ছাড়া, বাঁ হাতি স্পিনারের আলাদা কদর গোটা বিশ্বেই রয়েছে। পরিশ্রমের কারণেই আজ ও এই জায়গায়।”

২০১৪ থেকে ২০১৭— টানা তিন বছর নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ প্লাঙ্কেট শিল্ডে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিলেন অজাজ। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে অভিষেক হয় অজাজের। অভিষেকেই ম্যাচের সেরা হন। তারপর থেকে ঘুরে তাকাতে হয়নি। আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের জোরে বোলার মিচেল ম্যাকক্লেনাঘানের সুবাদে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেট বোলার হিসেবেও ছিলেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে কানপুরে প্রথম টেস্টে ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলেছেন। শেষ ওভারে রবীন্দ্র জাডেজা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামলেছেন। মুম্বইয়ে ফিরে যেন স্বপ্নপূরণ হল তাঁর।

এই টেস্টে নামার আগেই জানিয়েছিলেন, পরিবারের লোক এখনও তাঁর খেলা মাঠে বসে দেখেননি। নিজের মাতৃভূমিতেই সেই সুযোগ প্রথম বার আসতে চলেছে। অজাজ বলেন, “মুম্বইয়ে নামার পর থেকেই ভাবছিলাম, কত বার এই শহরে এসেছি। প্রতি বারই পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। এই প্রথম পেশাদার কাজে মুম্বইয়ে আসা। ওয়াংখেড়েতে কত আইপিএল ম্যাচ দেখেছি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে নেট বোলার হিসেবে কাটানোর অভিজ্ঞতাও দারুণ। তাই ফিরে একটু নস্ট্যালজিক তো লাগছেই।”

সেই অভিজ্ঞতা মধুর হয়ে থাকল কোহলী, পুজারার উইকেট পেয়ে।

আরও পড়ুন
Advertisement