বড়দিন থেকে বর্ষশেষ— উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হবে শহর। প্রিয়জনদের নিয়ে কোথায় খেতে যাবেন? ফাইল চিত্র।
শীতের চাদর জড়িয়ে নিয়েছে ডিসেম্বরের শহর। বড়দিনের সাজগোজ শুরু হয়ে গিয়েছে তিলোত্তমার অলিগলিতে। বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের উদ্যাপনের জন্য সাদর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বাঙালি। সপ্তাহ ধরেই উৎসবের মেজাজ থাকবে তিলোত্তমায়। আর বাঙালির কাছে উৎসব মানেই জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। বিরিয়ানি, চাইনিজ় তো অনেক হল, এখন রকমারি ফিউশন খাবারেরই চল। বচ্ছরকার শীত-পার্বণে ফিউশন খাবারের স্বাদ চেখে ছক ভাঙছে একুশ শতকের বাঙালি। এ বছর বড়দিন ও বর্ষশেষের উদ্যাপনে যদি নতুন কিছু চেখে দেখতে হয়, তা হলে শহরের কোন কোন ঠিকানায় ঢুঁ মারবেন, জেনে নিন।
বন ফেম
শীতের তাজা সব্জির সঙ্গে চিকেন-মটনের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে বন ফেম। খাবার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা বড়দিনে এক বার যেতেই পারেন কলকাতার রাসবিহারী এলাকার এই রেস্তরাঁয়। শীতের টাটকা পেঁয়াজকলি দিয়ে রাঁধা মুরগির মাংস দিয়ে ইয়াখনি পোলাওয়ের স্বাদ চাখার আগে স্টার্টারে সাহস করে অর্ডার দিয়েই দিন টার্কির স্যালাড। ভোজনবিলাসী বঙ্গসন্তানদের খাঁটি মার্কিনি স্বাদ চাখাতে রীতিমতো সাবেকি স্বাদের টার্কি রোস্ট, টার্কি স্যালাড সাজিয়ে দেওয়া হবে টেবিলে। পারদপতনের সঙ্গে মাংসপ্রেমীদের বচ্ছরকার টার্কি-বিলাস জমে উঠবে আরও। স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য দারচিনির গুঁড়ো মেশানো হট চকোলেট, স্ট্রবেরির স্মুদিও থাকছে। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে ১০০০ টাকার মতো।
ব্ল্যাক ব্রিক ক্যাফে
বয়স বেশি নয়। তার মধ্যেই তরুণ প্রজন্মের পছন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠেছে এই ব্ল্যাক ব্রিক ক্যাফে। ইটালি, আমেরিকা, মায়ানমার এবং কন্টিনেন্টাল খাবারের বিপুল সম্ভার রয়েছে এখানে। খাস কলকাতায় বসে ইটালীয় স্বাদের পিৎজ়ার স্বাদ পেতে হলে ব্ল্যাক ব্রিক ক্যাফেতে ঢুঁ মারতেই পারেন। চেখে দেখতে পারেন পেরি পেরি সিজ়লার, বার্মিজ় পদ চিকেন খাও সুয়ে, ডায়ানামাইট শ্রিম্প ট্যাকো। যাঁরা নিরামিষ খাবার খান, তাঁদের জন্য রয়েছে পার্মেশিয়ান পোট্যাটোজ়, ভেজটেবিল স্প্যাগেটি। দু’জনের খাওয়াদাওয়ার খরচ পড়বে ১২০০ টাকা।
প্যাপরিকা গুরমে
শীতের বিকালে মাঝেমাঝে মুখরোচক খাবার খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখা চাই। স্বাদ এবং স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই রেস্তরাঁ শীতকালে নতুন করে মেনু সাজিয়েছে। এখানে থাকছে অ্যালিয়ো ওলিয়ো ব্রুসেল স্প্রাউটস, চিজ় ফনডিউ, গ্রিন পিজ় হামাস স্পুনস। টোম্যাটো রিকোটা টার্ট, সফট্ ব্যাগেলস উইথ ক্রিম চিজ়, জ্যাকেট পোট্যাটো ফিলড্ উইথ কর্ন অ্যান্ড চিজ়-এর মতো খাবারও পেয়ে যাবেন এখানে। খাবারের দাম শুরু হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে।
ফ্যাব্রিকা অরিজ়িন্যাল
শহরে ইটালীয় খাবার পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি রেস্তরাঁয়। সেই সব খাবারের মধ্যে পিৎজ়া আর পাস্তার জনপ্রিয়তাই বেশি। অতিচেনা ওই দুই ইটালীয় পদের বাইরেও রয়েছে আরও নানা রকম খাবার, যা পাওয়া যায় হাতেগোনা রেস্তরাঁতেই। তারই মধ্যে একটি হল পার্ক স্ট্রিটের ফ্যাব্রিকা অরিজ়িন্যাল। গানোচি বাটার সেজ, মাফালডিন রাগু, অ্যাসপারাগাস রিসোটো এবং শেষ পাতে এই রেস্তরাঁর খাস তিরামিসু চেখে দেখতে ভুলবেন না। দু’জনের জন্য খরচ পড়তে পারে আড়াই হাজার টাকার মতো।
দ্য ফ্ল্যামবয়েন্ট
বড়দিনে পার্টির আমেজ চাইলে পার্ক স্ট্রিটের ফ্ল্যামবয়েন্ট আপনার জন্য আদর্শ। রেস্তরাঁর মেনুতে পাবেন বিটরুট শিকমপুরি কবাব, ক্রিমি গোট চিট ক্যানোপি, সিগারে বোরেক আ লা কলকাতা, লেমনগ্রাস মুর্গ টিক্কা, চিকেন চারকোল ডাম্পলিং, মালয়েশিয়ান ফিশ ডিমসাম, মুর্গ বাদামি শোরবা, হাবিবি পিৎজ়ার মতো ভিন্ন স্বাদের খাবার। গন্ধরাজ মেলন মোহিতো ও শেষ পাতে নলেন গুড় দিয়ে ভিয়েতনামিজ় ক্রিম ক্যারামেল খেতে ভুলবেন না। সঙ্গে থাকবে সুরাপানের ব্যবস্থাও। দু’জন খেলে খরচ পড়তে পারে ২৪০০ টাকার মতো।
সমারসল্ট
বড়দিনে বাড়ির খুদে সদস্যকে নিয়ে যদি রেস্তরাঁয় যেতে চান, তা হলে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের সমারসল্টে ঢুঁ মারতেই পারেন। বর্ষশেষের উদ্যাপনের জন্য হরেক রকম সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবারের পসরা সাজাচ্ছে এই রেস্তরাঁ। মেনুতে থাকছে ক্রিমি টাফ্ল এবং মাশরুম স্যুপ, ক্লাসিক ক্রিম টম্যাটো স্যুপ, গ্রিল্ড কটেজ় চিজ়ের সঙ্গে নানা রকম শীতের সব্জি সতেঁ করা। ফ্লাফি ফ্রুট প্যানকেকও দিব্যি চেটেপুটে খাবে খুদে। প্ল্যাটারের দাম শুরু হচ্ছে ২৭৫ টাকা থেকে। তা ছাড়া সোম থেকে বৃহস্পতিবার— প্রতি দিনই থাকছে কোনও না কোনও আকর্ষণীয় অফার।
বার্মা বার্মা
নিরামিষ খাবারের এই রেস্তরাঁয় বড়দিন উপলক্ষে থাকছে বার্মিজ় ফ্লেভারের বিশেষ প্ল্যাটার। পামকিন সিড ক্র্যাকার, মালার স্টার ফ্রাই সস, খাও সুয়ে পেস্ট কারির পাশাপাশি এঁদের বিখ্যাত ‘ওহ নো খাও সুয়ে’ থাকছে। মোহিঙ্গা ন্যুডল স্যুপ, সামুজ়া হিঞ্চোর পাশাপাশি আরও নানা বার্মিজ় খাবারের স্বাদ চাখতে যেতেই পারেন এই রেস্তরাঁয়। আকর্ষণীয় অফার চলবে ৩১ তারিখ অবধি।
লা ম্যাকারিও ক্যাফে
এলগিন রোডের এই ক্যাফেতে গেলে হার্ট শেপ্ড পিৎজ়া, স্ট্রবেরি চিজ় কেক, চিজ় প্ল্যাটার, সিজ়লিং কিনোয়া উইথ ফরেস্ট মাশরুম ক্রিম চেখে দেখতেই পারেন। শেষ পাতে গোল্ডেন অ্যালপ পাই, ডার্ক চকোলেট মাগ কেক, উইন্টার বেলজ়িয়ান ডার্ক হট চকলেট খেতে ভুলবেন না। সুন্দর সাজানো ক্যাফেটিতে বড়দিনের সন্ধ্যাটি ভালই কাটবে।
বলরাম মল্লিক এবং রাধারমণ মল্লিক
শীত পড়তেই নতুন মিষ্টির সম্ভার সাজিয়েছেন এঁরা। দুধপুলি, কাঁচাগোল্লা, মনোহরা, মৌসু্মি সন্দেশ, নলেন গুড়ের পাতুরি সন্দেশ, নলেন গুড়ের মালাই চমচম— শীতে মিষ্টিমুখ যাতে জমজমাট হয়, সেই জন্য নানা বাহারি মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে। মেনুতে থাকছে আরও চমক। নলেন গুড়ের কুলফি, নলেন গুড়ের কেক, নলেন গুড়ের কাজু রোল-সহ অনেক কিছুই। দু’জনের জন্য মিষ্টি কিনতে খরচ হবে ৩০০ টাকার মতো।