ফেলে দেওয়া জিনিস জমানোও শখ? ছবি: সংগৃহীত।
রাজারাজড়াদের বিচিত্র সব শখের কথা শোনা যায়। তা বলে বাদ যান না সাধারণ মানুষ। কারও শখ ডাকটিকিট জমানো, কারও আবার দেশলাই বাক্স, মুদ্রা। প্রাচীন পুঁথি, রকমারি কলম সংগ্রহও থাকে তালিকায়।
শখ যে কত রকমের হয়, তা দেখা যায় সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলে। কেউ বালি দিয়েই ফুটিয়ে তোলেন নিখুঁত কারুকাজ, কারও হাতযশে জীবন্ত হয়ে ওঠে রঙিন মাটি দিয়ে তৈরি গ্রামীণ জীবন, নিত্য যাপনের গল্প। সেই তালিকায় রয়েছে আরও এক শখ। ফেলে দেওয়া, আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বহীন জিনিসপত্র সযত্নে সাজিয়ে খাতা ভরানো। তা নিয়েই ইদানীং চর্চা। সে খাতার পাতা ওল্টালে সময়ের সরণি বেয়ে পৌঁছনো যায় হারিয়ে যাওয়া দিনে। ফেলে দেওয়া, অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে স্মৃতি আগলে রাখার, নিজস্ব মননশীলতা ফুটিয়ে তোলার এমন শখেরই নাম ‘জাঙ্ক জার্নালিং’।
কী ভাবে তৈরি হয় জাঙ্ক জার্নাল?
নামেই অনুমেয়, অপ্রয়োজনীয়, ফেলে দেওয়া জিনিস ঠাঁই পায় সেখানে। হাতে তৈরি করা এই খাতায় থাকতে পারে ছবি, বেড়ানোর স্মৃতি, কোনও প্রিয় মানুষের দেওয়া ফুল, চিঠি, হাতের আঁকা-সহ অনেক কিছুই। পারিবারিক স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই ‘স্ক্র্যাপবুক’ তৈরি করেন। যেখানে জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলির ছবি, বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। জাঙ্ক জার্নাল সেই স্ক্র্যাপবুকের চেয়েও বেশি কিছু। শুধু ছবি নয়, অতীতের ছোঁয়াও থাকে এতে। বেড়িয়ে আসার পর ট্রেন, বিমান হোক বা মিউজ়িয়ামের টিকিট, পোস্টকার্ড, স্যুভেনির— অনেক কিছুরই ঠাঁই হয় সেই খাতায়। হাতে আঁকা ছবি, কোনও লেখা বিবরণ যেটা ঠিক বলে মনে হয়, সেটাই যোগ করা যায় এতে।
কোথায় এর গুরুত্ব?
ফেলে দেওয়া জিনিস তবু ফেলার নয়। ছোটখাটো জিনিসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগকে উস্কে দেয় এমন জার্নাল। দশ বছর আগে ভ্রমণের টিকিট মুহূর্তে মনে করিয়ে দিতে পারে সে সময়ের গল্পগাথা। হারিয়ে ফেলা কোনও মানুষের কথা। ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে অতীতের স্মৃতিমুখর কোনও দিনে। এখানেই এর বিশেষত্ব। সাধারণ জার্নালে মনের ভাবনা লিপিবদ্ধ করেন লেখক। তবে জাঙ্ক জার্নালের বৈশিষ্ট্য হল এখানে মনের ভাব, রুচি পছন্দ রয়ে যায় ফেলে দেওয়া জিনিসের মোড়কে।
কেন জনপ্রিয়তা বাড়ছে?
একলা জীবনে অখণ্ড অবসরে এমন শখ শুধু সময় কাটাতে নয়, আবেগঘন মুহূর্তকেও পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। এর সঙ্গে জুড়ে থাকে মননশীলতা, শিল্পবোধ, সৃজনশীলতা। ‘জাঙ্ক জার্নালিং’-এ দড় বিদেশের শিল্পী ক্রিশ্চিনা আর্গনিশ বলছেন, ‘‘বিষয়টিকে আনন্দের ছলে নেওয়া যেতে পারে। প্রতি দিনের জীবনযাপন থেকে জিনিসপত্র বেছে নেওয়া এবং ফেলে দেওয়া জিনিসের সুন্দর এবং অর্থবহ উপস্থাপনাই এর মূল কথা।’’ আরও একটি দিক রয়েছে, বর্জ্যকে রুচিসম্মত ভাবে কাজে লাগানো।
কী ভাবে শুরু করতে পারেন ‘জাঙ্ক জার্নালিং’?
১. বাঁধাই করা খাতা, নোটবুক— পছন্দের যে কোনও জিনিস বেছে নিতে পারেন এর জন্য। পত্রিকা থেকে কাটা ছবি বা শুকিয়ে যাওয়া ফুল সংগ্রহ করে রাখার জন্য আঠা থেকে ছুঁচ-সুতো যে কোনও জিনিসই ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. মূল উপকরণ জোগাড় হলে পরের ধাপে আসবে ভাবনা। কোন বিষয়বস্তু রাখতে চান সেখানে। ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখতে জার্নাল তৈরি করতে পারেন আবার প্রিয়জনের স্মৃতি আঁকড়ে ধরতেও তা করা যায়। কেউ দেশ-সমাজে হওয়া ঘটনাবলিকেও স্থান দিতে পারেন। কী ভাবে সেটি বানাতে চাইছেন, তা ঠিক করে নেওয়া দরকার।
৩. অপ্রোয়জনীয় জিনিসের ভিড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি বেছে নেওয়ার কাজ প্রতি দিন করতে হবে। সে সব কোনও একটি বাক্স বা বড় খামে ভরে রাখুন। তার পর সময়মতো সেটি খাতায় কী ভাবে তুলে ধরবেন ভাবতে বসুন। ফুল, কাপড়ের টুকরো এমন অনেক কিছুই সংগ্রহ করা জিনিসগুলিকে সাজিয়ে তুলতে কাজে লাগাতে পারেন। হাতের আঁকাও তাতে থাকতে পারে। থাকতে পারে মনের কথা।
৪. জিনিসপত্র সংগ্রহ করলেই হবে না, নিয়ম করে তার কাজও সামলাতে হবে। ছুটির দিন বা অবসরে নিয়ম মেনে কাজটি করুন।