শহরের বিভিন্ন প্রান্তের নিশাচর কিছু রেস্তরাঁ অপেক্ষা করে ভোজনরসিকদের রসনাতৃপ্তি দিতে। ছবি: সংগৃহীত।
খাবারের প্রতি প্রেম সকলের থাকে না। কিন্তু যাঁদের থাকে, সেই ভালবাসা হয় নিখাদ। ভোজনরসিকদের কাছে নানা স্বাদের খাবার চেখে দেখাই যেন আলাদা একটা উদ্যাপন। ঘড়ি ধরে যাঁরা খাওয়াদাওয়া করেন, তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু এর বাইরেও অনেকে রয়েছেন, যাঁদের বিরিয়ানি খেলেই মনখারাপ সেরে যায়। সারা দিনের অফিসের ক্লান্তি কেটে যায় চিলি ফিশের ধোঁয়ায়। মাঝরাতে হঠাৎ যাঁদের ইচ্ছা করে চিকেন রোলে কামড় বসাতে। এমন অনেকেই আছেন রাতদুপুরেও শহর ঢুঁড়ে বেড়ান ভাল স্বাদের খোঁজে। আবার রাতের কলকাতার আমেজ নিতেও খেতে বেরিয়ে পড়েন অনেকে। আর শহরের বিভিন্ন প্রান্তের নিশাচর কিছু রেস্তরাঁ অপেক্ষা করে ভোজনরসিকদের রসনাতৃপ্তি দিতে। আইটিসি, হায়াত, তাজ বেঙ্গলের মতো বড় হোটেলগুলিতে অনেক রাত পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলি ছাড়া কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এমন কিছু রেস্তরাঁ, যেগুলি প্রায় সারা রাতই খোলা থাকে। রইল তেমন কয়েকটি রেস্তরাঁর হদিস।
গৌতমস
বহু বছরের পুরনো দোকান। জনপ্রিয়তা এখনও একই রকম। মালাই চা থেকে রুটি তরকা— সবই মিলবে এই দোকানে। যত রাত বাড়ে, এই দোকানের সামনে ভিড় যেন আরও জমাট বাধে। বাইপাস ধরে গাড়ি ছুটিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন হয়তো। গাড়ির জানলা দিয়ে গৌতমস চোখে পড়লে, এক বার অন্তত না থেমে উপায় নেই। চা, ফিশ ফ্রাই খেয়ে তবে আবার চলা শুরু। রোজ রাত ২.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। যাওয়া-আসার পথে তো বটেই, বন্ধুদের সঙ্গেও আসতে পারেন বাইপাসের ধারের এই দোকানের খাবার চেখে দেখতে।
জয়হিন্দ ধাবা
ভবানীপুরের এই ধাবার বয়স কম নয়। কলকাতার বুকে যে কয়েকটি ধাবা রয়েছে, জয়হিন্দ তার মধ্যে অন্যতম। রোজ ভোর ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ফলে তাড়াহুড়ো করার কোনও দরকার নেই। তবে ভিড় থাকে। ফলে গেলেই টেবিল পাওয়া না-ও যেতে পারে। একটু অপেক্ষা করতে হবে। বাটার নান, চিকেন তন্দুরি, তরকা, কবাব, র্যাপ, প্রন রাইস, মটন সেজওয়ান নুডলস— শীতের রাতে হঠাৎই জমিয়ে ভূরিভোজের ইচ্ছা হলে চলে আসতেই পারেন এই ধাবায়।
বলবন্ত সিংহ ধাবা
হরিশ মুখার্জি রোডের এই ধাবা পরিচিতি, কলকাতার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবারের এই ধাবায় সারা রাত ধরে মানুষের আসা যাওয়া লেগেই রয়েছে। তবে এখানকার চা বিখ্যাত। কলকাতার চা-প্রেমীরা ভিড় করেন এই ধাবায়। ভোর ৪-৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। চা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে পেয়ে যাবেন শিঙাড়া, কচুরি, পনির বাটার মসালা, কুলচা, ডাল মাখানি। এই তালিকা আরও লম্বা। শীতের রাতে যদি হঠাৎই গাঢ় দুধের সর দেওয়া চা খাওয়ার ইচ্ছা জাগে, চলে আসতে পারেন এই ধাবায়।
কুং পাও
ঘড়ির কাটা বলছে, রাত বেশ গাঢ় হয়েছে। অথচ চাইনিজ খাবারের জন্য মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কোনও কিছু না ভেবেই বেরিয়ে পড়তে পারেন চিনা খাবারের রেস্তরাঁ ‘কুং পাও’-এর উদ্দেশে। অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে, রেস্তরাঁ বন্ধ হয়ে যাবে ভেবে ঘাবড়াবেন না। পার্ক স্ট্রিট এবং সল্টলেকের দু’টি জায়গায় এই রেস্তরাঁ রয়েছে। রাত ৩.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। মোমো, রাইস নুডলস, মাঞ্চুরিয়ান, চিলি মাশরুম তো পাবেনই, সেই সঙ্গে পেয়ে যাবেন কুং পাও প্রন, চিলি ফিশ গ্রেভির মতো সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবারও।
জ্যাম হাউস
ভারতীয়, ইটালিয়ান এবং চিনা— তিন ধরনের খাবার পেয়ে যাবেন এলগিন রোডের এই রেস্তরাঁয় এলে। ভোর ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে জ্যাম হাউস। রাত বাড়লে এখানে ভিড়ও বাড়ে। তাই অনেক রাতে খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে আগে থেকে রেস্তরাঁয় টেবিল বুক করে রাখতে পারেন। তাতে আপনারই সুবিধা হবে।
ইন্ডিয়া রেস্তরাঁ
বিরিয়ানি খেতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের কাছে কী বা দিন, কী বা রাত। শীতের রাতে যেন বিরিয়ানির প্রতি ভালবাসা আরও বেড়ে যায়। এমন কোনও রাতে যদি বিরিয়ানি খেতে প্রচণ্ড ইচ্ছা করে, তা হলে চলে যেতে পারেন খিদিরপুরের ‘ইন্ডিয়া রেস্তরাঁ’-এ। রাত দুটোর সময়েও পাতে পড়বে গরম গরম বিরিয়ানি। সেই সঙ্গে স্বাদ নিতে পারেন চিকেন চিজ কবাব, চিকেন টিক্কা কবাব, চিকেন মালাই কবাবের।
হন্ডোস
দক্ষিণে যে রেস্তরাঁগুলি অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, যোধপুর পার্কের ‘হন্ডোস’ তার মধ্যে অন্যতম। কলকাতার দক্ষিণে যাঁরা থাকেন, রাতে খিদে পেলে আসতেই পারেন এখানে। চিজ গার্লিক ব্রেড থেকে ধোঁয়া ওঠা ফ্রায়েড স্মোকড বেকন, বিদেশি স্যালাড থেকে ফিশ কটেজ চিজ বার্গার— সবই পেয়ে যাবেন এই রেস্তরাঁয়। সারা রাত খোলা থাকে। মধ্যরাতের হালকা খিদে মেটানোর ঠিকানা হতে পারে হন্ডোস।