ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার সঙ্গে বিচ্ছেদ জল্পনার মধ্যেই সবাইকে চমকে দিয়ে আবার বিয়ে করলেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক শোয়েব মালিক। পাত্রী, পাকিস্তানি অভিনেত্রী সানা জাভেদ।
বিয়ের কথা শোয়েব নিজেই জানিয়েছেন। বিয়ের ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন পাত্র-পাত্রী, দু’জনেই। সানিয়া এখন ব্যস্ত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ধারাভাষ্য দিতে। তার মাঝেই বিয়ে সেরে ফেললেন শোয়েব।
শোয়েবের নতুন ঘরনি তথা পাক অভিনেত্রীকে নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ সৌদি আরবের জেড্ডায় সানার জন্ম। তাঁর মা এবং বাবা দু’জনেই পাকিস্তানি।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক সময় সানাদের পৈতৃক বাড়ি ছিল ভারতের হায়দরাবাদে। তবে পরে তাঁরা পাকিস্তানে চলে যান। ঘটনাচক্রে, শোয়েবের দ্বিতীয় স্ত্রী সানিয়ার শিকড়ও হায়দরাবাদেই।
সানার পড়াশোনা জেড্ডার ‘পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ থেকে। স্কুলের গণ্ডি পার করে পরিবারের সঙ্গে জেড্ডা ছেড়ে করাচিতে চলে আসেন তিনি। ভর্তি হন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
খুব কম বয়স থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সানা। ১৭-১৮ বছর বয়সে মডেল হিসাবেও নাম করেছিলেন।
২০১২ সালে পাক ধারাবাহিক ‘শেহর-ই-জাত’-এর মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা দেন সানা। এর পর আরও বেশ কয়েকটি উর্দু ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। তবে নজর কাড়েন ২০১৭ সালে ‘খানি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে।
‘খানি’তে অভিনয় করার সুবাদে বেশ কয়েকটি পুরস্কারও জিতেছিলেন সানা। উর্দু ধারাবাহিক ‘রুসওয়াই’ এবং ‘ডাঙ্ক’-এ অভিনয় করার পর সুঅভিনেত্রী হিসাবে প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন।
এখনও পর্যন্ত সানা মোট ২৫টি ধারাবাহিক, চারটি টেলিফিল্ম এবং চারটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করেছেন।
তবে শোয়েবের তৃতীয় বিয়ে হলেও এটি সানার দ্বিতীয় বিয়ে। ২০২০ সালের অক্টোবরে পাক গায়ক উমায়ের জসওয়ালকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী। দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাড়ম্বরপূর্ণ সেই বিয়ের আসর বসেছিল করাচিতে।
২০২৩ সালে উমায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় সানার। এর পরেই একে অপরকে মন দিয়ে ফেলেন শোয়েব-সানা। সানার জন্মদিনেও তাঁর সঙ্গে ছবি দেন শোয়েব। সেই ছবিতে তিনি লেখেন, “শুভ জন্মদিন বন্ধু সানা।” এর পরেই ক্রিকেটার এবং অভিনেত্রীকে নিয়ে জল্পনা আরও বাড়ে।
সানিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শোয়েব যে সানাকে বিয়ে করতে পারেন, তা নিয়ে চাপা গুঞ্জন ছিলই। তার মধ্যেই শনিবার চার এক হাত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এল। সানিয়ার আগে আয়েশা সিদ্দিকিকে বিয়ে করেছিলেন শোয়েব। ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
তবে সানাকে বিয়ে করলেও সানিয়ার সঙ্গে যে শোয়েবের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে এমন খবর প্রকাশ্যে আসেনি।
২০১০ সালে বিয়ে হয়েছিল সানিয়া এবং শোয়েবের। তাঁদের আলাপ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। শোয়েব গিয়েছিলেন পাকিস্তানের হয়ে ক্রিকেট খেলতে। আর সানিয়া সেই সময় ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনালে খেলতে গিয়েছিলেন। ব্রিসবেনেই পরিচয় হয় তাঁদের।
শোয়েব-সানিয়ার সেই আলাপ পরে প্রণয়ে পরিণত হয়। ২০১০ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। তাঁদের এক সন্তানও রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, বুধবার সানিয়ার একটি পোস্টে বিচ্ছেদের ইঙ্গিত ছিল। সানিয়া যে পোস্ট করেছিলেন তার অর্থ, ‘‘বিয়ে কঠিন। বিচ্ছেদও কঠিন। নিজের কঠিনটাকে বেছে নিন। স্থূলতা ভাল নয়। সুস্থ থাকাও কঠিন। নিজের কঠিনটা নিজেই বেছে নিন। ঋণের মধ্যে থাকা কঠিন। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন। নিজের কঠিনটা নিজেই বেছে নিন। যোগাযোগ রাখা কঠিন। যোগাযোগ না রাখাও কঠিন। নিজের কঠিনটাকে নিজেই বেছে নিন। জীবন কখনও সহজ নয়। এটা সব সময় কঠিন। কিন্তু আপনি আপনার কঠিনটা বেছে নিতে পারেন। বেছে নিন।’’
তারও আগে সমাজমাধ্যম থেকে শোয়েবের প্রায় সব ছবি মুছে ফেলেন ভারতের টেনিস তারকা। বর্তমানে একটি মাত্র ছবি রয়েছে। সেখানে সানিয়া এবং শোয়েবের সঙ্গে তাঁদের ছেলে ইজ়হান রয়েছেন। সেই ছবি বাদে শোয়েবের সব ছবি মুছে ফেলেন সানিয়া।
অন্য দিকে কিছু দিন আগে পর্যন্তও শোয়েবের ইনস্টাগ্রাম বায়োতে লেখা থাকত সানিয়ার স্বামী হিসাবে। এর পর নিজেকে একজন ‘সুপারউওম্যান’-এর স্বামী হিসাবেও উল্লেখ করেছিলেন শোয়েব। সেই বাক্যও সরেছে ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকে। এমনকি, পাক ক্রিকেটারের ইনস্টাগ্রামে সানিয়ার ছবিও খুঁজে পাওয়া যায় না।
গত বছর থেকেই সানিয়া এবং শোয়েবের সম্পর্কে চিড় ধরার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। সানিয়ার বাড়িতে ইফতার পার্টিতে ছিলেন না শোয়েব। ইফতার পার্টির ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দিয়েছিলেন সানিয়া। সেখানে ছেলে ইজ়হান-সহ পরিবারের বাকিরা ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের ক্রিকেটারকে দেখা যায়নি। তার পর থেকেই দু’জনের সম্পর্কের চিড়, ফাটলে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। তাঁদের বিচ্ছেদ নিয়েও চলছিল জল্পনা। সেই আবহেই প্রকাশ্যে এল শোয়েবের তৃতীয় বিয়ের খবর।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।