Art Exhibition

অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রকাশে তিন শিল্পী

বর্ণানুক্রমিক তালিকায় না গিয়ে, সরাসরি যে সব ছবি কাছে টেনে চোখের তৃষ্ণা মেটায়, তার অন্যতম শিরোপায় রয়েছেন শ্রদ্ধেয় স্বনামধন্য শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
পিয়ালী গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪২
দেবীবন্দনা: গ্যালারি লা মেয়ার আয়োজিত প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

দেবীবন্দনা: গ্যালারি লা মেয়ার আয়োজিত প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

শারদোৎসবের প্রাক্কালে কলকাতার অরবিন্দ ইনস্টিটিউটের নিজস্ব প্রদর্শকক্ষ গ্যালারি লা মেয়ার আয়োজন করেছিল দুর্গোৎসব নিয়ে এক প্রদর্শনী। ইনস্টিটিউটের তরফ থেকে এই প্রদর্শনী প্রথম আরম্ভ হয় ২০০৭ সালে। আধো-আলো পরিবেষ্টিত গ্যালারির সুবৃহৎ পরিসর, শিল্পীদের রচনায় হয়ে উঠেছিল একটি মিউজ়িয়াম। শিল্পে দৃষ্টান্ত স্থাপনে বরাবরের মতোই স্বাক্ষর রেখেছেন বেশ কয়েকজন চিত্রকর ও ভাস্কর। এ বারের ‘দুর্গা’ শিরোনামের প্রদর্শনীতে যথার্থ মর্যাদায় গ্রহণ করা হয় মোট তিরিশ জন বিশিষ্ট শিল্পীর কাজ।

Advertisement

বর্ণানুক্রমিক তালিকায় না গিয়ে, সরাসরি যে সব ছবি কাছে টেনে চোখের তৃষ্ণা মেটায়, তার অন্যতম শিরোপায় রয়েছেন শ্রদ্ধেয় স্বনামধন্য শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। অসুস্থতার পরোয়া না করে উপহার দেন ১৪"/১২" ডাইমেনশনের ড্রয়িং ‘দুর্গা ফ্যামিলি’। অনায়াস রেখার মাহাত্ম্যে অবয়বী জোটের পরিপ্রেক্ষিত চোখ অনুসরণ করে বিলীয়মান হয় আনুমানিক বিন্দুতে। গুঁড়ো হলুদের একফালি লেপন, ছবিটির স্বর্গীয় অনুভব নিমেষে বাড়িয়ে তোলে। নকশার ক্লাসিক সৌজন্যে, সমভঙ্গের ‘মা দুর্গা’র ফর্ম যে এত নিখুঁত মাপে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, পরপর তার নিদর্শন রেখে চলেছেন শিল্পী সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। চিত্রভানু মজুমদারের ছবিতে দেবীর উপস্থিতি না থাকলেও, সাদা-কালোর সংঘর্ষে আসন্ন বিপর্যয়ের সঙ্কেত ফুটে ওঠে।

দেবীর ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশে বেশ কিছু কাজ ছিল দেখার মতো। যেমন শিল্পী অতীন বসাকের ‘দেবী’। সামান্য রঙের টেম্পারায় আটপৌরে মায়াবী রূপ ফুটে ওঠে ছবির মধ্যবর্তী অংশে। অ্যাক্রিলিক-কৃত বড় ক্যানভাসে বিশিষ্ট শিল্পী দেবব্রত চক্রবর্তীর জলীয় অনুভূতির ‘অভয়া’ প্রতিমাকল্পে আছড়ে পড়ে নিগ্রহের আর্তনাদ। প্রায় একই অনুভবে সন্ত সরকারের ‘দুর্গা উইথ আস’-এর দৃষ্টিতে অনুরণিত হয় একরাশ ধিক্কার। দেবীর ভয়ঙ্করী তেজের সঙ্গে, দু’পাশে বর্তুল বিশেষ অলঙ্কার সহযোগে চমৎকার ভারসাম্য ফুটিয়েছেন সৌরভ শী।

বিশিষ্ট শিল্পী সৌমিত্র কর, তাঁর মিনিয়েচারধর্মী ‘মা দুর্গা’র (আলট্রামেরিন ব্লু-র সাপোর্টে) স্থায়ী রূপ প্রতিষ্ঠা করেছেন পটচিত্রের বিশুদ্ধ ঘরানায়। টেম্পারায় ‘আমার দুর্গা’ রূপায়ণে প্রবীণ চিত্রশিল্পী শুক্তিশুভ্রা প্রধানের সরল উচ্ছ্বাস দর্শকের মন ভিজিয়ে দেয়। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অপরূপা’র সুন্দর কম্পোজ়িশন কিছুটা ঢাকা পড়ে যায় বর্ণের অতিরঞ্জনে। বাল্যকালে বহুরূপী সাজা খেলার ছকে, সন্দীপ ভট্টাচার্যর ‘তিলোত্তমার দুর্গা’ বর্ণিত হয়েছে স্যাটায়ার ভঙ্গিতে।

২১ ইঞ্চির ব্রোঞ্জ-নির্মিত দুর্গার আত্মরক্ষায়, প্রসিদ্ধ ভাস্কর নিরঞ্জন প্রধানের পটুত্বকে বারবার কুর্নিশ জানাতে হয়। ফাইবার গ্লাসে সিম্বলিক আধারে দিলীপ পালের ‘দুর্গা’র উৎসারিত শক্তিতে ফুটে ওঠে বিশেষ যোগমুদ্রা। শিল্পী অখিল চন্দ্র দাসের ব্রোঞ্জের তৈরি ‘দুর্গা’র যুদ্ধংদেহী মনোভাবে অগোচরে ধরা পড়ে বিজয় উল্লাসের বিপরীত স্রোত।

ধারাবাহিকতার নিরূপণে উক্ত দুর্গা সিরিজ়, বর্তমানে কলকাতার অন্যতম সেরা দুর্গোৎসব প্রদর্শনী বলা যেতে পারে। নির্ধারিত আট দিনের সময়সীমায় অনেকেই এই দুর্লভ শোটি দেখে উঠতে পারেননি।

আরও পড়ুন
Advertisement