Mahalaya Special Recipe

শিউলির ছোঁয়া থাক শারদীয়া ভোজে, ফুলেল সুবাস ভরা পোলাও আর মিঠা দিলখোসে শুরু হোক দেবীপক্ষ

শরতের সাদা মেঘের সঙ্গে শিউলি ফুলের যোগ যেন ওতপ্রোত। আর শরতের সেই শিউলির যদি মিশেল হয় সুগন্ধি আতপ চালের সঙ্গে, তা হলে তো কোনও কথাই নেই।

Advertisement
সায়ন্তনী মহাপাত্র
সায়ন্তনী মহাপাত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৪
How to make siuli pulao and mitha dilkhusa for the auspicious occasion of Mahalaya

শিউলির গন্ধ মাখা পোলাও আর মিঠা দিলখুসা দিয়েই শুরু হোক পুজোর পেটপুজো। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র।

শিউলি বা শেফালিকা ফুলের সঙ্গে শরতের সঙ্গে সখ্য নিবিড়। কচি শ্যামল ঘাসে শরতের সাদা মেঘের নরম ছায়া যেমন মায়া বোনে, তেমনই অশ্বিনের আঁধার রাতে তারার মতো ফুটে ওঠা শিউলির সুবাসে বাতাস ভারী হয়ে থাকে মনকেমনের গন্ধে।

Advertisement

শরতের চিরঞ্জীব বনৌষধিতে পণ্ডিত শিবকালী ভট্টাচার্য শিউলি গাছের কথা লিখতে গিয়ে তার ঔষধি গুণের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেছেন। এর ফুল, পাতা, কন্দ , মূল— ব্যবহার বিশেষে, সামান্য জ্বরজ্বালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের প্রদাহ, বিষক্রিয়া, ইন্দ্রিয়সংযম, সায়াটিকার মতো কঠিন রোগ হরণের অব্যর্থ দাওয়াই। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে কোন সে ছোটবেলায় তাই গরম ভাতের শুরুতে কখনও বা পাতে পড়ত শিউলি পাতার তেতো শুক্তো খনো বা বেসনে ভাজা মচমচে বড়া। রক্তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে এই তিক্তরসের পত্রের বিকল্প প্রায় নেই।

তা সেই অতি সূক্ষ শারীরবৃত্তীয় তত্ত্বজ্ঞানের কথা, গাছ-পাতা-কন্দের এমন রাসায়নিক ব্যাখ্যান জানেন না ও বাড়ির ছোটখুড়ি। তবুও সাতসকালে পাতার ফাঁকের ভোরের আলোছায়া গায়ে মেখে টুকে টুকে চুপড়ি ভরে কুড়িয়ে আনেন শিউলির ফুল। রোদে শুকিয়ে গুছিয়ে তোলেন জাফরানি রঙের অনন্য এক ভেষজ উপাদান। জাফরানের নাম শোনেননি খুড়ি, শুধু জানেন রান্নায় রং আনতে, শরীর ঠান্ডা করতে, সুগন্ধি এই পুষ্পবৃন্তের জুড়ি মেলা ভার। পালাপার্বণের দিনে ভালবাসার মানুষদের পাতে খানিক ভালমন্দ বেড়ে দেওয়ার কত যে ভাবনা বাড়ির মেয়েদের!

পুজোর গান এ বার বড় কঠিন সুরে বেজেছে, নাগাড়ে বৃষ্টির সঙ্গত তার সঙ্গে। উৎসবমুখর দিনের অপেক্ষার এক পারে বিচারের প্রতীক্ষায় রাতজাগা বহু মানুষ আর অন্য পারে দাঁড়িয়ে আছে জলে ডুবে থাকা গ্রাম, অসহায় কিছু মুখ। সে মুখগুলির দিকে তাকালে উৎসবের রোশনাই আজ নিস্তেজ লাগে। তবু বচ্ছরকার দিনে যে মেয়ে ঘরে ফেরে, তার মুখ চেয়ে পার্থিব বিলাস না থাক, গৃহাভিমুখী মানুষের পাতে খানিক ভালবাসার উষ্ণতাটুকু বেড়ে দিতে ক্ষতি কী!

