গ্রেফতারি এড়াতে নাকি আপাদমস্তক ঢেকে চুপিচুপি শহর ছাড়ছেন রাশিয়ার একনায়ক ভ্লাদিমির পুতিনের পালিতা মেয়ে। তিনি টিভি তারকা এবং বিরোধী রাজনীতিবিদ কেসনিয়া সোবচাক।
৪০ বছর বয়সি কেসনিয়াকে সম্প্রতি বেলারুশের মিনস্কের ২৫৭ কিমি উত্তরে ভিডজি পয়েন্ট সীমান্ত পেরিয়ে লিথুয়ানিয়ায় যেতে দেখা গিয়েছে।
সিসিটিভিতে দেখা যাচ্ছে, দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সঙ্গে সীমান্ত পেরোচ্ছেন কেসনিয়া। মুখ ঢেকে এবং টুপি পরে সীমান্ত পার হতে দেখা গিয়েছে এই তিন জনকে।
কেসনিয়ার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য বেলারুশ সীমান্তে থাকা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে। লিথুয়ানিয়ার তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ইজরায়েলি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সে দেশে প্রবেশ করেছেন কেসনিয়া৷
মনে করা হচ্ছে বেলারুশের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেসনিয়ার সুসম্পর্ক থাকার কারণেই তিনি বিনা বাধায় লিথুয়ানিয়ায় প্রবেশ করতে পেরেছেন।
ইউক্রেনের উপর পুতিন হামলা চালানোর কারণে রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের লিথুয়ানিয়ায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সে দেশের সরকার। কিন্তু মনে করা হচ্ছে কেসনিয়া তাঁর ইজরায়েলি পাসপোর্টের সাহায্যে সে দেশে প্রবেশ করতে কোনও বাধা পাননি।
ভিডিয়োটি ‘থ্রি সিস্টারস’ নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।
কেসনিয়া ছোটবেলা থেকেই পুতিনকে চেনেন। পুতিন তাঁর ‘ধর্ম বাবা’। সেই কেসনিয়াকে গ্রেফতার করার জন্য খুঁজছে পুতিনেরই পুলিশবাহিনী।
রুশ তদন্তকারীরা মস্কোয় কেসনিয়ার বিলাসবহুল বাড়িতে অভিযান চালানোর কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি রাশিয়া থেকে বেলারুশ পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি চলে গিয়েছেন লিথুয়ানিয়া।
কেসনিয়া রাশিয়ার অন্যতম পরিচিত মুখ এবং তিনি রাশিয়ার একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের মালিক। এই সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি পুতিনের গোয়েন্দাদের নজরে পড়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কেসনিয়ার মিডিয়া সংস্থার অন্যতম অংশীদার কিরিল সুখানভ সম্প্রতি তোলাবাজির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এর পর কেসনিয়ার বাড়িতেও তল্লাশি শুরু হয়।
যদিও কেসনিয়ার দাবি, তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি সর্বৈব মিথ্যা। স্বাধীন গণমাধ্যমকে দমন করার জন্যই রুশ সরকার পুলিশকে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গুজব ছড়িয়েছে কেসনিয়া যদি ধরা পড়েন, তা হলে তাঁকে ১৫ বছর পর্যন্ত জেলবন্দি থাকতে হতে পারে। আর সেই কারণেই নাকি তিনি দেশ ছেড়েছেন।
কেসনিয়া রুশ তদন্তকারীদের চোখে ধুলো দিতে তুরস্ক এবং দুবাইয়ের টিকিট কাটেন। কিন্তু সেই পথে তিনি যাননি।
বিমানের বদলে গাড়িতে চেপে বেলারুশ যান কেসনিয়া। পরে ইজরায়েলি পাসপোর্ট ব্যবহার করে লিথুয়ানিয়ায় চলে যান তিনি।
প্রসঙ্গত, কেসনিয়াকে মস্কোর ‘প্যারিস হিলটন’ বলা হয়। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি এক জন জনপ্রিয় টিভি সঞ্চালক ছিলেন। প্লেবয় পত্রিকার জন্য তিনি মডেলের কাজও করেছেন।
বিতর্কিত টিভি শো ‘বিগ বসের’ রাশিয়ান সংস্করণে দীর্ঘ দিন সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কেসনিয়া। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পুতিনের বিরুদ্ধে এক জন উদারপন্থী প্রার্থী হিসাবে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।
কেসনিয়ার বাবা আনাতোলি সোবচাক ছিলেন পুতিনের অধ্যাপক এবং পরামর্শদাতা। পুতিনকে রাজনীতিতে আনার ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আর এই সব কারণেই কেসনিয়ার প্রতি পুতিনের বিশেষ টান আছে বলে মনে করা হয়।
তাই রাশিয়ার পুলিশ কেসনিয়াকে গ্রেফতার করতে উঠেপড়ে লাগলেও অনেকের মতে পালিতা কন্যাকে গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচাতে নিজেই দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন পুতিন।