কলকাতা
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪১
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে দিনটি বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। শুধু প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই নন, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিকে মনে রেখেছে গোটা দেশ।
—ফাইল চিত্র।
ওই দিন পড়শি পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছিল ভারত। পুলওয়ামা হামলার জবাবে পাকিস্তানের বালাকোটে সশস্ত্র অভিযান চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে উড়িয়ে দেওয়া হয় জইশ-ই-মহম্মদের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি।
—ফাইল চিত্র।
বালাকোটে ভারতের এই হামলা ইসলামাবাদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। ভয় পেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। ভারতের তরফে আরও বড় কোনও হামলার আশঙ্কা করেছিল ইমরান খান সরকার।
—ফাইল চিত্র।
সেই আতঙ্কেই নাকি ঘুম উড়ে গিয়েছিল পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে তড়িঘড়ি তিনি দিল্লিতে ফোন করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন ইমরান।
—ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়া তাঁর বই ‘দ্য অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবল্ড ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’-এ বালাকোট হামলার সময়ের প্রত্যক্ষ কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।
—ফাইল চিত্র।
ওই বইতেই বিসারিয়া জানিয়েছেন, সে দিন রাতে পাকিস্তান ভারতের তরফে বড়সড় আক্রমণের আশঙ্কা করেছিল। সে দেশের গোয়েন্দারা নাকি খবর পেয়েছিলেন, পাকিস্তানের দিকে অন্তত ন’টি ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে রেখেছে নয়াদিল্লি।
—ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের তৎকালীন বিদেশ সচিব তেহমিনা জানজুয়া দেশের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে একটি মেসেজ পেয়েছিলেন। সেখানে পাক সেনা তাঁকে জানিয়েছিল, ভারত ন’টি ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের দিকে তাক করে রেখেছে।
—ফাইল চিত্র।
পাক সেনা জানিয়েছিল, ওই ন’টি ক্ষেপণাস্ত্র এমন ভাবে তৈরি করে রাখা হয়েছে, যাতে যে কোনও দিন তার ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ, যে কোনও দিন যে কোনও মুহূর্তে পাকিস্তানের দিকে ধেয়ে আসতে পারে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র।
—ফাইল চিত্র।
অজয়ের বই অনুযায়ী, বিদেশ সচিবের কাছ থেকে সেই খবর পৌঁছয় ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দরবারে। আতঙ্কে ঘুম উড়ে যায় ইমরানের। কারণ, সেই সময় বালাকোট হামলা নিয়ে পাকিস্তান বিধ্বস্ত ছিল। আরও বড় কোনও হামলা হজম করা তাদের পক্ষে সম্ভব হত না।
—ফাইল চিত্র।
বিদেশ সচিব এবং পাক সেনার কাছ থেকে ইমরানের কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে যে কোনও মূল্যে ওই আসন্ন হামলা রুখতে হবে।
—ফাইল চিত্র।
প্রবল চাপের মুখে মধ্যরাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ইমরান। তিনি তৎক্ষণাৎ মোদীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্য ছিল, কোনও ভাবে দুই দেশের প্রধানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বন্দোবস্ত করা।
—ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের তৎকালীন হাই কমিশনার সোহাইল মাহমুদ ভারতের হাই কমিশনার বিসারিয়াকে ফোন করেছিলেন মধ্যরাতেই। নিজের বইতে সেই অভিজ্ঞতার কথা বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন তিনি।
—ফাইল চিত্র।
বিসারিয়া লিখেছেন, ‘‘মধ্যরাতে আমি পাক হাই কমিশনার সোহাইল মাহমুদের ফোন পাই। তিনি আমাকে জানান, ইমরান খান আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক। আমি ওঁকে জানাই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওই মুহূর্তে কথা বলতে পারবেন না।’’
—ফাইল চিত্র।
বিসারিয়া আরও বলেন, ‘‘আমি ওঁকে জানিয়েছিলাম, মোদী ফোন ধরতে পারছেন না। তবে ইমরানের জরুরি কোনও কথা মোদীকে জানানোর থাকলে, তিনি ফোনে জানিয়ে রাখতে পারেন। আমি সেই বার্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে পারব।’’ কিন্তু আর কোনও কথা তাঁকে জানানো হয়নি। ইমরানের ফোনও আসেনি আর।
—ফাইল চিত্র।
বিসারিয়া রাতে জানতে পেরেছিলেন, দিল্লিতে ব্রিটেন এবং আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের কাছেও পাকিস্তানের ফোন এসেছিল। যে কোনও মূল্যে নয়াদিল্লিকে আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইসলামাবাদ।
—ফাইল চিত্র।
নিজেদের দেশের সন্ত্রাসবাদ সমস্যার সমাধানকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইমরান সরকার। আক্রমণ রোখার পরিবর্তে ভারতের যে কোনও শর্তে তারা রাজি হয়ে যেতে পারতেন।
—ফাইল চিত্র।
এর পরের দিনই পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে শান্তির বার্তা দিয়ে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি পাক সেনা কাশ্মীর থেকে তাঁকে বন্দি করেছিল। সারা দেশ তাঁর জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল।
—ফাইল চিত্র।
যে রাতে মোদীর সঙ্গে কথা বলার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই রাত নিয়ে চর্চা সহজে থামেনি। পরবর্তীতে মোদী নিজেই এক নির্বাচনী প্রচারে ওই রাতের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।
—ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী ভাষণে মোদী দাবি করেছিলেন, পাকিস্তান অভিনন্দনকে মুক্তি দিয়ে বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছে। তা না হলে সেই রাতে আরও অনেক রক্ত ঝরত।
—ফাইল চিত্র।
অর্থাৎ, ইমরানের অনুমান খুব একটা ভুল ছিল না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করে রেখেছিল দিল্লি। অভিনন্দনকে না ছাড়লে সেই আক্রমণে পাকিস্তানের বিপদ আরও বাড়তে পারত।
—ফাইল চিত্র।
ইমরান যদিও অভিনন্দনের মুক্তিকে দুই দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা হিসাবে প্রচার করেছেন। তবে বিসারিয়ার দাবি, ভারতের বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতি এবং চাপের মুখে সে দিন নতিস্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান।
—ফাইল চিত্র।
