
সম্পত্তির প্রাচুর্যে ডুবেছিলেন তরুণী। যশ-নাম-অর্থ কোনও কিছুর অভাব ছিল না তাঁর জীবনে। পপ তারকার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন দুবাইয়ের রাজকন্যা। কিন্তু পরিবারের কাছে সেই সত্য গোপন করতে ছ’মাস অন্য মানুষ হিসাবে জীবন কাটিয়েছিলেন। হঠাৎ এক দিন ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে যান রাজকুমারী।

১৯৬৪ সালের জুন মাসে ইংল্যান্ডে জন্ম স্টেডম্যান পিয়ারসনের। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ। নৃত্য এবং ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করার পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে ভাই-বোনদের নিয়ে ‘ফাইভ স্টার’ নামে একটি ব্যান্ড খোলেন স্টেডম্যান।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্টেডম্যানের ব্যান্ড জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যায়। ব্রিটেনে তাঁদের গানের অ্যালবামের বিক্রিও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে ১৯৮৯ সালে কোনও ভাবে দেউলিয়া হয়ে যান তাঁরা।

১৯৮৭ সালে বার্কশ্যায়ারে একটি প্রাসাদ কিনেছিলেন স্টেডম্যান। দু’বছর পর স্টেডম্যান তাঁর পরিবার নিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর আমেরিকায় গিয়ে আবার নতুন ভাবে গান নিয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন স্টেডম্যান। সেই সময় তাঁর জীবনে এক নারীর আবির্ভাব হয়েছিল।

কানাঘুষো শোনা যায়, আরব সম্রাট শেখ মকতৌম বিন রশিদ আল মকতৌমের কন্যা হেসা আল মকতৌমের প্রেমে পড়েছিলেন স্টেডম্যান। দুবাইয়ের রাজকন্যা ছিলেন তিনি। তাঁদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়ে গেলে বিপদের আশঙ্কা ছিল। তাই গোপনে সম্পর্কে বজায় রেখেছিলেন তাঁরা।

দুবাই থেকে মাঝেমধ্যেই ইংল্যান্ড সফরে যেতেন হেসা। সেখানেই স্টেডম্যানের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। প্রথম আলাপ প্রেমের সম্পর্কে গড়াতে বেশি সময় নেয়নি। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসে বিয়ে করেন তাঁরা।

রাজকন্যার সঙ্গে জনপ্রিয় পপ তারকার বিয়ে বলে কথা! কিন্তু স্টেডম্যান এবং হেসার বিয়েতে কোনও আড়ম্বর ছিল না। বরং গোপনে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা।

জানা যায়, ফ্লোরি়ডার অরল্যান্ডোর অরেঞ্জ কাউন্টি এলাকার একটি সিভিল কোর্টে লুকিয়ে বিয়ে করেছিলেন স্টেডম্যান এবং হেসা। দুই পরিবারের কেউই জানতেন না তাঁদের বিয়ের কথা। স্টেডম্যানের এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, হেসার সঙ্গে ঘোরাঘুরি করলেও সহজে তাঁর পরিচয় দিতে চাইতেন না স্টেডম্যান।

গুঞ্জন শোনা যায়, বিয়ের পর স্টেডম্যান তাঁর কাছের বন্ধুদের সঙ্গে হেসার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর তিনি নাকি নির্দেশও দিয়েছিলেন, অন্য কাউকে তাঁদের বিয়ের কথা না জানাতে।

স্টেডম্যানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় থাকতে পারতেন না হেসা। পরিবারের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি ছ’মাস দুবাইয়ে গিয়ে ‘সিঙ্গল’ জীবন কাটাতেন। তার পরের ছ’মাস বাইরে ঘুরে বেড়াতেন।

হেসার পরিবারের সদস্যেরা জানতেন যে, তাঁদের কন্যা ছ’মাস নানা দেশের চলচ্চিত্র দেখবেন বলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সেই সময় স্টেডম্যানের সঙ্গে সময় কাটাতেন হেসা।

২০০৬ সালে মারা যান হেসার বাবা। বাবার মৃত্যুর দু’বছর পর হেসা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তাঁর সঙ্গে স্টেডম্যানের সম্পর্কের কথা জনসমক্ষে ঘোষণা করবেন। কিন্তু তাঁর আগে বাড়িতে তা নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন হেসা।

স্টেডম্যানের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে হেসাকে তাঁর পরিবার ত্যাজ্য করতে পারে সেই ভয়ে আগে থেকেই আইনের সাহায্য নিয়েছিলেন তরুণী। নিজের সম্পত্তি সুরক্ষিত করতে চেয়েছিলেন তিনি।

পরে শোনা যায়, হেসা নাকি তাঁর পরিবারের কাছে বিয়ের কথা জানাতে পারেননি। তার আগেই হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। স্টেডম্যানের কাছেও নাকি তাঁর সন্ধান ছিল না।

বিয়ের কথা জানাজানি হওয়ার ভয়ে হেসার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগও থানায় দায়ের করেননি স্টেডম্যান। চলতি বছরের মার্চ মাসে ৬০ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন পপ তারকা। তবে হেসা এখনও নিখোঁজ।
সব ছবি: সংগৃহীত।