২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় উদ্বোধন হওয়ার কথা রামমন্দিরের। প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে রামলালার। উপস্থিত থাকবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিমন্ত্রিত দেশের বিশিষ্টজনেরা। সেই উপলক্ষে তুঙ্গে প্রস্তুতি। সেরে নেওয়া হচ্ছে শেষ মুহূর্তের কাজ। তারই কিছু ছবি রইল আনন্দবাজার অনলাইনে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে বিশিষ্টদের কাছে। আমন্ত্রণপত্রটিকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসাবে পাঠানো হচ্ছে বিশিষ্টদের কাছে। গেরুয়া ব্যাগের মধ্যে কাঠের বাক্স। তার মধ্যেই রয়েছে আমন্ত্রণপত্র।
আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে কাচের ছোট্ট শিশিতে রয়েছে অযোধ্যার মাটি, যার মুখ লাল সুতো দিয়ে বাঁধা। আর রয়েছে একটি তামার মুদ্রা। মুদ্রার এক পিঠে রয়েছে খোদাই করা রামের মুখাবয়ব। অন্য পিঠে খোদাই করা রামমন্দিরের কাঠামো। মুদ্রার ওজন ১০ গ্রাম।
এই আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন দেশে বিভিন্ন ধর্মের প্রধানদের পাশাপাশি বলিউড তারকারা। অমিতাভ বচ্চন, রণবীর কপূর, আলিয়া ভট্ট, মাধুরী দীক্ষিত, দক্ষিণী ছবির নায়ক প্রভাস, রজনীকান্ত-সহ আরও অনেকে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী-সহ রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি সচিন তেণ্ডুলকর, বিরাট কোহলির মতো ক্রিকেট তারকাও ডাক পেয়েছেন। তবে শাহরুখ খান, সলমন খান, আমির খান সেই অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
রামমন্দির ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে, ২২ তারিখ মন্দির উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান হলেও তার প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে আচার পালন শুরু হয়ে যাবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে বৈদিক আচার মেনে ভগবান রাম ও রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান শুরু হবে।
সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার পর চার বছর কেটে গিয়েছে। আর কয়েক দিন পরেই মন্দির উদ্বোধন। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই দিন অযোধ্যায় লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হতে পারে। সে সময় শহরের কোনও হোটেল আর খালি নেই। বুক করা হয়েছে প্রায় দু’মাস আগে থেকে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রেই জানা গিয়েছে, এমনি সময়ে হোটেলে যে ঘরের ভাড়া দিনে তিন হাজার টাকা, জানুয়ারি মাসে তা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। হোটেলের ঘরভাড়া প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি করেছেন মালিকেরা।
পাশাপাশি দর্শনার্থীরা খুঁজছেন ধর্মশালা, অতিথিনিবাস। এমনকি, হোম স্টের খোঁজও করছেন বহু মানুষ। অযোধ্যার হোটেল মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, শহরে মোট হোটেলের সংখ্যা ১৩৮টি। তাতে ঘর রয়েছে চার হাজার। এ ছাড়াও শহরে ৭০টি অতিথিনিবাস, ৫০টি ধর্মশালা এবং ১০০টি হোম স্টে রয়েছে। সেগুলির কোনওটিই আর খালি নেই। টিকিট নেই অযোধ্যাগামী ট্রেনেরও।
অযোধ্যায় রামমন্দিরের নকশা করছেন স্থপতি চন্দ্রকান্ত ভাই সোমপুরা। উত্তর ভারতীয় মন্দিরের শৈলীই ফুটে উঠেছে এখানে। ট্রাস্টের সূত্রে খবর, গোলাপি বেলেপাথর, রাজস্থানের ছোট্ট গ্রাম মির্জাপুর এবং বংসী-পাহাড়পুর থেকে আনা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি হচ্ছে মন্দির। এ ছাড়াও ১৭ হাজার গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে।
নেপাল থেকে এসেছে শালগ্রাম শিলা। সেখানে কালী গণ্ডকী জলপ্রপাত থেকে তুলে আনা হয়েছে ওই দুই শিলা। সূত্রের খবর, ওই পবিত্র শিলা দিয়ে তৈরি করা হতে পারে রাম এবং সীতার বিগ্রহ।
শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই দাবি করেছেন, মন্দিরটি এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে যে, আগামী হাজার বছরেও সেটি মেরামতের প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি, ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও নড়বে না মন্দিরের ভিত।
মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, মন্দিরের প্রথম তলায় থাকবে ‘রাম দরবার’। রামচন্দ্রের রাজসভার যে বর্ণনা রামায়ণে রয়েছে, তার আদলে ‘রাম দরবার’ তৈরি হচ্ছে। রাম দরবারের প্রতিটি স্তম্ভে ২৫-৩০টি মূর্তি খোদাই করা থাকবে। মন্দির চত্বরে বাল্মীকি, নিষাদ, বিশ্বামিত্র, শবরীর মন্দির-সহ মোট সাতটি মন্দিরের কাজও দ্বিতীয় দফায় শেষ হবে।
সব ঠিক থাকলে অযোধ্যার মন্দিরে বসতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের মৃৎশিল্পী মহম্মদ জামালউদ্দিন ও তাঁর ছেলে বিট্টুর তৈরি করা ১৬ ফুটের দু’টি ফাইবারের রামের মূর্তি।
জামালউদ্দিন মূর্তি তৈরি শিখে হায়দরাবাদের রামোজি ফিল্ম সিটিতে তালিম নেন। তার পর সেখানে কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর। পরে দত্তপুকুরের পালপাড়ায় মৃৎশিল্পের পসার বাড়লে বাড়ির সামনে তৈরি করেন কারখানা। তাঁদের তৈরি মূর্তি দু’টির একটি অযোধ্যায় পাড়ি দিয়েছে মাস আটেক আগে। অন্যটি প্রায় দেড় মাস আগে।
ছবি: শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট।