সন্তানের আলসেমি দূর করবেন কী ভাবে। ছবি: সংগৃহীত।
সন্তান কি খুব অলস হয়ে যাচ্ছে? বেশির ভাগ বাবা-মায়ের মুখে শুনবেন একই কথা। কাজ করতে বললেই যেন গায়ে জ্বর আসে ওর। একটা কথাও শোনে না। স্কুল থেকে ফিরেই ব্যাগটা ছুড়ে দেয় সোফায়। তার পরেই সোফায় গা এলিয়ে বসে টিভির রিমোট হাতে তুলে নেয়। খেলতে যেতে চায় না। মোবাইল হাতে পেলে যেন জগৎ সংসার ভুলে যায়। হোমওয়ার্ক করতে বললে নানা টালবাহানায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সব সময়েই গড়িমসি হাবভাব। মিশতেও চায় না খুব একটা। সেই চনমনে ভাবটাই যেন হারিয়ে যাচ্ছে। খেলা, পড়াশোনাতেও যেন উৎসাহ হারাচ্ছে দিন দিন।
কোভিড পরবর্তী সময়ে শিশুদের মধ্যে আলস্য খুব বেড়ে গিয়েছে। লকডাউনের দীর্ঘ সময় চার দেওয়ালে বন্দি থাকতে থাকতে কর্মবিমুখতা চেপে বসেছে অনেকেরই। আর এমন অভ্যাস স্থূলত্বেরও কারণ হয়ে উঠছে। কী ভাবে সন্তানকে সব কাজে উৎসাহী করে তুলবেন, তার কয়েকটা সহজ উপায় আছে। বাবা-মায়েরা জেনে নিন।
সংসারের কাজে সঙ্গী করুন
অনেক মা-বাবাই ভেবে থাকেন যে ছোট বাচ্চার বাড়ির কাজ শেখার দরকার নেই। কিন্তু ছোট থেকে বাড়ির কাজে হাত লাগানোর অভ্যাস তৈরি না হলে, ও স্বাবলম্বী হতে শিখবে না। তাই যখনই সম্ভব, ঘরের টুকটাক কাজকর্মে ওকে সঙ্গী করুন। যেমন, খাওয়ার সময়ে থালা, বাটি টেবিলে সাজানোর দায়িত্ব দিন ওকে। কী ভাবে কাচের ডিশ ধুয়ে, মুছে রাখতে হয় সেটা দেখিয়ে দিন। মাঝেমধ্যে নিজের হাতে করতেও দিন। মাইক্রোঅভেনে খাবার গরম করতে বলুন।
টুকিটাকি রান্না শেখান
সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, সব কাজে পারদর্শী করে তুলতেই হবে। প্রথমেই ছুরিকাঁচি বা বঁটি দেবেন না। রান্নার সময়ে সব্জিগুলি ধুয়ে আনার দায়িত্ব দিন ওকে। সব্জি ছাড়ানোর খোসা কী ভাবে তুলে ফেলতে হবে, সেটা শিখিয়ে দিন। ধীরে ধীরে টুকটাক রান্না করতে শেখান। এমন তো হতেই পারে। আপনি অফিসে আর স্কুল থেকে ফিরে আপনার সন্তান একা। বাড়িতে ওর জন্য সে রকম কোনও খাবারও মজুত নেই অথবা যা খাবার রেখে গিয়েছেন, তা ওর পছন্দের নয়। সে ক্ষেত্রে ওর ইচ্ছা হতেই পারে নিজের মনের মতো করে চটপট কোনও একটা খাবার বানিয়ে ফেলতে। যদি গ্যাসের কাছে যেতে দিতে না চান, তা হলে সহজ রেসিপি যেমন স্যালাড, স্মুদি এই সব বানানো শেখাতে পারেন।
গাছের পরিচর্যা শেখান
আপনার যদি বাগান করার শখ থাকে, তা হলে গাছের পরিচর্যার কাজে ওকেও হাত লাগাতে উৎসাহ দিন। একটি বা দুটি গাছের পরিচর্যার দায়িত্ব সম্পূর্ণ ওর উপরেই ছাড়ুন। দেখবেন মোবাইলে নয়, এই কাজেই উৎসাহ পাচ্ছে।
ঘর গোছাতে দিন
ছোট ছোট আসবাব পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব দিন ওকে। সন্তানের যদি আলাদা ঘর থাকে, তা হলে সেই ঘর গুছিয়ে রাখা, পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব দিন ওকেই। ভাল কাজ করলে পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করুন। শোয়ার ঘরে বালিশপত্র গোছানোর দায়িত্বও দিন।
আপনি সারা ক্ষণ টিভি দেখেন না তো?
বাড়িতে মা-বাবার আচার-আচরণ সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে। তাই সন্তানকে তার আলসেমি নিয়ে তিরস্কার করার আগে এক বার নিজেকে পরখ করে নিন। আপনিও যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখে সময় কাটান, তা হলে সন্তানও তেমনটা করবে। মোবাইল, ট্যাবলেট ও যে কোনও গ্যাজেট থেকে সন্তানকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। কার্টুন দেখা বা ভিডিয়ো গেমস খেলার জন্য সময় বরাদ্দ করে দিন ওর জন্য। সমবয়সি শিশুদের সঙ্গে খেলার উৎসাহ দিন।
খেলাধূলায় উৎসাহ দিন
এখন অনেক বাবা-মাই সন্তানকে বাইরে খেলতে পাঠান না। যদি বাড়ির সামনে মাঠ থাকে বা আবাসনে খেলার জায়গা থাকে, তা হলে দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা ওকে বাইরের পরিবেশে খেলতে দিন। ঘরেও দাবা অথবা ক্যারমের মতো খেলা শেখাতে পারেন। এতে আলসেমি তো কাটবেই, টিভি-মোবাইল দেখার আসক্তিও কমে যাবে।