শরতের সাদা মেঘের সঙ্গে শিউলি ফুলের যোগ যেন ওতপ্রোত। আর শরতের সেই শিউলির যদি মিশেল হয় সুগন্ধি আতপ চালের সঙ্গে, তা হলে তো কোনও কথাই নেই। এখানে রইল শরতের শিউলির ব্যবহারে তৈরি এক পদ ও তার সঙ্গে সঙ্গত করার আর এক পদের রন্ধন প্রণালী।

পোলাও আর কোপ্তা কারি পরিবেশন হোক নতুন কায়দায়।

পোলাও আর কোপ্তা কারি পরিবেশন হোক নতুন কায়দায়। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র।

শিউলি ফুল আর ছানার পোলাও

উপকরণ

সুগন্ধি আতপ চাল: ২ কাপ

তাজা বা শুকনো শিউলি ফুলের বোঁটা: ১ কাপ (শুকনো হলে ৩ টেবিল চামচ)

গোটা গরমমশলা: এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারচিনি সামান্য পরিমাণে

কাজুবাদাম: এক মুঠো

কিশমিশ সামান্য (ধুয়ে জলে ভেজানো )

চিনি: ২ টেবিল চামচ

ঘি: ২ টেবিল চামচ

জলঝরানো ছানা: ১ কাপ

আদা কুরোনো: দেড় চামচ

চিনি: ১/২ চামচ

ময়দা: ১ চামচ

নুন স্বাদমতো

ঘি/ সাদা তেল: ভাজার জন্য

তবক : ২ পাতা

প্রণালী:

· চাল ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন।

· শিউলি ফুলের বোঁটা ধুয়ে সামান্য থেঁতো করে ২ কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট।

· ছানা ভাল করে ৫ মিনিট মাখুন। দানাভাব চলে গেলে বাকি উপকরণ মিশিয়ে ছোটো ছোট গোল বলের মতো বানিয়ে নিন। তেলে সামান্য নেড়েচেড়ে তুলে নিন। কয়েকটিতে তবক লাগিয়ে রুপোলি রং আনুন।

· ঘি গরম করে কাজুবাদাম হালকা ভেজে নিন।

· ওই ঘিতেই সমস্ত গোটা গরম মশলা থেঁতো করে দিন। সুগন্ধ উঠলে চাল দিয়ে নাড়াচাড়া করুন হালকা হাতে। চাল খানিক সাদা হলে তাতে ভিজিয়ে রাখা শিউলি ফুলের জল ছেঁকে দিয়ে দিন। নুন, মিষ্টি দিয়ে এক ফুট উঠলে দম কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন ১২-১৪ মিনিট। ভাত নরম হলে ওর উপরে ছানার কোফতা, কাজু ছড়িয়ে ঢাকা বন্ধ করে রান্না করুন আরও দুই মিনিট। এই পর্যায়ে আর এগুলি নাড়বেন না।

· গরম গরম পরিবেশন করুন কোনও তরকারির সঙ্গে।

এমন সুগন্ধি পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন মিঠা দিলখোস। সাধারণত রসগোল্লা খাওয়া হয় শেষ পাতে মিষ্টিমুখ করার জন্য। তবে সেই রসগোল্লা দিয়েই যদি কোর্মা বানিয়ে ফেলা যায়, তা হলে কেমন হয়?

মিঠা দিলখোস

উপকরণ:

রসগোল্লা: ৮টি

ছোট আলু: ৮টি

অদা বাটা : ১ চা-চামচ

খোয়া ক্ষীর : এক মুঠি

ধনে গুঁড়ো: ২ চা চামচ

কাজুবাদাম: ১ মুঠো ভেজানো

দই: ২ টেবিল চামচ

গোটা গরমমশলা: এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারচিনি সামান্য পরিমাণে

হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন, মিষ্টি স্বাদমতো

ঘি বা সাদা তেল: ৩ টেবিল চামচ

গরমমশলার গুঁড়ো: ১ চা চামচ

পদ্ধতি:

· আদা, ধনে, লঙ্কার গুঁড়ো সামান্য জলে গুলে রাখুন।

· কাজুবাদাম বেটে রাখুন।

· রসগোল্লার রস চেপে ঈষদুষ্ণ জলে ভিজিয়ে রাখুন ৫ মিনিট। রস চেপে ফেলে আবার জলে ফেলে মিষ্টি রস বার করে ফেলে দিন।

· শুকনো খোলায় খোয়া ক্ষীর লাল করে ভেজে তুলুন।

· আলু নুন দিয়ে লাল করে কম আঁচে ভেজে তুলুন।

· ঘি গরম করে তাতে গোটা গরমমশলার ফোড়ন দিন। সুগন্ধ বেরোলে জলে মিশিয়ে রাখা মশলা দিয়ে কষিয়ে নিন। খানিক পরে দই আর নুন দিয়ে আবারও কষান।

· মশলা থেকে তেল বেরিয়ে এলে তাতে দিন কাজুবাটা। ২ মিনিট রান্না করে আলু দিয়ে কষিয়ে দেড় কাপ গরম জল দিন।

· আলু নরম হলে তাতে রসগোল্লা আর গুঁড়ো ক্ষীর মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন।

· সামান্য গরমমশলা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement