নব্বইয়ের দশকের অন্যতম সেরা বাঁহাতি ব্যাটার। যত দিন ক্রিকেট খেলেছেন, তত দিনই বোলারদের ঘুম কেড়েছেন। কিন্তু বিনোদ কাম্বলি যেমন রাতারাতি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন, ঠিক তেমনই দ্রুত তাঁর কেরিয়ারে পতনও হয়েছিল।
মদের প্রতি আসক্তিতে ডুবে গিয়েছিলেন বিনোদ। জীবনে ছিল বহু নারীসঙ্গ। প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়েও টেকেনি বিনোদের। আর্থিক অনটনের শিকার হয়ে কিছু দিন আগে চাকরির আবেদন করতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
প্রয়াত কোচ রমাকান্ত আচরেকরের স্মৃতিসৌধ উদ্বোধনের এক অনুষ্ঠানে সম্প্রতি আমন্ত্রিত ছিলেন আচরেকরের দুই প্রিয় ছাত্র সচিন তেন্ডুলকর এবং বিনোদ কাম্বলি। অসুস্থ বিনোদের হাত ধরে সচিনকে গল্প করতে দেখা যায় সেখানে।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, কাম্বলিকে কয়েক জন দু’পাশে ধরে ফুটপাথে তুলে দিচ্ছেন এবং তাঁর গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।
শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি আর্থিক অভাবেও দিন কাটাচ্ছেন বিনোদ। একটি ভিডিয়ো করে সেই কথা জানিয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার নিজেই। চাকরির জন্য আবেদনও করেছিলেন তিনি। বিনোদকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্যেরা।
২০১৩ সালে মুম্বইয়ে গাড়ি চালানোর সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কাম্বলি। তার পর থেকে নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। গত বছর তাঁর অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি হয়। ২০২৩ সালে বিবাহবিচ্ছেদও হয় তাঁর। বিনোদের বিরুদ্ধে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর দ্বিতীয় প্রাক্তন স্ত্রী।
কেরিয়ারে পতনের পাশাপাশি বিনোদের ব্যক্তিগত জীবনও খুব একটা সুখকর ছিল না। নব্বইয়ের দশকে যখন ক্রিকেটের জগতে তিনি প্রশংসায় জড়িয়ে রয়েছেন, সেই সময় তাঁর আলাপ হয় নোয়েলা লিউইস নামে এক তরুণীর সঙ্গে।
পুণের এক হোটেলের রিসেপশনে কাজ করতেন নোয়েলা। কর্মসূত্রে সেই হোটেলেই গিয়েছিলেন বিনোদ। সেখানে গিয়ে নোয়েলার সঙ্গে আলাপ, বন্ধুত্ব এবং সেই বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। ১৯৯৪ সালের মে মাসে পুণের এক গির্জায় নোয়েলাকে বিয়ে করেন বিনোদ।
বিয়ের পর বিনোদের কেরিয়ারের রেখচিত্র আরও নীচের দিকে নামতে শুরু করে। সেই সময়ে মদাসক্ত হয়ে পড়েন বিনোদ। বিয়ের পর বহু নারীর আনাগোনা বাড়তে থাকে ক্রিকেটারের জীবনে।
নোয়েলার সঙ্গে বিনোদের সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বিয়ের পাঁচ বছর পর ১৯৯৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় দু’জনের। নোয়েলার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিনোদের আলাপ হয় আন্দ্রেয়া হিউইটের।
পেশায় মডেল ছিলেন আন্দ্রেয়া। ২০০০ সালে বিনোদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আন্দ্রেয়া। ১৯৭৮ সালের ৪ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে জন্ম তাঁর। আন্দ্রেয়াকে বহু বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। বিভিন্ন ফ্যাশন শোয়ে হাঁটতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন আন্দ্রেয়া। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বইয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। সমাজবিদ্যা নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেছেন আন্দ্রেয়া। পড়াশোনা শেষ করার পর মডেলিং শুরু করেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বলিপাড়ার এক গায়কের বাবার সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন আন্দ্রেয়া। একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বলি গায়ক অঙ্কিত তিওয়ারির বাবা আরকে তিওয়ারি। অঙ্কিতের বাবা আন্দ্রেয়ার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করে মুম্বইয়ের বাঙ্গুর নগর থানায় নালিশ জানিয়েছিলেন।
অঙ্কিতের বাবার অভিযোগ ছিল, আন্দ্রেয়া নাকি তাঁকে ঘুষি মেরেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে নাকি বেধড়ক মেরেছিলেন বিনোদের প্রাক্তন স্ত্রী। আন্দ্রেয়া পাল্টা অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, অঙ্কিতের বাবা নাকি তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছিলেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিচ্ছিলেন বলে অঙ্কিতের বাবার গায়ে হাত তুলেছিলেন, এমনটাই দাবি করেছিলেন আন্দ্রেয়া। এই ঘটনা নিয়ে টিনসেল নগরীতে কম বিতর্ক হয়নি।
আন্দ্রেয়াকে আইনি বিয়ে করার ছ’বছর পর ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গে সামাজিক বিয়ে করেন বিনোদ। ২০১০ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন আন্দ্রেয়া। তার চার বছর পর ২০১৪ সালে কন্যাসন্তানেরও জন্ম দেন তিনি।
স্বামী এবং দুই সন্তান নিয়ে সংসার হলেও সেই সংসারে শান্তি পাননি আন্দ্রেয়া। আন্দ্রেয়ার অভিযোগ, মদ পান করে তাঁর উপর শারীরিক হেনস্থা করতেন বিনোদ। এক বার নাকি রান্না করার পাত্র ছুড়ে মেরেছিলেন আন্দ্রেয়াকে। তার ফলে মাথায় গুরুতর চোটও পেয়েছিলেন তিনি।
মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে সঙ্গে সঙ্গে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় আন্দ্রেয়াকে। বিনোদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। ২০২৩ সালে বিনোদের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় আন্দ্রেয়ার।
আন্দ্রেয়ার দাবি, মদের নেশায় মাঝেমধ্যেই তাঁর গায়ে হাত তুলতেন বিনোদ। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করতেন। এমনকি, তাঁদের সন্তানদের গায়েও হাত তুলতে তৎপর হয়েছিলেন বিনোদ।
এর আগেও বিনোদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে জড়িত ছিলেন আন্দ্রেয়াও। অভিযোগ, তাঁদের ভৃত্যকে মারধর করেছিলেন তাঁরা। যদিও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি।
সব ছবি: সংগৃহীত।