
গুরুগ্রামের এক নামী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’-এর শিকার এক বিমানসেবিকা। নির্যাতিতা এ রাজ্যের কন্যা। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই হাসপাতালের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গুরুগ্রামের একটি হোটেলের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে কাটতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৪৬ বছরের বিমানসেবিকা। প্রশিক্ষণের জন্য তিনি গুরুগ্রামে ছিলেন। গত ৫ এপ্রিল মহিলাকে ভর্তি করানো হয় সেখানকার নামী একটি হাসপাতালে। ১৩ এপ্রিল তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান মহিলা। ১৪ এপ্রিল তিনি ‘ডিজিটাল ধর্ষণের’ অভিযোগ করেন। নির্যাতিতা জানান, ওই হাসপাতালের এক প্রযুক্তিকর্মী তাঁকে আইসিইউ কেবিনে যৌন নির্যাতন করেছেন।

এই ঘটনার পরে দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’ কী তা নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

ভিআর প্ল্যাটফর্ম, সমাজমাধ্যমের মতো ভার্চুয়াল কোনও জায়গায় যৌন হেনস্থা ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’-এর আওতায় পড়ে। ভারতীয় আইনে এই ধরনের যৌন নির্যাতনকে ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

কোনও ব্যক্তির সম্মতি ছাড়াই তাঁর যৌনাঙ্গে হাত বা পায়ের আঙুল প্রবেশকেও ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’ বলা হয়।

ডিজিটাল শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ডিজিটাস’ থেকে, যার অর্থ আঙুল। সম্মতি ছাড়া কোনও মহিলার যোনিতে হাত বা পায়ের আঙুল প্রবেশ করানো ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’-এর আওতায় পড়ে। এটি যৌন নির্যাতনের একটি গুরুতর রূপ হিসাবে স্বীকৃত।

এই ধরনের নির্যাতন হাসপাতাল, বাড়ি, এমনকি জনসমক্ষেও ঘটতে পারে। ভুক্তভোগীরা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক আঘাতও ভোগ করেন।

সাধারণত নির্যাতিতা যখন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকেন বা তাঁর দেহ অসাড় থাকে, তখনই অপরাধীদের মধ্যে এই ধরনের অপরাধ ঘটানোর প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

খুব কম অভিযোগ দায়ের হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি ‘ডিজিটাল ধর্ষণ’-এর ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লির একটি আদালত দু’বছরের শিশুকন্যার উপর যৌন নির্যাতনের অপরাধে এক ব্যক্তিকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়।

অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ববিতা পুনিয়া এই রায় ঘোষণা করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, ২০২১ সালে ওই শিশুটিকে ডিজিটাল ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত। অভিযুক্তের আইনজীবী কম শাস্তির আবেদন করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বিচারক।

অতীতে আইনের বইয়ে ডিজিটাল ধর্ষণের উল্লেখ না থাকলেও ২০১২ সালের দিল্লিতে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীর ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকে এই শব্দবন্ধের ব্যবহার শুরু হয়। যদিও ২০১২ সালের পকসো আইনেও সরাসরি তা উল্লেখ করা হয়নি।

এ বার হাসপাতাল কর্মীর বিরুদ্ধে সেই ডিজিটাল ধর্ষণেরই অভিযোগ তুলেছেন বিমানসেবিকা। বিমানসেবিকা তাঁর অভিযোগে বলেন, তিনি আইসিইউ কেবিনে যখন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না, সেই সময়ে তাঁকে যৌন নির্যাতন করা হয়। সেই সময় দু’জন নার্স উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা অভিযুক্তকে বাধা তো দেনইনি, বরং সাহায্য করেছিলেন!

পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে নির্যাতিতা জানান, ৬ এপ্রিল রাত ৯টা নাগাদ দু’জন নার্স তাঁর পোশাক পরিবর্তন করাতে যান। তখন তিনি অর্ধচেতন অবস্থায় ছিলেন। ওই সময়ে তিনি পুরুষকণ্ঠ শুনতে পান।

মহিলার কথায়, ‘‘আমার শরীরের মাপ জানতে চাইছিলেন এক জন লোক। নার্সেরা তাঁকে সেই তথ্য দিচ্ছিলেন। তার পর আমি শুনতে পেলাম, লোকটি নার্সের কাছে আমার কোমরের আকার জানতে চাইছে। তার পর তিনি বলেন, নিজেই পরীক্ষা করবেন। এর পর আমার ডান দিকে চাদরের তলা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেন।’’

অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে। শুক্রবার তারা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, কুকীর্তির আগে এবং পরে অভিযুক্ত মোবাইলে পর্নোগ্রাফি দেখেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সিট গঠন করা হয়েছে। তারা ওই হাসপাতালের চিকিৎসক-সহ ৫০-এর বেশি কর্মীকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে। একই সঙ্গে হাসপাতালের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়। সেই ফুটেজ দেখেই অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়।
সব ছবি: প্রতীকী।