Uttarkashi Tunnel Collapse

‘মঙ্গল’ হল মঙ্গলবারেই! কেমন ছিল উৎকণ্ঠার ১৭ দিন? এক নজরে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ-যুদ্ধ

১৭ দিন আগে আটকে পড়েছিলেন উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে। অনেক অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক, আশঙ্কা শেষে সেই সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ কর্মী। ‘মঙ্গল’বারেই অবসান হল ১৭ দিনের টানা উৎকণ্ঠার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
উত্তরকাশী শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ২০:১৬
০১ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

১৭ দিন আগে আটকে পড়েছিলেন উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে। অনেক অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক, আশঙ্কা শেষে সেই সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ কর্মী বেরিয়ে এলেন। ১৭ দিনের উৎকণ্ঠার শেষে ‘মঙ্গল’ হল মঙ্গলবারেই। কান্না-হাসি-আনন্দের মধ্যে মুক্তি উদ্‌যাপন করতে দেখা গেল তাঁদের। যুদ্ধ জয়ের হাসি উদ্ধারকর্মীদের চোখেমুখেও। কারও চোখে চিকচিক করছে আনন্দাশ্রু।

০২ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

১২ নভেম্বর। উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে কাজ করছিলেন শ্রমিকদের একটি দল।

০৩ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ধস নামার আওয়াজ পান কর্মীরা। ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ। অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে পড়েন ৪১ জন কর্মী। আটকে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের তিন বাসিন্দাও।

Advertisement
০৪ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় প্রশাসন। আটকে পড়া কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে খবর দিয়ে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় বাহিনী। উদ্ধারকাজে হাত লাগান ইন্দো-টিবেটান পুলিশ এবং বর্ডার রোডওয়েজ়ের বাহিনীও। লড়াই শুরু হয় সুড়ঙ্গের দু’প্রান্তে। এক প্রান্তে কর্মীদের সুস্থ ভাবে উদ্ধার করার লড়াই। অন্য প্রান্তে অন্ধকার সুড়ঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই।

০৫ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

উদ্ধারকাজের প্রথম পর্যায়েই ধাক্কা খান উদ্ধারকারীরা। তিন দিনের মাথায় উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে পাইপ ঢোকাতে গিয়ে বিপত্তি বাধে। নতুন করে ধসও নামে। উদ্ধারকারী দলের দু’জন সদস্য জখম হন। থমকে যায় উদ্ধারকাজ। দিল্লি থেকে নতুন যন্ত্র এনে আবার উদ্ধারকাজ শুরু হয়।

Advertisement
০৬ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

তবে পাইপের মাধ্যমে আটকে থাকা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন উদ্ধারকারীরা। পাইপের মাধ্যমেই পৌঁছে দেওয়া হয় খাবার-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য।

০৭ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

ঘটনার ৯৬ ঘণ্টা পরেও যখন আটকে থাকা কর্মীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, তখন উদ্ধারকারীরাও বুঝতে পারেন, কাজটা ততটাও সহজ হবে না। আটকে থাকা কর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়েও ক্রমশ উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

Advertisement
০৮ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

সুড়ঙ্গে আটকে পড়া কর্মীদের খাবারদাবার, ওষুধপত্র-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার পাশাপাশি তাঁদের মনোবল অটুট রাখতেও নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন উদ্ধারকারীরা। কথা বলিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের সঙ্গেও। অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়।

০৯ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

দিল্লি থেকে আনা যন্ত্র দিয়ে খননকাজ করার প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ার পর উদ্ধারকাজে গতি আনতে নিয়ে আসা হয় আমেরিকার অত্যাধুনিক খননযন্ত্র ‘অগার’কে। কিন্তু সুড়ঙ্গ এলাকায় নতুন করে ধস নামায় এই যন্ত্রটিকে প্রথমে পরিকল্পনা মতো কাজে লাগাতে পারেননি উদ্ধারকারীরা।

১০ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

২০১৮ সালের জুন মাসে তাইল্যান্ডের একটি গুহা বন্যার জলে ভেসে যাওয়ায় আটকে পড়েন ১২ জন খুদে ফুটবলার এবং তাদের কোচ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাদের উদ্ধার করে এনে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয় তাইল্যান্ডের ওই উদ্ধারকারী সংস্থা। শ্রমিকদের নিরাপদে উদ্ধার করে আনতে তাইল্যান্ডের সেই সংস্থাকেও ডেকে পাঠায় উত্তরাখণ্ড সরকার। ডেকে পাঠানো হয় নরওয়ের এক সংস্থাকেও। ক্রমেই সুড়ঙ্গের মুখের পাথর সরিয়ে সরিয়ে সুড়ঙ্গের আরও অন্দরে ঢুকতে শুরু করেন উদ্ধারকারীরা।

