malagana treasure

খেতের নীচে চাপা ছিল কয়েকশো কেজি সোনা! গুপ্তধনের লোভে প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস করে লুটেরাদের দল

কলম্বিয়ার কাউকা উপত্যকার পালমিরা অঞ্চলে অবস্থিত হ্যাসিন্ডা মালাগানায় এক আখ খামারের শ্রমিক আচমকাই খুঁজে পান কুবেরের ভান্ডার। নতুন আবিষ্কৃত সমাধি থেকে অমূল্য, প্রাচীন সোনার নিদর্শনগুলি বিক্রি করে দিতে শুরু করে দেন তিনি। আর তাতেই ঘনায় বিপদ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৫
০১ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

আখের খেতে কাজ করছিলেন এক শ্রমিক। হঠাৎ করেই যেন ভূমিকম্প শুরু হল সেই খেতে। ট্রাক্টরসমেত সোজা পাতালে প্রবেশ করলেন তিনি। আঘাত লাগলেও প্রাণে বেঁচে যান। চোট-আঘাত সামলে ওঠার পর তাঁর চোখের সামনে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে অদ্ভুত এক দুনিয়া।

০২ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

এ দিক-ও দিক খোঁজাখুঁজি করতেই তাঁর নজরে পড়ে ইতিউতি সোনালি ঝলক। সন্দেহ হতে ভাল করে খোঁজার পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান সেই শ্রমিক। তাঁর চোখের সামনে ছড়িয়ে রয়েছে কুবেরের ধন! সেই সম্পত্তি একা ভোগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন ওই আখ-শ্রমিক।

০৩ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

ঠিক যেন আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্প। মূল্যবান সোনার জিনিসপত্র ধীরে ধীরে নিজের বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করলেন ওই শ্রমিক। সব সম্পদ একাই ভোগ করার মতলব এঁটেছিলেন তিনি। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে, সেটি কলম্বিয়ার অজানা আদিবাসী সংস্কৃতির একটি সমাধি। এদের হাইপোজ়িয়াম বলা হত। সাধারণত এগুলি সমাধিস্থল বা উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হত প্রাচীন সভ্যতায়।

Advertisement
০৪ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

নতুন আবিষ্কৃত সমাধি থেকে অমূল্য, প্রাচীন সোনার নিদর্শনগুলি বিক্রি করে দিতে শুরু করেন ওই শ্রমিক। আর তাতেই ঘনায় বিপদ। তাঁর আবিষ্কৃত এই গুপ্ত সমাধির খবর অচিরেই ফাঁস হয়ে যায়। আখের খেতে গুপ্তধন পুঁতে রাখা হয়েছে, খবরটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লুটপাট।

০৫ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

ঘটনাটি ১৯৯২ সালের। কলম্বিয়ার কাউকা উপত্যকার পালমিরা অঞ্চলে অবস্থিত হ্যাসিন্ডা মালাগানায় এক আখের খামারে। ১৯৯২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সোনা সন্ধানকারীদের একাধিক দল হ্যাসিন্ডা মালাগানার আখের খেতে এসে পৌঁছোয়। সংবাদপত্রের বিবরণ অনুসারে, সোনা ও গুপ্তধন লুটেরাদের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার।

Advertisement
০৬ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও সোনা লুণ্ঠন ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলে। বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় প্রশাসন। তাঁদের চোখের সামনে দিয়ে হাইপোজ়িয়ামটি নির্মম ভাবে এবং সম্পূর্ণ রূপে লুট করা হয়। সেই ঘটনায় এক জন খুনও হয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। গুপ্তধন অনুসন্ধানকারীরা অসংখ্য নিদর্শন নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল শত শত সমাধি।

০৭ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

এক একটি স্বর্ণনির্মিত মূর্তি বা পাতের ওজন ছিল কমপক্ষে ১৬০ কেজি। আবার কয়েকটি সূত্র বলছে, খাঁটি সোনার নিদর্শনগুলির ওজন ১৪০ কেজি থেকে ১৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ১৯৯২ সালের শেষের দিকে বোগোটার জাদুঘরে অপরিচিত নকশায় তৈরি সোনার জিনিসপত্রের এক চিত্তাকর্ষক ভান্ডার তৈরি হয়। এই নিদর্শনগুলির উৎস ছিল মালাগানার এই বহুচর্চিত আখের খেতের নীচে থাকা হাইপোজ়িয়ামটি।

Advertisement
০৮ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে কর্তৃপক্ষ মালাগানায় লুটপাটের বিষয়ে সতর্ক হয়। মার্চ মাস থেকে ‘ইনস্টিটিউটো ভ্যালেকাউকানো ডি ইনভেস্টিগেসিওনেস সিয়েন্টিফিকাস’ এবং ‘ইনস্টিটিউটো কলম্বিয়ানো ডি অ্যান্ট্রোপোলজিয়া’-এর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা যুগ্ম ভাবে স্থানটি খনন করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই কাজও ব্যাহত হয় লুটেরাদের জন্য।

০৯ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

প্রত্নতাত্ত্বিক মারিয়ান কারডেল ডি শ্রিমফের নেতৃত্বে একটি দল তৈরি করে তৎকালীন সরকার। যেটুকু গবেষণা চালানো সম্ভব হয়েছিল তা থেকে জানা যায়, এই স্থানে ‘মালাগানা-সোনসয়েড’ নামে একটি অজানা জাতি থাকত। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল এই সভ্যতা।

