নতুন ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি চিন। মুদ্রাস্ফীতির পরিবর্তে সেখানে ‘মুদ্রাসঙ্কোচন’ শুরু হয়েছে। ফলে ইউয়ানের দাম ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।
ইউয়ানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চিনে জিনিসপত্রের দাম দিন দিন কমছে। বাজারে জিনিসের জোগান রয়েছে। কিন্তু কমেছে চাহিদা। জনগণ হয়ে উঠেছেন সঞ্চয়ী।
বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের সাপেক্ষে চিনের এই সঙ্কট কিছুটা বিপরীতধর্মী। সাধারণত, ডলারের সাপেক্ষে মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। চিনে তার উল্টো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তবে বিপরীতধর্মী হলেও চিনের এই ‘মুদ্রাসঙ্কোচন’ মোটেই ইতিবাচক নয়। এই পরিস্থিতি অবিলম্বে সামাল দেওয়া না গেলে অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। তার প্রভাব পড়বে অন্য দেশের উপরেও।
চিনের অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদেরাও। কারণ, চিন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি (আমেরিকার পরেই)। চলতি বছরে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অন্তত ৩৫ শতাংশ আসার কথা চিন থেকে।
চিন সরকারের উপর বিপুল ঋণের বোঝা চেপেছে। তাদের সম্মিলিত মোট ঋণের পরিমাণ ১৩ লক্ষ কোটি ডলার। যা অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
চিনের শুধুমাত্র ব্যাঙ্কিং সেক্টরের ঋণের পরিমাণ তিন লক্ষ কোটি ডলার। যা ব্রিটেনের সমগ্র অর্থনীতির সমপরিমাণ। এই পরিস্থিতি ভারত বা বহির্বিশ্বের জন্য কতটা সমস্যার, এখনও পরিমাপ করে উঠতে পারছেন না অনেকেই।
চিনের এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব কি পড়তে পারে ভারতেও? অন্য দেশগুলির অর্থনীতিকেই বা কতটা প্রভাবিত করতে পারে বেজিংয়ের এই সঙ্কট?
চিনের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। ‘মুদ্রাসঙ্কোচন’-এর ফলে তারা অধিক উৎপাদন করছে, কিন্তু ঘরোয়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে না পণ্য। ফলে বাইরের দেশে নিজস্ব পণ্য বিক্রিতে জোর দিচ্ছে বেজিং।
অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে চিনের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কমেছে আমদানির পরিমাণ। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনেও এই ছবি ধরা পড়েছে। ভারতে তারা বেশি পরিমাণ পণ্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু ভারতের পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্টে ভারতের মোট রফতানির ৬.৫ শতাংশ গিয়েছিল চিনে। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অগস্টে সেই হার কমে হয়েছে ৩.৫ শতাংশ।
এক দিক থেকে এই পরিসংখ্যান ভারতের জন্য চিন্তার। কারণ, চিনে ভারতীয় পণ্যের রফতানি কমে গেলে এ দেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে। চিন থেকে প্রতি বছর যে আয় হয়, তার পরিমাণ কমবে।
অন্য দিকে, চিনে রফতানি কমে গেলে চিনা দ্রব্যের আমদানি ভারতে বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে, চিনের পণ্যে ছেয়ে যাবে ভারতের বাজার। দেশীয় পণ্য মার খাবে। দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য যা খুব একটা স্বস্তির কথা নয়।
কোভিড অতিমারির ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি চিন। তার ফলে দেশটির অর্থনীতির উপর এমন বিপরীত প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
চিনের অর্থনীতির একটা বড় অংশ নির্ভর করে নির্মাণশিল্পের উপর। সম্প্রতি দেশের অন্যতম নামী নির্মাণসংস্থা দেনার দায়ে ডুবেছে। যার ফলে টান পড়েছে ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারেও। কারণ নির্মাণশিল্পে চিনা ব্যাঙ্কগুলির বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেশি।
চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। দুই দেশের সীমান্ত প্রায়ই সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই উত্তাপের আঁচ বাণিজ্যে এসে লাগে না। চিনের অর্থনৈতিক সঙ্কট তাই ভারতের বাণিজ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে অনায়াসেই।
সব ছবি: সংগৃহীত।