শনিবার রাত পোহালেই প্রাইমারি টেট। আগে ১০ ডিসেম্বর টেটের দিন ঘোষণা করেছিল পর্ষদ। জানিয়েছিল, ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত পরীক্ষা হবে। এর পর পর্ষদ জানায়, ১০ ডিসেম্বর পরীক্ষা হবে না। পরিবর্তে পরীক্ষা হবে ২৪ ডিসেম্বর। তবে পরীক্ষার সময়ে কোনও বদল হচ্ছে না। তিন লক্ষেরও বেশি টেট পরীক্ষার্থীর ভাগ্যপরীক্ষা হবে রবিবার।
টেট-এর আগে আনন্দবাজার অনলাইনে থাকছে প্রাইমারি টেটের খুঁটিনাটি। প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ, রবিবার। রবিবার দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে।
পর্ষদ জানিয়েছে, এ বছর ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৫৪ জন টেট দেবেন। তাঁদের মধ্যে যোগ্যদের বেছে নেওয়া হবে।
রাজ্যের মোট ৭৭৩টি কেন্দ্রে টেট হবে। যার মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্র কলকাতায়।
কলকাতার চেতলা গার্লস হাই স্কুল, যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, সরকারি স্পনসরড মাল্টিপারপাস বয়েজ স্কুল টাকি, বাগবাজার মাল্টিপারপাস গার্লস স্কুল এবং কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউশন (মেইন বয়েজ)—এই পাঁচ কেন্দ্রে টেট হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, প্রাথমিকের মোট ১১,৭৬৫টি আসন খালি রয়েছে। সেই আসনগুলিতে নিয়োগ হবে।
কলকাতার কেন্দ্রগুলিতে যাঁরা পরীক্ষা দিতে আসবেন, তাঁদের যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য সাহায্যের হাত বা়ড়িয়েছে কলকাতা মেট্রো। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য রবিবার অতিরিক্ত ট্রেন চলবে। ব্লু লাইনে (দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ) স্বাভাবিক থাকবে মেট্রো পরিষেবা। অন্য রবিবারগুলিতে ব্লু লাইনে ১৩০টি ট্রেন চলাচল করে। তবে টেটের কারণে ২৩৪টি ট্রেন চালানো হবে।
এক জন চাকরিপ্রার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় তাঁর কাছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা অ্যাডমিট কার্ড থাকা আবশ্যিক। পরীক্ষাকেন্দ্রে বৈধ অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে প্রবেশ না করলে, তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।
প্রাথমিক পর্ষদ জানিয়েছে, যে কোনও ধরনের লেখা কাগজপত্র, ভাঁজ করা কাগজের টুকরো, কাগজের বিট, জ্যামিতি/পেন্সিল বক্স, প্লাস্টিকের থলি, ক্যালকুলেটর, স্কেল, লেখার প্যাড, পেন ড্রাইভ, রাবার, লগ টেবিল, বৈদ্যুতিন পেন বা স্ক্যানার এবং কার্ডবোর্ড নিয়ে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করা যাবে না।
মোবাইল ফোন, ব্লুটুথ প্রযুক্তি থাকা যন্ত্র, ইয়ারফোন, মাইক্রোফোন, পেজার, হেলথ ব্যান্ডও নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না পরীক্ষার্থীরা। সঙ্গে রাখতে পারবেন না যে কোনও ধরনের ঘড়ি, ক্যামেরা, টাকা রাখার ব্যাগ, রোদ চশমা, সোনার অলঙ্কার।
এক কথায়, অসৎ উপায়ে পরীক্ষা দিতে সাহায্য করবে, এমন কোনও যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারবেন না পরীক্ষার্থীরা। কোনও পরীক্ষার্থী এই ধরনের যন্ত্র কাছে রাখলেই বিপদ। পরীক্ষা তো বাতিল হবেই, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নিতে পারেন কর্তৃপক্ষ।
কেমন ভাবে হবে পরীক্ষা? টেটের প্রশ্নের ধরন হবে ‘এমসিকিউ’। অর্থাৎ, প্রতিটি প্রশ্নের একাধিক বিকল্প থাকবে। যার মধ্যে সঠিক উত্তর নির্বাচন করতে হবে।
শিশু বিকাশ এবং শিক্ষাবিদ্যা (চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পেডাগগি), ভাষা-১ (বাংলা/হিন্দি/ওড়িয়া/তেলুগু/নেপালি/সাঁওতালি/উর্দু), ভাষা-২ (ইংরেজি), গণিত এবং পরিবেশবিদ্যার উপর প্রশ্ন করা হবে। প্রতিটি বিষয়ে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। অর্থাৎ, মোট ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