১০ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

যে হেতু সমাধিস্থানটিই মূলত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, গবেষকেরা তাঁদের গবেষণা চালানোর জন্য প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একটি আবাসিক এলাকার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। সেখানে খননকার্য চালানোর পর গবেষকেরা মোটামুটি একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

১১ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

দীর্ঘ এবং জটিল স্তরবিন্যাস, ১৭টি সমাধি এবং কার্বন ডেটিংয়ের সাহায্য নিয়ে এই আদিম সংস্কৃতির চারটি সময়কালকে ‘প্রোটো-ইলামা’ (প্রাচীনতম সময়কাল), ‘ইলামা’, ‘মালাগানা’, এবং ‘সোনসয়েড’ এই চার ভাগে ভাগ করা হয়।

১২ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

প্রধান কবরস্থানের সমাধি থেকে চুরি যাওয়া নিদর্শনগুলি যতটা সম্ভব খুঁজে বার করে পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি অভিযান শুরু করেন হ্যাসিন্ডা মালাগানার জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। এই প্রচেষ্টার ফলে ১৫০টিরও বেশি মূল্যবান জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। সোনার জিনিসপত্রগুলি দেখতে অসাধারণ। যাঁরা এগুলি তৈরি করেছিলেন তাঁদের সম্পর্কে বিশেষ তথ্য পাওয়া যায়নি সমাধিগুলি ধ্বংস করে ফেলার ফলে।

১৩ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

জিনিসপত্র যত্ন সহকারে পরীক্ষা করেও নিদর্শনগুলি সম্পর্কে কিছু আংশিক তথ্য পাওয়া যায়। তবে অতীতের সূত্র জোড়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রকৃত মূল্য বোঝা সম্ভব হয়নি আজও।

১৪ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

জাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলির মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ সোনার যন্ত্র। প্রাচীন কলম্বিয়ার পুরুষেরা তাঁদের মুখের লোম অপসারণের জন্য এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতেন বলে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন। সোনার তৈরি যন্ত্রটি হয়তো আচার-অনুষ্ঠান বা অনুষ্ঠানের সময়ও ব্যবহার করা হত। এই ধরনের যন্ত্রের একাধিক সংস্করণ প্রতি দিন ব্যবহার করা হত।

১৫ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

স্বতন্ত্র মূর্তিনির্মাণ শৈলীর অধিকারী মালাগানার অধিবাসীরা সূক্ষ্ম সেরামিকের কাজে পারদর্শী ছিলেন বলে মনে করা হয়। সেই শিল্প নিদর্শনগুলির বেশির ভাগই সাদা বা টেরাকোটা রঙের। তাঁরা বড় বোতল, পাত্র এবং বাদ্যযন্ত্র, ওকারিনা তৈরি করতেন। লুটপাটের প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতিবেদন এবং জাদুঘরে থাকা অবশিষ্ট নিদর্শনগুলি বিবেচনা করে গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তাঁদের সোনা ও রুপোর কাজ স্পষ্টতই অসাধারণ ছিল।

১৬ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

মালাগানায় ৩ মিটার গভীর একটি আয়তক্ষেত্রাকার সমাধি আবিষ্কার করেন প্রত্নতাত্ত্বিকদলটি। সমাধিক্ষেত্রের মেঝেয় মৃতদেহটি সোজা করে রাখা ছিল। মুখে ছিল তিনটি বড় সোনার পাতার মুখোশ। সেগুলি একটি অন্যটির উপরে রাখা ছিল। ঘাড়ের অংশে নলাকার সোনার পুঁতি ও একটি ছোট সোনার পাখি ছিল। সমাধিতে পাওয়া গিয়েছে রঙিন পাথরের পুঁতির মালা, খোদাই করা পান্না।

১৭ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

প্রায় ৫০ মিটার লম্বা একটি সুতো তৈরি করা যায়, এমন ছোট পাথরের পুঁতিও ছিল সেখানে। ঘাড়ের অংশে এবং বুকের উপর এক সারিতে সোনার পুঁতিও মিলেছে। একটি সোনার পাতের মুখোশ দিয়ে মৃতদেহের পা ঢাকা দেওয়া ছিল। মৃতদেহের মাথার উপরে দেওয়ালের একটি কুলুঙ্গিতে দু’টি ইলামা-শৈলীর পাত্র ছিল।

১৮ ১৮
The story of the Malagana Treasure, gold and greed, a lost civilization in Colombia

বোগোটার ‘মিউজিও দেল ওরো’ জানিয়েছে যে, ১৯৯২ সালের শেষের দিকে মালাগানা থেকে লুট হওয়া কিছু সোনার জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল। প্রায় ১৫০ টুকরো মালাগানা সোনা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। প্রায় ৫০ কোটি পেসো (তৎকালীন মূল্য তিন লক্ষ ডলার) খরচ করে লুণ্ঠনকারীদের থেকে নিদর্শনগুলি সংরক্ষণ করা হয়। উদ্ধার করা নিদর্শন এবং গবেষকদের তথ্যের ভিত্তিতে হাইপোজ়িয়াম থেকে ২৯টি মালাগানা সমাধি পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং প্রেক্ষাপট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি