জাপানের টোকিয়ো বিমানবন্দরে রানওয়েতে দু’টি বিমানের সংঘর্ষ। তার জেরে আগুন জ্বলে গেলে যাত্রিবাহী বিমানে। কোনও মতে উদ্ধার করে আনা হল ৩৭৯ জন যাত্রীকে। কিন্তু উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানটি বাঁচল না। এক জন বেরিয়ে এলেও বাকি পাঁচ জনই মারা গেলেন।
ভূমিকম্প, সুনামিতে বিপর্যস্ত জাপান। গোদের উপর বিষফোঁড়া বিমানে আগুন। বছরের প্রথম দিনে জাপানে ভূমিকম্পের জেরে আছড়ে পড়েছে সুনামি। কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাতে মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের।
সেই সুনামিবিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিল উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমান। টোকিয়োর হানেডা বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কথা ছিল। উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, তাদের বিমানটি সুনামি বিধ্বস্ত নিগাতার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে উড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
অন্যদিকে, জাপান এয়ারলাইনস সেখানকার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, হোক্কাইডোর নিউ চিটোস বিমানবন্দর থেকে উড়ে টোকিয়োর হানেডা বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল বিমানটি। সে সময়ই বিপত্তি। দু’টির ধাক্কা।
উপকূলরক্ষী বাহিনীর তরফে প্রথমে জানানো হয়েছিল, ঠিক কী ঘটেছে, সেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তাদের বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই আগুন জ্বলেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাদের বিমানও কোনও না কোনও ভাবে ‘জড়িত’, সে বিষয়ে নিশ্চিত বলেই জানিয়েছেন এক আধিকারিক। ঘটনার পরেই হানেডা বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানে ছিলেন ছ’জন। এক জন কোনও ক্রমে বেরিয়ে আসেন। বাকি পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে আগুন নেভাতে পৌঁছয় দমকলের ৭০টি ইঞ্জিন। কন্ট্রোলরুম খুলে নজরদারি শুরু করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা।
যাত্রিবাহী বিমানে যখন আগুন ধরে, ভিতরে তখনও ছিলেন ৩৭৯ জন যাত্রী। অনেকেই নিজেদের মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিয়ো তোলেন। সে সব ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বিমানের নীচ থেকে বার হচ্ছে ধোঁয়া। বিমানের ভিতরে বোর্ডে সিট বেল্ট খোলার জন্য নির্দেশ ভেসে ওঠে। আসলে সেই বোর্ড বিকল হয়ে গিয়েছে। এক বার তাতে দেখানো হচ্ছে, সিট বেল্ট পরতে হবে। আবার পরের মুহূর্তে দেখানো হচ্ছে, সিট বেল্ট খুলতে হবে।
এক যাত্রী পরে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ভিডিয়ো দিয়ে লেখেন, ‘‘মনে হচ্ছিল মরে যাব। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।’’
অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বিমানের ভিতর ভরে গিয়েছে কালো ধোঁয়ায়। দম আটকে আসার মতো পরিস্থিতি। কয়েক জন যাত্রী মাস্কটিকে মুখে চেপে ধরতে চাইছেন। কেউ আবার বিমানে থাকা অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।
আতঙ্কে বহু যাত্রী চিৎকার করছেন বিমানের ভিতর। কেউ জোরে জোরে প্রার্থনা করছেন। বিমানের জানলার কাচ বিকট শব্দে ফাটছে। যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে সব ছবিও ধরা পড়েছে যাত্রীদেরই ক্যামেরায়।
আগুন জ্বলছে। এই পরিস্থিতিতে কে আগে বার হতে পারবেন বিমান থেকে, সেই নিয়ে সামান্য হলেও হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান।
সংবাদমাধ্যমের ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বিমানে সিঁড়ির বদলে আপৎকালীন নির্গমনের জন্য একটি স্লিপ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তা দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে পড়ছেন যাত্রীরা। চোখে-মুখে আতঙ্ক।
দূর থেকেও চোখে পড়েছে কমলা আগুন। সেই আগুন ক্রমে গ্রাস করে এয়ারবাস এ৩৫০ বিমানটিকে। ভিতরে ৩৭৯ সওয়ারির মধ্যে ছিল আটটি শিশু।
যে ভাবে ৩৭৯ জন যাত্রী নিরাপদে বিমান থেকে নেমে এসেছেন, অনেকেই বলছেন তা ‘মির্যাকল’। কী ভাবে এই কাণ্ড ঘটল, তা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।