Mumbai Indians Impact in IPL

হার্দিক, বুমরাহ থেকে বিগ্নেশ, অশ্বনী! আইপিএলে ১৮ বছর ধরে কী ভাবে প্রতিভা খুঁজে আনছে মুম্বই

আইপিএলে বছরের পর বছর ধরে প্রতিভা খুঁজে আনছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সেই ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেই এখন ভারতীয় দলের বড় বড় স্তম্ভ। কী ভাবে এই অসাধ্যসাধন করছে মুম্বই?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৫৭
cricket

কেকেআরের বিরুদ্ধে উইকেট নিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস অশ্বনী কুমারের (একেবারে ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

আইপিএল মানে যে শুধুই বড় বড় তারকা নিয়ে দল গড়া নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। অবশ্যই তারা তারকা ক্রিকেটারদের নিয়েছে। পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে প্রতিভা খুঁজে এনেছে। হার্দিক পাণ্ড্য, জসপ্রীত বুমরাহ, ঈশান কিশন, অক্ষর পটেল, তিলক বর্মা, নেহাল ওয়াধেরা থেকে শুরু করে এ বারের সেরা দুই চমক বিগ্নেশ পুথুর ও অশ্বনী কুমার, সবই মুম্বইয়ের অবদান। এই ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেই এখন ভারতীয় দলের বড় বড় স্তম্ভ। মুম্বইয়ের অধীনে শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়েছেন তাঁরা। সেই কারণেই হয়তো পাঁচ বার আইপিএল জিতেছে এই দল। কী ভাবে এই অসাধ্যসাধন করছে মুম্বই? তাদের সাফল্যের নেপথ্য কারণ কী?

Advertisement

এ বারের আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রথম ম্যাচে চমক দিয়েছেন ২৪ বছরের বিগ্নেশ। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে চার ওভাবে ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। আউট করেছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শিবম দুবে ও দীপক হুডাকে। মুম্বই হয়তো ম্যাচ জেতেনি, কিন্তু বিগ্নেশের স্পিন অবাক করেছে বিশেষজ্ঞদের। ম্যাচ শেষে বিগ্নেশের কাঁধে হাত রেখে কথা বলতে দেখা যায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। তরুণ এই স্পিনারকে নিশ্চয় উৎসাহ দিয়েছেন তিনি।

কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটিং আক্রমণের কোমর ভেঙে দিয়েছেন ২৩ বছরের বাঁহাতি পেসার অশ্বনী। তিন ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। আউট করেছেন অজিঙ্ক রাহানে, রিঙ্কু সিংহ, মণীশ পাণ্ডে ও আন্দ্রে রাসেলকে। তাঁর দাপটে মাত্র ১১৬ রানে শেষ হয়ে গিয়েছে কলকাতা। হাসতে হাসতে ম্যাচ জিতেছে মুম্বই।

তবে এটা নতুন কিছু নয় মুম্বইয়ের জন্য। এ ভাবেই তো কোনও এক আইপিএলে নজর কেড়েছিলেন বুমরাহ। তাঁর প্রথম উইকেটের নাম ছিল বিরাট কোহলি। আবার ব্যাটে-বলে ভরসা দিয়েছিলেন হার্দিক। এই আইপিএল খেলেই তো ধোনির ভারতীয় দলে জায়গা হয় তাঁর। ঈশান, তিলকদের ক্ষেত্রেও গল্পটা তো একই। কী ভাবে এই গল্প লেখে মুম্বই?

ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর

মুম্বইয়ের একটি বড় স্কাউট দল রয়েছে। তাদের নজর থাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে। রঞ্জি ট্রফি, সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি, বিজয় হজারে ট্রফি, বুচি বাবু প্রতিযোগিতা ভাল ভাবে দেখেন স্কাউট দলের সদস্যেরা। টেলিভিশনে নয়, মাঠে গিয়ে খেলা দেখেন তাঁরা। ভারতের তরুণ ক্রিকেটারদের দিকে নজর থাকে তাঁদের। এই স্কাউট দলে পার্থিব পটেল, কিরণ মোরে, জন রাইটের মতো নাম রয়েছে। শুধু এক মরসুম নয়, একাধিক মরসুম দেখে তরুণ ও প্রতিভাবান ক্রিতেটারদের একটি তালিকা তৈরি করেন তাঁরা।

তালিকা যায় মুম্বইয়ের কোচের কাছে

সেই তালিকা যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কোচের কাছে। শুধু প্রধান কোচ নন, বাকি সাপোর্ট স্টাফেরাও সেই তালিকা খতিয়ে দেখেন। তার পর সেই ক্রিকেটারদের ট্রায়ালে ডাকা হয়। সেখানে কোচেরা উপস্থিত থাকেন। ট্রায়ালে যাঁরা নজর কাড়েন তাঁদের আলাদা একটি তালিকা তৈরি হয়।

সারা বছর ধরে শিবির চলে

শুধু ট্রায়ালে নজর কাড়লে হয় না, সারা বছর ধরে ভাল খেলতে হয় সেই ক্রিকেটারদের। সারা বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিবির করে মুম্বই। সেই সব শিবিরে দলের কোচেরা থাকেন। সেখানে ক্রিকেটারদের প্রতিভা আরও ঘষামাজা করা হয়। আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় নামতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর রাখা হয়। সেই জন্যই বিগ্নেশ বা অশ্বনীদের দেখে মনে হয়নি, অভিষেক ম্যাচ খেলছে তারা। আগে থেকেই তৈরি হয়ে নেমেছে তারা।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মালিক ও অধিনায়কের

সারা বছর ধরে পরীক্ষা চলার পর শেষ পর্যন্ত কয়েক জন ক্রিকেটারের তালিকা দলের মালিক ও অধিনায়কের কাছে পাঠান কোচ ও সাপোর্ট স্টাফেরা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন মালিক ও অধিনায়ক। সেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের নাম আইপিএলের নিলাম তালিকায় ঢোকানো হয়। তার পরে নিলামে তাঁদের কেনা হয়। এ ভাবেই প্রতি বছর চমক দেয় মুম্বই। নতুন নতুন প্রতিভাদের তুলে আনে তারা। এই সব প্রতিভার লাভ শুধু আইপিএল নয়, পায় ভারতীয় ক্রিকেটও। বুমরাহ, হার্দিকেরা তার উদাহরণ। আগামী দিনে হয়তো সেই তালিকাতেই যোগ হবে বিগ্নেশ, অশ্বনীদের নাম।

Advertisement
আরও পড়ুন