তিন দশকের বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন বলিপাড়ায়। এই সময়কালে একশোটিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। নব্বইয়ের দশকে বলিউডের প্রথম সারির খলনায়ক হিসাবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেনমুকেশ সিংহ ঋষি। এখন বড় পর্দা থেকে দূরে সরে গিয়ে কী করছেন তিনি?
বলিউডে পা রেখেই খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন মুকেশ। ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খন্না, অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে সানি দেওল, সঞ্জয় দত্ত, গোবিন্দ, আমির খান, হৃতিক রোশনের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
তবে তিন দশক ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পরেও বলিপাড়ার কোনও তারকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেননি মুকেশ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মুকেশ স্বীকার করেন যে, বলিউডের কোনও দলের অংশ হতে পারতেন না তিনি। এমনকি নিজে থেকে কোনও তারকার সঙ্গে গিয়ে বন্ধুত্বও করেননি তিনি।
সাক্ষাৎকারে মুকেশ বলেন, ‘‘আমি শুটিং করতে যেতাম। সেখানে ঊর্ধ্বতনদের সব সময় শ্রদ্ধা করেই এসেছি। যাঁদের শ্রদ্ধা করব, তাঁদের পরিচয় আবার নিজের বন্ধু হিসাবেও দেব— এই দুটো জিনিস তো একসঙ্গে করা যায় না। আজ আমি বলতে পারি না ধর্মেন্দ্র আমার বন্ধু। তাঁকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি।’’
মুকেশ জানান, শুটিংয়ের পর সেটে উপস্থিত অন্যান্য তারকা নিজেদের মধ্যে গল্প করতেন, মদ্যপান করতেন। এ ভাবে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হত। কিন্তু মুকেশ শুটিং শেষে সব সময় বাড়ি ফিরে যেতেন। বাড়ি গিয়ে শরীরচর্চার জন্য জিমের উদ্দেশে রওনা দিতেন তিনি।
মুকেশের মন্তব্য, ‘‘কোনও তারকা পার্টি দিলে সেখানে সকলে মিলে যেতেন। আমাকেও যে ডাকা হত না তা নয়। কিন্তু আমি যেতাম না। বড় বড় তারকার চলন-বলনও এক এক রকম। বন্ধুত্বের অর্থ জানি আমি। আমার কোনও দলে অংশগ্রহণ করতে ভাল লাগত না।’’
মুকেশের দাবি, তাঁর পুত্র রাঘব ঋষি বন্ধুদের নিয়ে মুম্বইয়ের এক রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। কাকতালীয় ভাবে সেই রেস্তরাঁয় উপস্থিত ছিলেন বলি অভিনেতা সোহেল খানও। কোনও ভাবে সোহেল জানতে পারেন যে, মুকেশ-পুত্রও সেখানে উপস্থিত রয়েছেন। মুকেশ জানান, রাঘবের যা বিল হয়েছিল তার পুরোটাই কাউকে না জানিয়ে মিটিয়ে দিয়েছিলেন সোহেল। মুকেশ বলেন, ‘‘সোহেল যা করল তা যদি বন্ধুত্ব না হয় তা হলে আর কী! এখনও আমার সঙ্গে আমির খানের দেখা হলে আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলি। ছবিতে অভিনয় করি না ঠিকই, কিন্তু সম্পর্কগুলো ঠিক একই রকম রয়েছে।’’
১৯৫৬ সালে ১৯ এপ্রিল জম্মু এবং কাশ্মীরে জন্ম মুকেশের। চণ্ডীগড়ের একটি কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করার পর কাজের সন্ধানে চণ্ডীগড় থেকে সোজা মুম্বই চলে যান তিনি।
মুম্বইয়ে গিয়ে পাথর ভাঙার কারখানায় কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হন মুকেশ। দু’বছর কারখানায় কাজ করার পর কাজের উদ্দেশেই ফিজি যান তিনি। ফিজিতে গিয়ে জীবন অন্য দিকে মোড় নেয় মুকেশের। তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় কেশনী নামে এক মহিলার।
ফিজিতে যাওয়ার পর কেশনীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মুকেশের। সেই বন্ধুত্ব প্রেমে গড়াতে বেশি সময়ও নেয়নি। কেশনীর পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে ফিজিতে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চালাতেন। ফিজিতে গিয়ে আর্থিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ভালই রোজগার করতে শুরু করেন মুকেশ।
কেশনীকে বিয়ের পর ফিজি থেকে নিউ জ়িল্যান্ড চলে যান মুকেশ। সেখানে গিয়ে মডেল হিসাবে কাজ করা শুরু করেন। নিজের পেশাগত জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না মুকেশ। প্রায় সাত বছর ধরে নিউ জ়িল্যান্ডে ছিলেন তিনি। মডেলিং নিয়ে মুকেশ এতটাই আশাহত হয়ে পড়েছিলেন যে, সব ছেড়ে আবার ভারতে ফিরে যান তিনি।
দুই সন্তান এবং স্ত্রী-সহ নিউ জ়িল্যান্ড থেকে ভারতে ফিরে আসেন মুকেশ। মুম্বইয়ে গিয়ে বলি পরিচালক রোশন তানেজার অভিনয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন তিনি।
১৯৯০ সালে ‘দ্য সোর্ড অফ টিপু সুলতান’ ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয় করেন মুকেশ। তার দু’বছর পর ১৯৯২ সালে ‘গন্ধর্ভম’ নামে একটি মালয়ালম ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু মুকেশ বলিপাড়ায় পরিচিতি পান যশ চোপ়ড়ার হাত ধরে।
১৯৯৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় যশ পরিচালিত ‘পরম্পরা’ ছবিটি। তারকাখচিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সুনীল দত্ত, বিনোদ খন্না, আমির খান, সইফ আলি খান, নীলম, রবিনা টন্ডনের মতো বলি তারকারা। তবে এই ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন মুকেশ।
তার পর একের পর এক হিন্দি ছবির প্রস্তাব পেতে থাকেন মুকেশ। ‘বাজি’, ‘সাজন চলে সসুরাল’, ‘লোফার’, ‘জুড়ওয়া’, ‘গুন্ডা’, ‘সরফরোশ’, ‘সূর্যবংশম’, ‘পুকার’, ‘কোই...মিল গয়া’, ‘খিলাড়ি ৭৮৬’-এর মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
শুধুমাত্র হিন্দি ছবিতেই নয়, তার পাশাপাশি তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড়, পঞ্জাবি, ভোজপুরি, তামিল, মরাঠি ভাষার ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে মুকেশকে। বলিপাড়ার পাশাপাশি দক্ষিণী ফিল্মজগতেও নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন তিনি।
বর্তমানে অভিনয়জগৎ থেকে ধীরে ধীরে সরে গিয়েছেন মুকেশ। এক সময় খলনায়কের মূল চরিত্রে অভিনয় করলেও এখন বড় পর্দায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
সব ছবি: সংগৃহীত।