১১ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

আশার ক্ষীণ আলো দেখতে শুরু করে প্রশাসন। কিন্তু আবার আসে বিপদ। ছ’দিনের মাথায় আবার ধস নামে সুড়ঙ্গে। ১৭ নভেম্বর দুপুরে খননযন্ত্র দিয়ে সুড়ঙ্গের মুখে আটকে থাকা পাথর সরিয়ে পঞ্চম পাইপ ঢোকানোর সময় ফাটল ধরার শব্দ পান উদ্ধারকারীরা। ধস নামের আশঙ্কায় আবার থেমে যায় উদ্ধারকাজ।

১২ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে তা ঠিক করতে বিশেষজ্ঞদের একটি বৈঠক ডাকা হয়। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আলাপ-আলোচনার পর উদ্ধারকাজ আবার থেমে যায়।

১৩ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

তত দিনে শ্রমিকদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে, সেই ছক বানিয়ে ফেলেছিলেন উদ্ধারকারীরা। ভাঙা সুড়ঙ্গে ধসে যাওয়া পাথরে ছিদ্র করে একটি পাইপ ঢুকিয়ে শ্রমিকদের বার করে আনার পরিকল্পনা করা হয়।

১৪ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আটকে পড়া কর্মীদের উদ্ধার করতে গর্ত তৈরি করে সেই গর্তে ৮০০ এবং ৯০০ মিলিমিটার ব্যাসের একটি পাইপ ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। সেই গর্ত দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসবেন কর্মীরা। কিন্তু যেমন পরিকল্পনা উদ্ধারকারীরা করেছিলেন, তেমনটা হয়নি।

১৫ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

পাইপ ঢোকানোর জন্য শক্ত পাথরের স্তূপে গর্ত করার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অত্যাধুনিক অগার যন্ত্র। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে কর্মীদের আটকে থাকার ছ’দিন পার হয়ে যাওয়ার পর অন্য উপায়ে উদ্ধারকাজ চালানোর কথা ভাবে প্রশাসন। সামনের দিক থেকে অনেক চেষ্টা করেও বার বার বাধা আসায় উপর দিক থেকেও খননকার্য চালিয়ে ভাঙা সুড়ঙ্গের ভিতরে পৌঁছনো যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন উদ্ধারকারীরা।

১৬ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

ইনদওর থেকে আরও একটি বিশেষ খননযন্ত্র আনানো হয়। কিন্তু আট দিন পেরিয়েও কর্মীদের উদ্ধার করা সম্ভব না হলে, উদ্বেগ বাড়তে থাকে পরিবারগুলির। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পাইপের মাধ্যমে কথা বললেও চিন্তা কমেনি। সুড়ঙ্গের বাইরে চলতে থাকে পুজো, অর্চনা, প্রার্থনা। প্রশাসনের তরফে সাংবাদিকদের জানানো হয়, সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রত্যেক শ্রমিকই সুস্থ আছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ এক বারের জন্যেও বিচ্ছিন্ন হয়নি। দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

১৭ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

সেই সময় সুড়ঙ্গ তৈরিতে একটি গাফিলতিও প্রকাশ্যে আসে। নিয়ম মেনে তিন কিলোমিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের সুড়ঙ্গে একটি বিশেষ নির্গমন পথ (এসকেপ রুট) থাকার কথা। সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ তৈরির আগেও সে রকম ‘এসকেপ রুট’-এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর করা হয়নি। সুড়ঙ্গের মানচিত্র থেকে তা স্পষ্ট হয়।

১৮ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

শ্রমিকদের পরিবারের অভিযোগ ছিল, ‘এসকেপ রুট’ না থাকার কারণেই উত্তরাখণ্ডে উদ্ধারকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। সেই ‘এসকেপ রুট’ সুড়ঙ্গে তৈরি করা হলে এত দিন ধরে আটকে থাকতে হত না শ্রমিকদের। উদ্ধারকাজে দেরি হওয়ায় অন্যান্য শ্রমিকেরা ঘটনাস্থলে বিক্ষোভও দেখান। তাঁদের দাবি ছিল, দ্রুত উদ্ধার করে আনতে হবে ওই ৪১ জনকে। দেরি হওয়ার নেপথ্যে প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করেন কেউ কেউ। প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগানও ওঠে।

১৯ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

সেই সব অভিযোগ দূরে সরিয়ে উদ্ধারকাজে মন দেয় প্রশাসন। উদ্ধারকাজের আট দিনের মাথায় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই উদ্ধার করে আনা যাবে ৪১ জন কর্মীকে। কিন্তু ন’দিনের মাথায় জানানো হয়, অপেক্ষা দীর্ঘও হতে পারে। শুরু হয় ধৈর্যের পরীক্ষা।

