Lady Justice of India

বিনা পরামর্শেই বদলে গেল ন্যায়ের প্রতীক! সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা জানতে চান, কোন যুক্তিতে এমন হল?

নতুন প্রতীকে ‘লেডি জাস্টিসের’ চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছে। মূর্তির হাতে তরবারির বদলে উঠেছে সংবিধান। অন্য হাতে দাঁড়িপাল্লাটি এক থাকলেও বদলে দেওয়া হয়েছে লেডি জাস্টিসের পোশাক-পরিচ্ছদ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৩৬
ভারতের ন্যায়ের নতুন প্রতীক সপ্তাহখানেক আগেই উন্মোচন করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি।

ভারতের ন্যায়ের নতুন প্রতীক সপ্তাহখানেক আগেই উন্মোচন করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি। ছবি: সংগৃহীত।

সপ্তাহখানেক আগেই আমূল বদলে গিয়েছে ভারতের ন্যায়ের প্রতীক। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় দেশের শীর্ষ আদালত চত্বরে সেই মূর্তির উন্মোচনও করেছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সংগঠন দ্য সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন জানতে চেয়েছে তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোন যুক্তিতে ওই সমস্ত পরিবর্তন আনা হল? সিনিয়র আইনজীবী এবং রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বলের নেতৃত্বাধীন ওই আইনজীবী সংগঠনের এগ্‌জ়িকিউটিভ কমিটি বলেছে, ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের পাশাপাশি বারেরও সমান গুরুত্ব রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, বদল আনার আগে বিষয়টি বারকে জানানোরও প্রয়োজন মনে হল না কেন? এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা বুঝতেই পারছি না ওই সমস্ত বদলের কারণই বা কী।’’

Advertisement

নতুন প্রতীকে ‘লেডি জাস্টিসের’ চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছে। মূর্তির হাতে তরবারির বদলে উঠেছে সংবিধান। অন্য হাতে দাঁড়িপাল্লাটি এক থাকলেও বদলে দেওয়া হয়েছে লেডি জাস্টিসের পোশাক-পরিচ্ছদ। নতুন মূর্তিটির অনেক বেশি ভারতীয়করণ করা হয়েছে, তাকে ভারতীয় দেবীর মতো সাজগোজ করানো হয়েছে। গ্রিক স্থাপত্যটির পরনে থাকা গাউনের বদলে নতুন মূর্তিকে পরানো হয়েছে শাড়ি, নানা রকম অলঙ্কার, এমনকি, মাথায় ভারতীয় দেবদেবীদের মতো মুকুটও। ন্যায়ের প্রতীকের বদলকে সমর্থন করেও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মেনে নিয়েছিলেন, ন্যায়ের প্রতীকের ‘অনাবশ্যক হিন্দুত্বকরণ’ হয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ন্যায়ের প্রতীককে ভারতীয় দেবীর মতো পোশাক না পরালেও চলত। ওই অনাবশ্যক হিন্দুত্বকরণ না করলেও হত। হাতে সংবিধান তুলে যে গুরুত্ব অর্পণ করা হয়েছে, পরিধানে ওই বদল ঘটানোয় তার তাৎপর্য কিছুটা হলেও লঘু হয়ে গিয়েছে।’’ সিব্বলের নেতৃত্বাধীন আইনজীবীরাও বদলের যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রস্তাবে তাঁরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে সাম্প্রতিক কালে এমন অনেক বদলই হচ্ছে বার অ্যাসোসিয়েশনকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে।

সিব্বলেরা বলেছেন, ‘‘বারের আপত্তি সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের পুরনো বিচারপতিদের গ্রন্থাগারে কিছু দিন হল একটি সংগ্রহশালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অথচ বার প্রথম থেকেই বলে আসছি, ওখানে বারের সদস্যদের জন্য একটি ক্যাফেটেরিয়া, বৈঠকখানা এবং গ্রন্থাগার তৈরি করা হোক।’’ তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের মতো উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্য মিউজ়িয়াম তৈরি করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বারের আইনজীবীরা।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রতীক এবং পতাকাতেও বদল আনা হয়েছে। নীলরঙা নতুন পতাকায় রয়েছে অশোক চক্র, সুপ্রিম কোর্ট ভবন এবং সংবিধানের ছবি। নীচে লেখা রয়েছে একটি সংস্কৃত শ্লোক— ‘ইয়াতো ধর্মস্ততো জয়’। অর্থাৎ। যেখানে ধর্ম সেখানেই জয়।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের দফতর সূত্রে খবর, প্রধান বিচারপতি চান ভারতীয় বিচারব্যবস্থাকে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিকতার রীতি-রেওয়াজ থেকে বার করে আনতে। যদিও বার অ্যাসোসিয়েশন তার নেপথ্যে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না এখনও।

আরও পড়ুন
Advertisement