নামবদল হচ্ছে দেশের? ‘ইন্ডিয়া’ বদলে হতে চলেছে ‘ভারত’? শুরু হয়েছে জল্পনা। কংগ্রেসের একটি দাবি সেই জল্পনাকে উসকে দিয়েছে। তবে ইতিপূর্বে যে কোনও দেশ নাম বদলায়নি, এমনও তো নয়!
মনে করা হচ্ছে, দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ থেকে বদলে ‘ভারত’ করার প্রস্তাব আনতে পারে মোদী সরকার। চলতি মাসের শেষে বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অনুমান, তখন আনা হতে পারে নামবদলের প্রস্তাব।
এ সবের মধ্যে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ‘‘তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’। অথচ চিরাচরিত ভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখাই দস্তুর।’’
বিজেপি-বিরোধী দলগুলি যে জোট তৈরি করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। জোটে রয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো বিজেপি-বিরোধী দল। তাদের বিশ্বাস, আগামী লোকসভা ভোটে মোদীর বিজেপিকে কড়া টক্কর দিতে চলেছে এই জোট।
প্রশ্ন উঠছে, সে জন্যই কি দেশের নামবদলের ভাবনাচিন্তা করছে মোদী সরকার! বিরোধী জোটের ‘ইন্ডিয়া’ নাম নিয়ে একাধিক বার কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী-সহ বিজেপি নেতারা।
দেশের নাম ‘ভারত’ রাখা হোক বলে সমর্থন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর, বিজেপি নেতা হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার সীমান্তে রয়েছে টার্কি, যা প্রাচ্যে ‘তুরস্ক’ নামে পরিচিত। সেই দেশের নামও বদলাতে চলেছে। ২০২২ সালের জুনে রাষ্ট্রপুঞ্জকে এই দেশ জানিয়েছে, তাদের যেন এ বার থেকে ‘তুরকিয়ে’ নামে ডাকা হয়।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোগান একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন নামবদলের কারণ। তিনি জানান, তাঁর দেশের সংস্কৃতি, সভ্যতা, মূল্যবোধকে সব থেকে ভাল ভাবে প্রকাশ করে নতুন নাম ‘তুরকিয়ে’। তাই নতুন এই নামকরণ।
ছিল হল্যান্ড। হল ‘নেদারল্যান্ডস’। ডাচ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি বদলাতেই এই পদক্ষেপ।
নেদারল্যান্ড সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, মাদকের রমরমা, দেহব্যবসার কারণে ইউরোপের এই দেশের বেশ বদনাম হয়েছিল। নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল। সেই ভাবমূর্তি পরিবর্তনের কারণেই নামবদলের ভাবনা।
চলতি বছরের শুরুতে ‘চেখিয়া’ হয়েছে চেক রিপাবলিক। ২০১৬ সাল থেকে এই দুই নামেই পরিচিত হচ্ছে এই দেশ। তবে এখন থেকে এই ছোট নামেই পরিচিত হতে চলেছে দেশটি।
দেশের সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, খেলোয়াড়দের জার্সিতে এত বড় নাম লিখতে সমস্যা দেখা দিত। এই দেশে তৈরি পণ্যের গায়েও এত বড় নাম লিখতে অসুবিধা হচ্ছিল সংস্থাগুলির। সে কারণে নামবদল।
বর্মি সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল দেশে সংখ্যাগুরু। সে কারণে ভারতের পূর্বের দেশটির নামও ছিল বর্মা।
দেশে জোরজবরদস্তি ক্ষমতায় আসে সেনা নিয়ন্ত্রিত গোষ্ঠী সরকার। গণতন্ত্রের দাবিতে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে সেই বিদ্রোহ দমন করা হয়। এর পরেই ১৯৮৯ সালে সেনাকর্তারা দেশের নাম বদলে ‘মায়ানমার’ করেন।
ব্রিটিশরা ভারতের দক্ষিণে ছোট্ট দেশটির নাম রেখেছিল ‘সিলোন’। ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। পূর্বতন শাসকদের চিহ্ন মুছে ফেলতে ১৯৭২ সালে দেশটির নাম হয় শ্রীলঙ্কা। ২০১১ সালে সরকারি নথিপত্রেও ‘সিলোন’ নামটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়।
নাম ছিল কাম্পুচিয়া। তার ইংরেজি ‘অনুকরণ’ হল কম্বোডিয়া। ১৯৭৬ সালে সে দেশের কমিউনিস্ট শাসকেরা দেশকে কাম্পুচিয়া বলে অভিহিত করতেন। কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হওয়ার পর দেশের নাম বদলে সরকারি ভাবে ‘কম্বোডিয়া’ রাখা হয়।
২০১৮ সালে আফ্রিকার দক্ষিণের দেশ কিংডম অফ সোয়াজ়িল্যান্ডের নাম হয় কিংডম এসওয়াতিনি। রাজা তৃতীয় এমসোয়াতি দেশের নামবদল করেন। শাসকের তরফে জানানো হয়েছিল, সুইৎজ়ারল্যান্ডের সঙ্গে নামের মিল থাকায় ধন্দ তৈরি হচ্ছিল। সে কারণেই নামবদল।
২০১৯ সালে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ রিপাবলিক অফ ম্যাসিডোনিয়ার নাম বদলে রাখা হয় ‘রিপাবলিক অফ নর্থ ম্যাসিডোনিয়া’। যদিও সরকারের তরফে জানানো হয়, দেশের মানুষেরা ‘ম্যাসিডোনিয়ান’ হিসাবেই পরিচিত হবেন।
এক কালে পারস্য (পার্সিয়া) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৩৫ সালে ক্ষমতায় আসেন সম্রাট রেজা শাহ। তখনই দেশের নাম বদলে ‘ইরান’ রাখা হয়।
সম্রাটের তরফে জানানো হয়েছিল, দেশে নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। তাই নামবদল। যদিও এখনও এ দেশের খাবার, শিল্প, সাহিত্য ‘পারসিক’ হিসাবেই পরিচিত।