ভাষার প্রশ্ন বাদে প্রশ্নপত্র হবে বাংলা এবং ইংরেজিতে। প্রতিটি প্রশ্নের মান এক। কোনও ‘নেগেটিভ মার্কিং’ থাকবে না।
এক জন সাধারণ প্রার্থী ১৫০-এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য উত্তীর্ণ হবেন। তবে বিশেষ তালিকাভুক্ত (যেমন, সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, প্রাক্তন সৈনিক ইত্যাদি) পরীক্ষার্থীরা কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ পেলেই টেট পাশ করবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল জানিয়েছেন, টেট উত্তীর্ণ হলেই যে চাকরি পাওয়া যাবে, তেমনটা নয়। এটি নিয়োগ পাওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতার মাপকাঠিগুলির মধ্যে একটি।
গৌতম আরও জানিয়েছেন, টেট-এর শংসাপত্রের কোনও বৈধতাসীমা নেই। তবে এক জন টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী যদি আরও ভাল ফল করতে চান, তা হলে ভবিষ্যতে আবার টেট-এ বসতে পারেন।
টেট শেষে এক জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে কী কী বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন, তা-ও জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদ জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র, ওএমআর উত্তরপত্রের কপি এবং পরীক্ষার হলে পরিদর্শকের সই করা অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিএড যাঁরা করেছেন, তাঁরা এ বছর টেটে বসতে পারবেন না। তবে ডিএলএড-সহ প্রাথমিক শিক্ষকের অন্য প্রশিক্ষণ যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা টেট দিতে পারবেন। তা ছাড়া, গত বছরের টেটে যাঁরা অকৃতকার্য হয়েছিলেন, তাঁরাও নতুন করে এ বছর ফর্মপূরণ করতে পারবেন।
গত বছরের মতো এ বছরও পরীক্ষার নিরাপত্তায় কোন ত্রুটি রাখতে চাইছে না প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সরকারি সূত্রে খবর, সিসিটিভির নজরদারি থেকে বায়োমেট্রিক উপস্থিতি সব রকম ব্যবস্থা থাকছে পরীক্ষার্থীদের জন্য। নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে খবর, গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পর্ষদের তরফ থেকে ব্যাখ্যা, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে যে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিল সেখানে ডিএলএড এবং বিএড-এর সকল যোগ্য প্রার্থী আবেদন করতে পেরেছিলেন। তবে এ বছর শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ডিএলএড উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরাই শুধু আবেদন করতে পারবেন। তাই আবেদনের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। পর্ষদ জানিয়েছে, এ বছর ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৫৪ জন পরীক্ষা দেবেন।
২০২২ সালে ডিএলএড এবং বিএড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন প্রায় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার জন পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে থেকে প্রায় ৯৭ হাজার পরীক্ষার্থী এ বছর প্রাথমিকের টেটে আবেদন করতে পারবেন না বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। পাশাপাশি পর্ষদের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, এ বছর শূন্য আসনের সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর দীর্ঘ পাঁচ বছর বাদে প্রাথমিকের টেট হয়েছিল সেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ছ’লক্ষ ৯০ হাজার। আর পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ছ’লক্ষ ২০ হাজার পরীক্ষার্থী। গত বছর ১১ ডিসেম্বর টেট হয়েছিল।
সব ছবি: আনন্দবাজার অনলাইন আর্কাইভ থেকে।