২০ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

অন্য দিকে, প্রথমের দিকে আটকে থাকা শ্রমিকদের তরল খাবার দেওয়া হলেও পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁদের মেনুতে বদল আসে। তাঁদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার বন্দোবস্ত করে উত্তরাখণ্ড সরকার। শ্রমিকদের নিয়মিত খাবার দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয় রাঁধুনিদের একটি দল। সেই দলে ছিলেন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদও। তাঁদের পরামর্শ মেনে এবং সমস্ত নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেই শ্রমিকদের কখন, কী খাবার কখন পাঠানো হবে, তার বিশদ তালিকা প্রস্তুত করেন রাঁধুনিরা। ভাঙা সুড়ঙ্গের কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, খিচুড়ি, লুচি, পোলাও, পনির। শ্রমিকদের জন্য মনোবিদের ব্যবস্থাও করা হয়।

২১ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

ন’দিনের মাথাতেও যখন ৪১ জনকে উদ্ধার করা যায়নি, তখন উদ্ধারকাজে হাত লাগায় ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও। অভিযানে গতি আনতে ঘটনাস্থলে আনা হয় ডিআরডিও-র ‘রিমোট অপারেটেড ভেহিকল (আরওভি)’ দক্ষকে। যা ঝুঁকিপূর্ণ ভূখণ্ডে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

২২ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের প্রথম ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে ২১ নভেম্বর সকালে। ৪১ কর্মীর সুড়ঙ্গে আটকে থাকার ১০ দিনের মাথায়। পাইপের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছে এন্ডোস্কোপিক ফ্লেক্সি ক্যামেরা পাঠিয়ে সুড়ঙ্গের অন্দরের ছবি তুলে আনা হয়। সেই ভিডিয়োর শুরুতেই সুড়ঙ্গ-মুখ দিয়ে কয়েক জন শ্রমিককে উঁকি মারতে দেখা গিয়েছিল। উদ্ধারকার্য চলার সময় একাধিক বার ঘটনাস্থলে আসেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। উদ্ধারকাজ বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ দলও। পরিস্থিতি নিয়ে ধামীর সঙ্গে একাধিক বার কথা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।

২৩ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

উত্তরকাশীর উদ্ধারকাজে দায়িত্বে আসে আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞদের একটি দলও। তার নেতৃত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা আর্নল্ড ডিক্স। তাঁর তত্ত্বাবধানেই উদ্ধারকাজ গতি পায় উত্তরকাশীতে। সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ডিক্সের। পৃথিবীর যে প্রান্তেই সুড়ঙ্গে বিপদ আসুক, ডিক্স সেখানেই হাজির হয়ে যান তাঁর দলবল নিয়ে। সাফল্য না মেলা পর্যন্ত হার মানেন না সহজে। উত্তরকাশীর ক্ষেত্রেও হার মানেননি।

২৪ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

১১ দিনের মাথায় উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের উদ্ধারে ডাক পড়ে কোল ইন্ডিয়ার। কয়লা মন্ত্রকের নির্দেশ পাওয়ার পরই ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন কোল ইন্ডিয়ার অধিকর্তা। ১৯৮৯ সালে রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারিতে কয়েকশো ফুট নীচে খনিতে আটকে থাকা ৬৫ জন খনি শ্রমিককে তিন দিন পর যে ভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়। পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ় অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)’ও। উদ্ধারকাজের দায়িত্বে ছিল মোট পাঁচটি সংস্থা— ওএনজিসি, এসজেভিএনএল, আরভিএনএল, এনএইচআইডসিএল এবং টিএইচডিসিএল।

২৫ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার ১১ দিনের মাথায় খুশির খবর শোনায় প্রশাসন। জানানো হয়, আর মাত্র ১০ মিটার খোঁড়া হয়ে গেলেই বার করে আনা সম্ভব হবে ৪১ জনকে। তবে সেই ১০ মিটার খুঁড়তেই বার বার হোঁচট খেতে হয় উদ্ধারকারীদের।

২৬ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

এক দিন পরে অর্থাৎ, ১২ দিনের মাথায় জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় কার্যত কোনও খনন কাজই হয়নি। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ধ্বংসস্তূপ খুঁড়তে খুঁড়তে আচমকা সামনে লোহার রড চলে আসে। খননযন্ত্র দিয়ে তা সরানো যায়নি। ফলে উদ্ধারকাজ বাধা পায়। রডটি কাটতে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকারীদের। টানা খুঁড়তে খুঁড়তে যন্ত্র অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কারণেও বন্ধ হয় উদ্ধারকাজ। আটকে থাকার ১২ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ আরও বাড়তে থাকে পরিবারের। শোকে কোনও কোনও কর্মীর মা-বাবার অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরও প্রকাশ্যে আসে।

