Air pollution

Cow’s Toilet: দরজা খুলে টয়লেটে যাচ্ছে গরু, কাজ হলে ফ্লাশও করে দিচ্ছে! দেখুন ভিডিয়ো

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘কারেন্ট বায়োলজি’-তে। গবেষণাটি চালিয়েছে জার্মানির ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফার্ম অ্যানিমাল বায়োলজি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:৩৯
ছবি সৌজন্যে- জার্মানির ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফার্ম অ্যানিমাল বায়োলজি (এফবিএন)’।

ছবি সৌজন্যে- জার্মানির ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফার্ম অ্যানিমাল বায়োলজি (এফবিএন)’।

যতটা ভাবি, ততটা গরু নয়!

তারা বেশ চালাক-চতুর। শেখালে চটপট শিখে নিতে পারে। মানবশিশুর থেকেও বেশি তাড়াতাড়ি। হ্যাঁ, প্রয়োজন হলে দরজা খুলে বাথরুমে যায় গরুরা। ক্ষেতখামারে যেখানে সেখানে মূত্র ও মলত্যাগ করে না। কাজ হয়ে গেলে বাথরুম অপরিষ্কার হয় সেটা ভালই বোঝে। তাই মূত্র ও মলত্যাগের পর বাথরুম পরিষ্কার করার জন্য ‘ফ্লাশ’ টেনে দেয়ে তারা। তার পর দরজা খুলে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে।

Advertisement

গল্প-কথা নয়। কল্পকাহিনিও নয়। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এই নজরকাড়া খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘কারেন্ট বায়োলজি’-তে। গবেষণাটি চালিয়েছে, জার্মানির ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফার্ম অ্যানিমাল বায়োলজি (এফবিএন)’ ও নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়। যৌথ ভাবে।

গবাদি পশু ও গ্রিনহাউস গ্যাস

চাষবাসের এলাকা বাড়ায় ক্ষেতখামারে গবাদি পশুদের ত্যাগ করা বর্জ্য পদার্থ থেকে উত্তরোত্তর বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা। পরোক্ষে তৈরি হচ্ছে অত্যন্ত বিষাক্ত অ্যামোনিয়ার মতো গ্রিনহাউস গ্যাস। আর তার ফলে বাড়ছে উষ্ণায়নের বিপদ। যা দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত অগস্টে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সংক্রান্ত রিপোর্টও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ক্ষেতখামারে গবাদি পশুর বর্জ্য পদার্থ থেকে কী ভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো যায় তার উপায় বাতলাতে বলেছে বিজ্ঞানীদের।

ঘটনা হল, অ্যামোনিয়া গ্যাস যে সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হয়, তা কিন্তু নয়। কিন্তু গবাদি পশুর মাটিতে মেশা মল, মূত্র থেকে তৈরি হওয়া অ্যামোনিয়াকে ব্যাক্টরিয়া-সহ কয়েকটি অণুজীব বদলে দেয় নাইট্রাস অক্সাইডে। যা কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের পর তৃতীয় বিপজ্জনক গ্রিনহাউস গ্যাস। চাষবাস থেকেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অ্যামোনিয়া গ্যাসের নির্গমন হয়। যার অর্ধেকের জন্যই দায়ী গবাদি পশুদের মল ও মূত্র।

ভিডিয়ো সৌজন্যে- জার্মানির ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফার্ম অ্যানিমাল বায়োলজি (এফবিএন)’।

আমজনতার তিনটি ধারণায় আঘাত

গবেষকরা তাঁদের গবেষণায় আমজনতার তিনটি বহুপ্রচলিত ধারণার মর্মমূলে কার্যত আঘাত করেছেন।

প্রথমত তাঁরা দেখিয়েছেন, মূত্র ও মলত্যাগ করার জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নেয় গবাদি পশুরা। ব্যাপারটা এমন নয় যে অপেক্ষা করতে না পেরে তারা হঠাৎই মল, মূত্র ত্যাগ করে ফেলে সদ্যোজাত মানবশিশুর মতো।

দ্বিতীয়ত, গবেষকরা দেখিয়েছেন, বাথরুমে গিয়ে মল, মূত্র ত্যাগ করার অভ্যাসে রপ্ত করাতে চাইলে তারা সেটা খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে। সদ্যোজাত মানবশিশু, এমনকি, দু’এক বছরের শিশুদের চেয়েও বেশি তাড়াতাড়ি এই অভ্যাসে রপ্ত করানো যায় ক্ষেতখামারের গবাদি পশুদের।

তৃতীয়ত, গবেষকরা এও দেখিয়েছেন, খাবারদাবারের উপহার পেলে মানবশিশুদের চেয়ে গবাদি পশুরা বেশি তাড়াতাড়ি এই অভ্যাসে রপ্ত হয়ে ওঠে। যা প্রমাণ করেছে মানবশিশুদের চেয়ে গবাদি পশুরা বেশি চালাক-চতুর।

অন্যতম গবেষক পশু মনোবিদ জান ল্যাংবিন বলেছেন, “ক্ষেতখামারে গরু, মোষের মতো গবাদি পশুদের যেখানে সেখানে মল ও মূত্রত্যাগের জন্য চাষের জমি ও তার ভিতরের নালা, আলগুলি দূষিত হয়। আবার সেই গবাদি পশুরা যদি ক্ষেতখামারে শস্য রাখার আস্তানায় মল ও মূত্রত্যাগ করে, তাতে সেগুলি দীর্ঘ দিন সেখানে থাকতে থাকতে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করে। যা একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। তাই আমরা চেয়েছিলাম গবাদি পশুদের বাথরুম ব্যবহারের অভ্যাসে রপ্ত করিয়ে অ্যামোনিয়ার মতো বিষাক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাতাসে কমিয়ে আনতে।”

কী ভাবে শেখানো হল গবাদি পশুদের?

এ ব্যাপারে গবাদি পশুদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন গবেষকরা। যে পদ্ধতির নাম ‘মুলু ট্রেনিং’। এই অভ্যাসে রপ্ত হয়ে ওঠার জন্য ক্ষেতখামারের গবাদি পশুদের প্রথমে লোভনীয় খাবারদাবারের টোপ দেওয়া হয়েছিল। তার পর শেখানো হয়েছিল মল ও মূত্র ত্যাগের প্রাক মুহূর্তে কী ভাবে দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকতে হবে। আর কী ভাবে কাজ শেষ হয়ে গেলে বাথরুম পরিষ্কার করে দিতে হবে।

ল্যাংবিন জানিয়েছেন, বাথরুম ব্যবহারের অভ্যাসে রপ্ত করানোর জন্য প্রাথমিক ভাবে গবাদি পশুদের জন্য কিছুটা কড়া শাস্তিরও ব্যবস্থা রেখেছিলেন গবেষকরা। বাথরুমের বাইরে মল, মূত্র ত্যাগ করলেই গবাদি পশুদের দেওয়া হত কড়া শাস্তি। দীর্ঘ ক্ষণ খাবার বা জল না দিয়ে। অল্পবিস্তর চাপড় মেরেও। গবাদি পশুদের কানে গুঁজে দেওয়া হত ইয়ার ফোন। আর তার মাধ্যমে তাদের শোনানো হত খুব কর্কশ শব্দ। গায়ে জলও ঢেলে দেওয়া হত।

সদ্যোজাত মানবশিশুদের চেয়েও তাড়াতাড়ি শেখা!

গবেষকরা জানিয়েছেন কয়েক সপ্তাহের প্রশিক্ষণেই ভাল সাড়া মেলে। ১৬টি গবাদি পশুর মধ্যে ১১টিই বাথরুমে গিয়ে মল, মূত্র ত্যাগ করা ও বাথরুম পরিষ্কার করার অভ্যাসে রপ্ত হয়ে ওঠে। তিন সপ্তাহের মধ্যে। যেটা সদ্যোজাত মানবশিশুদের শিখতে অনেক বেশি সময় লাগে। এমনকি, দু’-তিন বছরের শিশুদেরও।

গরুরও আত্মসম্মান বোধ রয়েছে!

গবেষকরা বিস্ময়ে দেখেছেন আরও একটি ঘটনা। গবাদি পশুদেরও আত্মসম্মান বোধ আছে। এক জন তাড়াতাড়ি বাথরুমে যাওয়ার অভ্যাসে রপ্ত হয়ে উঠছে দেখলে অন্য জন সেটা পারেনি বলে অস্বস্তি বোধ করে। চেষ্টা করে কত তাড়াতাড়ি সেও এই অভ্যাসে রপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

Advertisement
আরও পড়ুন