আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য হোয়াইট হাউসে ফেরা পাকা করে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতে সাদা বাড়িতে পুনঃপ্রবেশ করবেন তিনি। তত দিন অবশ্য প্রেসিডেন্ট থাকছেন জো বাইডেনই।
অর্থাৎ, প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেনের হাতে মেরেকেটে আর দেড় মাস। আর বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন এই কম সময়ের মধ্যেই বাইডেন এমন কোনও পদক্ষেপ করতে পারেন যার ফলে আপাতত ইতি হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে।
কিন্তু যে সমস্যা বিগত আড়াই বছরে সমাধান করা যায়নি, তা এই স্বল্প সময়ের মধ্যে কেন নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করতে পারেন বাইডেন? এর নেপথ্যে রয়েছে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।
নির্বাচনী প্রচারে নেমে ট্রাম্পকে বার বার বলতে শোনা গিয়েছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফিরলে তিনি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ এবং হানাহানি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দেবেন। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি করাবেন।
ট্রাম্পকে এ-ও বলতে শোনা যায়, তিনি প্রেসিডেন্টের গদিতে থাকলে এত প্রাণ যেতে দিতেন না। অনেক আগেই দুই দেশের সমস্যা মিটিয়ে দিতেন।
ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন— উভয়ের সঙ্গেই তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। আর সেই কারণে দুই রাষ্ট্রনেতাকে যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি করাতে বেশি সময় তাঁর লাগবে না।
ট্রাম্প জোর দিয়ে আরও বলেছেন যে, বাইডেনকে যে ভরসা পুতিন এবং জ়েলেনস্কি করেন, তার থেকে বেশি তাঁকে করেন।
ট্রাম্পের আরও দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে কখনওই যুদ্ধ করতে যাওয়া উচিত হয়নি জ়েলেনেস্কির। তাঁর অভিযোগ, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধান না করিয়ে যুদ্ধে উস্কানি দিয়েছেন বাইডেন। ইউক্রেনের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। আর সে কারণেই এত সমস্যা।
ট্রাম্পের কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট যে, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেই ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য চাপ দিতে পারেন তিনি।
একই সঙ্গে জ়েলেনেস্কিকে ডনবাস-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দিতেও বলা হতে পারে। দুই দেশকেই সীমান্ত এলাকা থেকে সেনা সরানোর কথাও বলা হতে পারে।
পাশাপাশি, বাইডেনের নেতৃত্বাধীন আমেরিকা জ়েলেনেস্কিকে যে ভাবে অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে মদত জুগিয়েছিল, তা না-ও করতে পারে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকার। ফলে ‘নিরুপায়’ হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে রাজি হয়ে যেতে পারেন জ়েলেনস্কি।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরেই আমেরিকার নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দিয়েছেন।
এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, নেটোর বাইরেই থাকবে ইউক্রেন। নিরপেক্ষ থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে জ়েলেনস্কি সরকারকে। কয়েকটি অঞ্চলও রাশিয়ার হাতে সঁপে দিতে হতে পারে তাঁকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবহেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাইডেন এবং জ়েলেনেস্কি। মনে করা হচ্ছে, হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর ট্রাম্প যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতা করতে সক্ষম হন, তা হলে সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন বাইডেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যে প্রাণহানি হয়েছে, তার দায়ও চাপতে পারে তাঁর উপর। এবং বাইডেন নিজেও সে বিষয়ে অবগত।
আর সে কারণেই নাকি জানুয়ারি মাসের আগেই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাত মেটানোর জন্য উঠেপড়ে লাগতে পারেন বাইডেন। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা এ-ও মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ইতি বাইডেনের হাতে হোক, তেমনটা নাকি চান জ়েলেনেস্কি। কারণ ট্রাম্পের হাতে যদি ঝামেলার নিষ্পত্তি হয়, তা হলে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হারাতে হতে পারে ইউক্রেনকে। পুরো শান্তিচুক্তি মূলত রাশিয়ার স্বার্থের কথা মাথায় রেখে হতে পারে।
ট্রাম্পের শান্তিপ্রস্তাবের কথা শুনে রাশিয়া এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও ইউক্রেনের জ়েলেনস্কি সরকারের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়ে দিয়েছেন, যদি কোনও শান্তিপ্রস্তাব আনা হয়, তা হলে তা যেন ‘বাস্তব চিত্রের’ কথা মাথায় রেখে করা হয়।
আর সে আবহেই মনে হচ্ছে বাইডেন এবং জ়েলেনেস্কি উভয়েই চান যে বাইডেন ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই কোনও একটি সিদ্ধান্তে আসুক রাশিয়া এবং ইউক্রেন। যদিও পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে রাশিয়ার উপরে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদেরও একাংশের মতে, বাইডেন বা জ়েলেনেস্কি যতই চেষ্টা করুন না কেন, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে শান্তির জন্য আলোচনা শুরু হতে পারে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পরেই।
সব ছবি: সংগৃহীত।