২৭ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

আশা ছাড়েননি উদ্ধারকারীরা। শীঘ্রই উদ্ধারকাজ শেষ হবে সেই আশায় সুড়ঙ্গের বাইরে তৈরি রাখা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। ঘটনাস্থলে অস্থায়ী স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়। তৈরি রাখা হয় ৪১টি ‘বেড’। প্রথমের দিকে প্রশাসন ‘আজ উদ্ধার হবে, কাল উদ্ধার হবে’ করলেও ১৩ দিনের মাথায় জানায়, শ্রমিকদের কবে বার করে আনা যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন প্রশাসনিক কর্তারা।

২৮ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

এর আগে উত্তরাখণ্ডের প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছিলেন, ২৩ নভেম্বর সকালের মধ্যেই বার করে আনা হবে আটকে থাকা শ্রমিকদের। কিন্তু তা করা যায়নি। ২২ নভেম্বর রাতে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়তে খুঁড়তে আচমকা আবার লোহার রড সামনে চলে আসে। খননযন্ত্র দিয়ে তা সরানো যায়নি। রড কেটে রাস্তা ফাঁকা করতে অনেক সময় লেগে যায়। টানা খুঁড়তে খুঁড়তে খননযন্ত্রও অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে। ফলে তা ঠান্ডা করার জন্য সময় লেগে যায়।

২৯ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বাহিনীর আধিকারিক সৈয়দ আতা হাসনাইন জানান, আটকে পড়া কর্মীদের বার করে আনতে অনুভূমিক ভাবে যে উদ্ধারকাজ চলছে, তা আরও তিন-চার বার বাধার মুখে পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি। নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। যুদ্ধে আপনি জানেন না শত্রু কী করতে চলেছে। এখানে মাটি আপনার শত্রু। হিমালয়ের ভূতত্ত্ব শত্রু। এটা একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়।’’

৩০ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার এবং শনিবারও একই সমস্যার মুখে পড়তে হয় উদ্ধারকারীদের। আমেরিকান অগার যন্ত্রটি ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। পাথরে আটকে থেকে যায় যন্ত্রের টুকরো। আবার স্বপ্নভঙ্গ হয় উদ্ধারকারীদের। এর পর আবার উল্লম্ব ভাবে খননকাজ চালানোর কথা ভাবতে শুরু করেন উদ্ধারকারীরা। সে রকম ভাবে কাজও শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজ আরও ১০-১২ দিন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে অনুভূমিক ভাবে শাবল, গাঁইতি দিয়েও খোঁড়ার কাজ চালাতে থাকেন উদ্ধারকারীদের একাংশ।

৩১ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

রবিবারেও সাফল্য না আসায় উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করতে নতুন কৌশল অবলম্বন করা হয় সোমবার। শুরু হয় ‘র‌্যাট-হোল মাইনিং’। বিভিন্ন খনি থেকে কাঁচামাল উত্তোলনের জন্য ‘ইঁদুরের গর্ত’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। বিশেষত কয়লাখনিতে নিষিদ্ধ এই প্রক্রিয়া খুবই পরিচিত। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ শ্রমিকেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খনিতে নামেন। তাঁরা অল্প জায়গা নিয়ে সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চলেন। ঠিক যেমন করে গর্ত খোঁড়ে ইঁদুর। প্রয়োজনীয় কয়লা তুলে আবার ওই একই পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের বার করতে সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয়।

৩২ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

‘ইঁদুরের গর্ত খনন’-এর জন্য ১২ জন বিশেষজ্ঞ খনিশ্রমিককে উদ্ধারস্থলে আনা হয়। তাঁরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এগিয়ে যান। সুড়ঙ্গের ভিতরে পৌঁছে এক দল দেওয়াল খোঁড়ার কাজ শুরু করে, অন্য দল সেই ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করে এবং তৃতীয় এক দল চাকা লাগানো গাড়িতে ধ্বংসস্তূপ তুলে দেয়। সেই গাড়ি ধ্বংসস্তূপ বহন করে সুড়ঙ্গের বাইরে নিয়ে আসে।

৩৩ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

এই পদ্ধতিতেই কাজে লাগিয়ে সোমবার থেকে টানা খননকাজ চালাতে থাকেন উদ্ধারকারীরা। সেই পদ্ধতিতেই সাফল্য এল। মঙ্গলবার সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন ৪১ কর্মী। ১৭ দিনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন তাঁরা।

৩৪ ৩৪
Timeline of Uttarkashi Tunnel Collapse rescue operation

এই ১৭ দিনে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ কর্মীদের উদ্ধার করতে গিয়ে বহু বার বাধার মুখে পড়তে হয় উদ্ধারকারীদের। পদে পদে বিপদে পড়েন তাঁরা। তবে লড়াই থেমে থাকেনি উদ্ধারকারীদের। বেঁচে থাকার জন্য লাগাতার যুদ্ধ চালিয়েছেন ওই ৪১ কর্মীও। সেই যুদ্ধে জিতে গেলেন দু’পক্ষই।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি