mystery of sailing stone

মৃত্যু উপত্যকার ধু-ধু প্রান্তরে একাই চলেফিরে বেড়ায় মস্ত মস্ত পাথর! রহস্যভেদে চমকে যান বিজ্ঞানীরা

ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের পাহাড়চূড়ায় ‘রেসট্র্যাক প্লায়া’ নামে একটি শুষ্ক হ্রদ রয়েছে। এই শুষ্ক হ্রদে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির এমন কিছু রহস্যময় পাথর আছে, যেগুলো কারও সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায় বলে দাবি করা হয় কয়েক দশক ধরে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ১৭:২০
০১ ১৭
Death Valley National Park

গত এক শতক ধরে বিশ্বের ভয়াবহ জায়গাগুলির তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে এর নাম। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের নেভাদা সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাটি বিশ্বের শুষ্কতম অঞ্চল হিসাবে কুখ্যাত। ‘ডেথ ভ্যালি’ বা ‘মৃত্যু উপত্যকা’ হিসাবে পরিচিত এই এলাকা। আমেরিকার একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগর এসে মিশেছে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে, তারই অদূরে এক মরুভূমি অঞ্চল এটি।

০২ ১৭
Death Valley National Park

বাটির মতো দেখতে এই উপত্যকায় প্রাণ নেই বললেই চলে। বিশ্বের অন্যতম উষ্ণ স্থান এটি। দেখা মেলে না ছিটেফোঁটা সবুজের। নেই উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বাঁচার জন্য ন্যূনতম প্রাকৃতিক উপাদান। সামান্য যেটুকু জলের সন্ধান মেলে তা এতই লবণাক্ত যে সেখানে প্রাণের টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

০৩ ১৭
Death Valley National Park

প্রতিকূল আবহাওয়া ছাড়াও আরও একটি কারণে পৃথিবীসুদ্ধ লোকের নজর কেড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত এই প্রাণহীন উপত্যকাটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮২ ফুট নীচে অবস্থিত এই ঊষর মরুপ্রান্তরের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়ায় এক রহস্য। এখানকার ভারী পাথরের টুকরো নাকি নিজে থেকেই হেঁটেচলে বেড়ায় এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে!

Advertisement
০৪ ১৭
Death Valley National Park

ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের পাহাড়চূড়ায় ‘রেসট্র্যাক প্লায়া’ নামে একটি শুষ্ক হ্রদ রয়েছে। এই শুষ্ক হ্রদে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির এমন কিছু রহস্যময় পাথর আছে, যেগুলো কারও সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায় বলে দাবি করা হয় কয়েক দশক ধরে। চলমান ‘ভূতুড়ে পাথর’দের তৈরি করা ট্র্যাক থেকেই হ্রদটির নাম হয় রেসট্র্যাক প্লায়া।

০৫ ১৭
Death Valley National Park

রহস্যে ঘেরা এই মরুপ্রান্তরে দেখা গিয়েছে, বালির স্তরের বুক চিরে কেউ যেন চলে গিয়েছে। অথচ নেই কোনও মানুষ বা জন্তুর পায়ের ছাপ। টানা লম্বা ছাপগুলিকে দেখলে মনে হবে যেন কেউ একটি বড় পাথরের চাইঁ টেনে নিয়ে গিয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে, কেউ বুঝি পাথরগুলোকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে গিয়েছে। আশপাশে কোনও মানুষের পায়ের ছাপ তো দূরের কথা, অন্য কোনও কিছুরই ছাপের দেখা মেলে না। এক থেকে সাড়ে তিনশো কেজির পাথরকেও স্থান পরিবর্তন করতে দেখা গিয়েছে এই ভাবে।

Advertisement
০৬ ১৭
Death Valley National Park

এই রহস্যের অন্তরালে কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। রহস্যভেদ করতে কৌতূহলী মানুষ, গবেষক এবং বিজ্ঞানীরা বার বার সেখানে ছুটে গিয়েছেন পাথরগুলো দেখার জন্য। কিন্তু ২০১৩ সাল পর্যন্ত কেউই প্রকৃতির এই রহস্যের কিনারা করে উঠতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫০ বছর ধরে এই বহস্য নিয়ে মাথা ঘামিয়ে গিয়েছেন।

০৭ ১৭
Death Valley National Park

ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগে সোনার খোঁজে ও অ্যাডভেঞ্চারের লোভে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে যাত্রা করেছিলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই সব অভিযাত্রীদের দল নাকি নেভাদা আর ক্যালিফোর্নিয়ার মাঝে এই ধু-ধু মরুপ্রান্তরে পথ হারিয়ে তীব্র জলকষ্টে প্রাণ বিসর্জন দেন।

Advertisement
০৮ ১৭
Death Valley National Park

১৯৪৮ সালে মৃত্যু উপত্যকায় অভিযান চালান একদল অভিযাত্রী। তাঁরাই এই রহস্যময় হ্রদটির সন্ধান পান। হ্রদটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২ কিলোমিটার। হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,১৩০ মিটার উঁচুতে রয়েছে। হ্রদটির কাছে পৌঁছতে অভিযাত্রীর দলটিকে দুর্গম পথ পার করতে হয়েছিল। পাণ্ডববর্জিত এই জায়গায় মানুষ তো বটেই, টিকে থাকতে পারে না কীটপতঙ্গও।

