ছোট পর্দার রিয়্যালিটি শোয়ের তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ‘বিগ বস্’। টেলিভিশনের পাশাপাশি তা ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও জায়গা করে নিয়েছে। ‘বিগ বস্’-এর বাড়িতে থাকার আগে কেউ তারকা ছিলেন, আবার কেউ এই প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর তারকা হয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত ‘বিগ বস্’-এ পারিশ্রমিকের দিক থেকে কেউ টলাতে পারেনি পামেলার জায়গা। তিন দিন মাত্র ‘বিগ বস্’-এর ঘরে ছিলেন তিনি। তিন দিনের জন্য নাকি কোটি কোটি টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
২০১০ সালে ছোট পর্দায় সম্প্রচার হয় ‘বিগ বস্’-এর চতুর্থ সিজ়ন। এই সিজ়নের হাত ধরেই প্রথম ‘বিগ বস্’-এর সঞ্চালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন বলিউডের ‘ভাইজান’ সলমন খান। সেই সময়ই ‘বিগ বস্’-এর ঘরে দেখা যায় পামেলা ডেনিস অ্যান্ডারসনকে।
তবে প্রতিযোগী হিসাবে নয়, ‘বিগ বস্’-এর বাড়িতে অতিথি হিসাবে গিয়েছিলেন পামেলা। তিন দিন সেই বাড়িতে ছিলেন তিনি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, তিন দিনের জন্য আড়াই কোটি টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কে এই পামেলা?
১৯৬৭ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার লেডিস্মিথ এলাকায় জন্ম পামেলার। তাঁর বাবা ছিলেন সারাইকর্মী। মা রেস্তরাঁয় খাবার পরিবেশন করতেন। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল পামেলার। স্কুলে পড়াকালীন ভলিবল খেলতেন তিনি। ১৯৮৫ সালে কলেজের পড়াশোনা শেষ করে তিন বছর পর ১৯৮৮ সালে ভ্যাঙ্কুভর চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে শরীরচর্চাবিদ হিসাবে কাজ করা শুরু করেন পামেলা।
এই সময়ে ড্যান ইলিসিক নামে এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পামেলা। বিয়ার প্রস্তুতকারী এক সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারের জন্য ফোটোশুটের প্রস্তাব পান পামেলা। ড্যানের সাহচর্যে ফোটোশুটের জন্য লস অ্যাঞ্জেলসে পাড়ি দেন তিনি। তার পর থেকে পামেলার জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
এক বহুলপরিচিত দুষ্টু পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ফোটোশুট করতে শুরু করেন পামেলা। কম সময়ের মধ্যে নব্বইয়ের দশকের দুষ্টু পত্রিকার সেরা মডেল হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। টানা ২২ বছর সেই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
মডেল হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার পর ছোট পর্দায়ও জায়গা করে নিতে শুরু করেন পামেলা। ‘হোম ইমপ্রুভমেন্ট’ নামের কমেডি ঘরানার একটি সিরিজ়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে।
তবে ১৯৯২ সালে পামেলার ভাগ্য অন্য দিকে মোড় নেয়। ‘বেওয়াচ’ নামের একটি জনপ্রিয় সিরিজ়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর এই সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যায় পামেলাকে।
‘বার্ব ওয়্যার’, ‘ব্লন্ড অ্যান্ড ব্লন্ডার’, ‘স্কেয়ারি মুভি ৩’, ‘স্কুবি ডু’র মতো একাধিক হলিউডি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে পামেলাকে। একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। পামেলার জীবনকাহিনির উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে একাধিক হলিউডি তথ্যচিত্রও।
ছোট পর্দার বহু রিয়্যালিটি শোয়ে অতিথিশিল্পী হিসাবে দেখা দিয়েছেন পামেলা। রান্নার শোয়ের সঞ্চালনা করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কলমও ধরেছেন তিনি। পামেলার লেখা বই প্রকাশও পেয়েছে।
চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লাস্ট শোগার্ল’ ছবিতে পামেলার অভিনয় দেখা গিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পেয়েছে তাঁর অভিনয়। পুরস্কৃতও হয়েছেন তিনি।
অভিনেত্রী হিসাবে সফল হলেও ব্যক্তিগত জীবন খুব একটা সুখকর ছিল না পামেলার। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে পামেলা জানিয়েছিলেন, শৈশব থেকে বার বার শারীরিক হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি।
২০১৪ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পামেলা জানিয়েছিলেন, ৬ থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত এক তরুণী তাঁর খেয়াল রাখতেন। সেই তরুণী ‘বেবিসিটার’ একাধিক বার শারীরিক হেনস্থা করেছিলেন পামেলাকে।
পামেলার যখন ১২ বছর বয়স, তখন ২৫ বছরের এক তরুণের কাছেও শারীরিক হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এমনটাই দাবি পামেলার। ১৪ বছরের কিশোরী পামেলাকে তাঁর প্রেমিক এবং ছ’জন বন্ধু মিলে গণধর্ষণ করেছিলেন বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন পামেলা।
১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র চার দিনের আলাপে টমি লি নামে এক তরুণকে বিয়ে করেন পামেলা। পেশায় ড্রামবাদক ছিলেন টমি। বিয়ের পর দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন পামেলা। কিন্তু সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে ছ’মাস জেল খাটেন টমি। ১৯৯৮ সালে দু’জনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব কে পাবেন তা নিয়ে মামলা চলতে থাকে। ২০০২ সালে অক্টোবর মাসে দু’জনকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০২ সালের মার্চ মাসে পামেলা জানিয়েছিলেন যে, সম্পর্কে থাকাকালীন টমির সঙ্গে শরীরে উল্কি আঁকিয়েছিলেন পামেলা। সেই সময়ে সুচ ব্যবহার করার কারণে হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৫ সালে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে ওঠেন পামেলা।
১৯৯৫ সালের ঘটনা। টমির সঙ্গে একটি প্রমোদতরীতে সময় কাটাতে যান পামেলা। কিন্তু টমি এবং পামেলার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিয়ো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তা নিয়ে শুরু হয় বিস্তর সমালোচনা। চলে আইনি লড়াইও। কিন্তু সেই সময় পামেলা অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাঁর শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছিল। সে কারণে আইনের পথ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পামেলা এবং টমি।
টমিকে বিচ্ছেদ দেওয়ার পর কিড রক নামে আমেরিকার এক সঙ্গীতশিল্পীকে বিয়ে করেন পামেলা। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন ‘ব্লন্ড এবং ব্লন্ডার’ ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পামেলা। কিন্তু সেই সময় তাঁর গর্ভপাত হয়। পরে নানা বিষয়ে মতভেদের কারণে কিডকে বিচ্ছেদ দেন অভিনেত্রী।
২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় পামেলা জানিয়েছিলেন যে, রিক সালোমন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলেছেন তিনি। সেই বছরেই অক্টোবর মাসে রিককে বিয়ে করেন তিনি। বিবাহবিচ্ছেদ না হলেও ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে তাঁদের ছাদ আলাদা হয়ে যায়।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে পামেলা জানিয়েছিলেন, ছাদ আলাদা হয়ে গেলেও রিকের সঙ্গে বন্ধুত্বের পাশাপাশি তাঁর শারীরিক সম্পর্কও ছিল। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আবার রিককে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন দু’জন।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে পামেলা তাঁর দেহরক্ষী ড্যান হেহার্স্টকে বিয়ে করেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ড্যানকে বিচ্ছেদ দিয়ে দেন পামেলা।
সমাজমাধ্যমেও যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে পামেলার। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ৩৯ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।