
পাঁচ দশক বলিপাড়ায় কাটিয়ে ফেলেছেন। ২০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন বলিউডের ‘শাহেনশা’ অমিতাভ বচ্চন। তবে কেরিয়ারের গোড়ার দিকে খুব একটা মসৃণ ছিল না অমিতাভের অভিনয়যাত্রা। গুঞ্জন শোনা যায়, শুটিং হয়ে যাওয়ার পর ছবি মুক্তির আগে অমিতাভ অভিনীত সমস্ত দৃশ্যে কাঁচি চালিয়ে দিয়েছিলেন হিন্দি চলচ্চিত্রজগতের এক জনপ্রিয় ছবিনির্মাতা।

১৯৭৯ সালে শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জুনুন’। ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন বলি অভিনেতা শশী কপূর। এই ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। শশীর পাশাপাশি ‘জুনুন’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় শাবানা আজ়মি, নাসিরুদ্দিন শাহ, জেনিফার কেন্ডেল, নাফিসা আলির মতো তারকাদের।

বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘জুনুন’ ছবিতে গুটি কতক দৃশ্যে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন অমিতাভ। তবে পারিশ্রমিক হিসাবে মাত্র ৫০০ টাকা দিতে রাজি ছিলেন প্রযোজক। তাতেই অভিনয় করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্তানি’ ছবিতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন অমিতাভ। কিন্তু বক্স অফিসে তেমন ভাল ফল করেনি সেই ছবি। ৩০ বছর বয়সে অমিতাভের কেরিয়ারের ঝুলিতে যোগ হয়েছিল ১২টি ব্যর্থ এবং দু’টি মাত্র হিট ছবি।

বলিউডের ‘ব্যর্থ নবাগত তারকা’র তকমা লেগে গিয়েছিল অমিতাভের নামের সঙ্গে। তাই কোনও ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলে সচরাচর ফিরিয়ে দিতেন না তিনি।

বলিউডের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, ছবিতে জাভেদ খানের (শশী কপূর অভিনীত চরিত্র) মৃত্যুর দৃশ্যে ভিড়ের মধ্যে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন অমিতাভ। ছবিনির্মাতাদের কথামতো ৫০০ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সেই দৃশ্যেই অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে সেই দৃশ্যটুকুও পরিচালকের নির্দেশে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

অমিতাভ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, ভিড়ের দৃশ্যে অভিনয় করে মন ভরেনি তাঁর। নিজেই চেয়েছিলেন যে, সেই দৃশ্যগুলি যেন ছবি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ছবির প্রযোজক এবং অভিনেতা শশীর সঙ্গে এই প্রসঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন অমিতাভ।

অমিতাভের কথায়, ‘‘শশী আমায় এ সব ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতে বারণ করেছিল। ওর মতে, আমি অনেক বড় কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছি।’’ শশীর কথা মনঃপুত হয় অমিতাভের।

বলিপাড়ার জনশ্রুতি, অমিতাভ নিজেই শ্যামের কাছে গিয়ে তাঁর অভিনীত দৃশ্যগুলি ছবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। নিমরাজি হলেও পরে অভিনেতার কথা মেনে নেন ‘জুনুন’ ছবির পরিচালক।

‘জুনুন’ মুক্তির আগে অমিতাভের অভিনয় করা দৃশ্যগুলি ছবি থেকে বাদ দিয়ে দেন শ্যাম। গুটি কতক দৃশ্যে কাঁচি চালানোর পর সেই ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

তাঁর কেরিয়ারে শশীর প্রভাব যে গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রকাশ্যে বহু জায়গায় স্বীকার করেছেন অমিতাভ নিজেই। সত্তরের দশকে ‘জঞ্জির’ মুক্তি পাওয়ার পর অমিতাভের অভিনয়যাত্রার পথ নতুন মোড়়ে ঘুরে যায়। ইন্ডাস্ট্রির ‘ব্যর্থ নবাগত তারকা’র তকমা সরিয়ে তিনি হয়ে গিয়েছিলেন বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’।

‘জুনুন’ ছবিতে শশীর সঙ্গে অমিতাভের অভিনয় দর্শক দেখতে না পেলেও এই তারকা-জুটি অসংখ্য বার একসঙ্গে বড় পর্দায় ধরা দিয়েছেন। ‘কালা পত্থর’, ‘শান’, ‘নমক হালাল’, ‘দিওয়ার’-এর মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ এবং শশী।

২০১৭ সালে ডিসেম্বর মাসে ৭৯ বছর বয়সে মারা যান শশী। গত অক্টোবর মাসে ৮২ বছরে পা দিয়েছেন অমিতাভ। ২০২৪ সালের জুন মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ছবি ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
সব ছবি: সংগৃহীত।