০৯ ১৭
Death Valley National Park

এই হ্রদের পাথরের রহস্যের কথা ছড়িয়ে পড়তেই নানা তত্ত্ব খাড়া হতে থাকে দুনিয়া জুড়ে। একদলের দাবি ছিল ভিন্‌গ্রহীদের কারসাজি রয়েছে এই ঘটনার পিছনে। তারাই পাথরগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টেনে নিয়ে যায়। আবার অন্য একটি দলের মতে, বায়ুপ্রবাহের গতির কারণে এই ঘটনাটি ঘটছে। পরে একদল বিজ্ঞানী এলাকাটি জরিপ করে বলেন, হ্রদের নীচের ভূমি চৌম্বকীয় এবং পাথরগুলিতে লৌহ আকরিক থাকার কারণে পাথরগুলি নড়ছে।

১০ ১৭
Death Valley National Park

১৯৭২ সালে বিজ্ঞানীদের একটি দল এই রহস্য উন্মোচন করতে এখানে এসেছিল। তাঁরা প্রায় সাত বছর ধরে এই পাথরগুলিকে নিয়ে গবেষণা করে। বিজ্ঞানীরা সেই সময় ৩১৭ কেজি ওজনের একটি পাথর নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার গবেষণার সময় ওই পাথরগুলি নিজের জায়গা থেকে এক ইঞ্চিও নড়েনি।

১১ ১৭
Death Valley National Park

২০০৭ সাল থেকেই এই শুষ্ক হ্রদ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন গ্রহবিজ্ঞানী র‌্যাল্‌ফ লরেঞ্জ। ভিন্‌গ্রহের শুকিয়ে যাওয়া হ্রদের পরিবেশ এবং আবহাওয়া সম্পর্কে তুলনামূলক গবেষণা চালানোর জন্য তিনি এই হ্রদে গবেষণা চালান। জিপিএস ট্র্যাকারের সহায়তা নিয়ে পাথরের নড়াচড়া মাপা যাবে এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এই পদ্ধতিতে আস্থা ছিল না র‌্যাল্‌ফের।

১২ ১৭
Death Valley National Park

গ্রহবিজ্ঞানীর বাতিল করা পন্থাতেই ২০১১ সালে সমুদ্রবিজ্ঞানী রিচার্ড নরিস ও তাঁর ভাই পরীক্ষা চালাতে আসেন মৃত্যু উপত্যকার হ্রদে। রেসট্র্যাক প্লায়ার যান। তারা সেখানে কিছু ক্যামেরা স্থাপন করে আসেন, যেগুলি নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাথরগুলির ছবি তুলে রাখবে। এ ছাড়াও এই অঞ্চলের তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, আর্দ্রতা, প্রভৃতি মাপার জন্য জন্য একটি ছোট আবহাওয়া কেন্দ্রও তৈরি করেন তাঁরা।

১৩ ১৭
Death Valley National Park

রহস্যময় পাথরগুলোর গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য তাঁরা বিভিন্ন আকারের পাথরের গায়ে জিপিএস ট্র্যাকার বসিয়ে দিয়ে আসেন। ২০১৩ সালে ফিরে এসে দু’জনে দেখতে পান অবিশ্বাস্য ফলাফল। মরুভূমির মতো শুষ্ক হ্রদটির তিন ভাগের এক ভাগ জুড়ে রয়েছে বরফের পাতলা চাদর।

১৪ ১৭
Death Valley National Park

এ বার মনে হতে পারে যেখানে জল নেই সেখানে বরফ আসবে কোথা থেকে। হ্রদটি স্বাভাবিক অবস্থায় জলশূন্যই থাকে। কিন্তু বছরের কিছু কিছু সময় আশপাশের উঁচু পাহাড় থেকে বৃষ্টির জল গড়িয়ে এসে এখানে জমা হয় এবং কৃত্রিম জলাধারের সৃষ্টি হয়। রাতের বেলা যখন তাপমাত্রা শূন্যের নীচে নেমে যায়, তখন সেই জল জমে বরফে পরিণত হয়।

১৫ ১৭
Death Valley National Park

বরফের স্তর দেখেই রিচার্ড বুঝতে পারেন কী ঘটতে যাচ্ছে। আশায় বুক বাঁধেন দুই ভাই। ২০ ডিসেম্বর সকালে রোদে উঠলে বরফ গলতে শুরু করে। কিছু কিছু স্থানের বরফের পাতলা আস্তরণ গলতেই শূন্যস্থান তৈরি হয়। তখন মৃদু বাতাসের ধাক্কায় আশপাশের অপেক্ষাকৃত ছোট বরফখণ্ডগুলি চলাচল করার সুযোগ পায়।

১৬ ১৭
Death Valley National Park

সেই বরফের খণ্ডই পাথরগুলিকে ধীরে ধীরে নড়াতে থাকে। এ ভাবে বিজ্ঞানীরা চোখের সামনেই দেখতে পান পাথরগুলো খুবই ধীরে ধীরে নড়তে শুরু করে দিয়েছে। তাঁরা দেখেছিলেন, বিভিন্ন মাপের পাথরগুলো বরফের প্লেটের ধাক্কায় ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করেছে। মাঝেমাঝে ঝোড়ো হাওয়া পাথরগুলির গতিপথ বদলে দিচ্ছে।

১৭ ১৭
Death Valley National Park

সমস্ত বরফের গলা শেষ হলে দেখা যায় পঞ্চাশেরও বেশি পাথরের নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার দাগ তৈরি হয়েছে। সমস্ত ঘটনার ছবি তুলে বিজ্ঞানী রিচার্ড এবং জেমস শহরে ফিরে গিয়েছিলেন। সেই ছবি ও প্রমাণসমেত গবেষণাটির ফলাফল ‘এ ব্রিফ মোমেন্ট ইন টাইম’ শিরোনামে একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশ করেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি