দেশের অসংখ্য পড়ুয়ার স্বপ্ন ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস অথবা আইপিএস আধিকারিক হওয়া। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য প্রয়োজন কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। পরীক্ষায় সফল হওয়ার পথ যথেষ্ট কঠিন। এই কঠিন পথ অতিক্রম করে আইএএস আধিকারিক হয়ে স্বপ্নপূরণ করেছিলেন তনু জৈন।
স্বপ্নপূরণ করলেও সেই স্বপ্ন বাস্তবে বেশি দিন বাঁচাতে পারেননি তনু। আইএএস পদে চাকরি পাওয়ার সাত বছর পরেই সে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।
১৯৮৬ সালের ১৬ জুলাই দিল্লিতে জন্ম তনুর। দিল্লির স্কুল থেকে পড়াশোনা করে দন্ত্যচিকিৎসা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের একটি কলেজে ভর্তি হন তিনি।
দন্ত্যচিকিৎসা নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করার সময় তনু ইউপিএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে পারেন। বাড়ি গিয়ে সেই পরীক্ষার কথা মাকে জানাতে মায়ের সঙ্গে বাজার থেকে ইউপিএসসি সংক্রান্ত তিন-চারটি বই কিনে আনেন তিনি।
দু’মাসের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রাথমিক পর্বে পাশ করে যান তনু। এক সাক্ষাৎকারে তনু জানান, দু’মাসের মধ্যে পড়াশোনা করে প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তাঁর। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি তিনি।
দ্বিতীয় বার আবার ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তনু। প্রথম দুই পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ে যান তিনি।
দ্বিতীয় বারেও অনুত্তীর্ণ হওয়ার পর নিজের দুর্বলতা খুঁজে সেগুলি দূর করার চেষ্টা করেন তনু। সেই সময় বাৎসল্য কুমারের সঙ্গে আলাপ হয় তনুর। দু’জনে একসঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
২০১৪ সালে তৃতীয় বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন তনু। তৃতীয় বার ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করেন তিনি। উত্তীর্ণদের তালিকায় ৬৪৮ নম্বরে নাম আসে তাঁর।
ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস পদে চাকরি পান তনু। বাৎসল্যও পরীক্ষায় পাশ করেন। চাকরি পাওয়ার পর সাত পাকে বাঁধা পড়েন দু’জনে।
সাড়ে সাত বছর আইএএস পদে চাকরি পাওয়ার পর হঠাৎ সে চাকরি ছেড়ে দেন তনু। বাস্তবে স্বপ্নপূরণ হওয়ার পরেও কেন এমন পদক্ষেপ করেন তিনি?
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তনু জানান, ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বার বার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। যে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের মানসিক অবস্থা ঠিক কী রকম হতে পারে, তা বুঝতে পারেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তনু বলেন, ‘‘চাকরি করে আমি সন্তুষ্ট। সাড়ে সাত বছর পরিশ্রমও করেছি আমি। কিন্তু আমি জানি ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছাত্রছাত্রীরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাটান। আমার স্বামী সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত। সে দিক থেকে মনে জোর পেয়েই আমি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’
বর্তমানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘মক ইন্টারভিউ’ (ইন্টারভিউয়ের মহড়া) নেন তনু।
৩৭ বছর বয়সি তনু এক জন অনুপ্রেরণামূলক বক্তাও (মোটিভেশনাল স্পিকার)। তা ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন তিনি।
ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি সংস্থা রয়েছে তনুর। অনুরাগী সংখ্যা খুব একটা কম নয় তাঁর। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা দেড় লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
সকল ছবি সংগৃহীত।