সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালবাসাটা বড় না কি পাসওয়ার্ড জানতে চেয়ে সম্পর্ক ঠুনকো করে ফেলা, কোনটা বেশি জরুরি আপনার কাছে? প্রতীকী ছবি।
সম্পর্কের বাঁধনে জড়ালে একে অপরের সবটা ভাগ করে নিতে হয়। কিন্তু তাই বলে পাসওয়ার্ডও!
ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড তো বটেই, নেটফ্লিক্সের মতো ওয়েব প্ল্যাটফর্ম হোক বা অ্যামাজ়নের মতো কেনাকাটা করার অনলাইন ঠিকানা— একে অপরকে বিশ্বাস করে যুগল হোক কিংবা দম্পতি, এখন পাসওয়ার্ডটি ভাগ করে নেন কমবেশি সকলেই। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই মনে প্রশ্ন জাগে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পাসওয়ার্ডটাও কি সঙ্গীর সঙ্গে ভাগ করে নিতেই হবে? কিছু জিনিস কি ব্যক্তিগত থাকতে নেই?
অনেকেই দাবি করেন ভালবাসায় নাকি কিছুই গোপন থাকতে নেই। ভালবাসার এমন দাবি করে যাঁরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁরা একটা বিষয়ে নিঃসন্দেহ হতে পারেন, আর যাই হোক, আপনার সম্পর্কটি কিন্তু ‘খাঁটি প্রেমের’ নয়। মনোবিদদের মত এমনই। তাঁদের স্পষ্ট কথা, সম্পর্কে একে অপরের সঙ্গে নানা কিছু আদানপ্রদান হতে পারে। গান, বই, ভাবনা-চিন্তা, আদর— একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার হাজার অনুষঙ্গ থাকতে পারে। কিন্তু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ফোনের পাসওয়ার্ড নয়।
মনোবিদদের মতে, আসলে প্রেমের সম্পর্কে অনেক রকম রসায়ন কাজ করে। বিশেষ করে ‘পুরুষতান্ত্রিক’ সমাজে এখনও অনেক পুরুষই তাঁদের স্ত্রী কিংবা প্রেমিকাকে তাঁর অধীনস্ত মনে করেন। ভাবেন তাঁদের কোনও ব্যক্তিগত চাওয়াপাওয়া, নিজস্ব পরিসর থাকতে পারে না। তাঁর পোশাক-আশাক হোক কিংবা কোন বন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রেমিকা বা স্ত্রী মেলামেশা করবেন— সমস্ত কিছুতেই কর্তৃত্ব করে তাঁরা এক ধরণের আনন্দ পান। শুধু পুরুষই নন, অনেক মহিলাও কিন্তু একই ভাবে সঙ্গীর পাসওয়ার্ড জানার দাবি করেন। এটা হল এক ধরনের অনিশ্চয়তা। বলা ভাল, আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিজের সম্পর্কে, নিজেদের প্রেম কিংবা দাম্পত্য জীবনের রসায়ন সম্পর্কে কোনও বিশ্বাস না থাকলে মনে সন্দেহপ্রবণতা জন্মায়। কারও মনে যদি এরকম ইচ্ছে জন্মায় তাহলে বুঝতে হবে সম্পর্কে কোথাও একটা অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। এক বার পাসওয়ার্ড পাওয়া মানে, আপনার ইচ্ছা করবে সঙ্গীর আরও গোপনীয়তা লঙ্ঘন করি। তখন সঙ্গীর ফোন-ফেসবুক সমস্তটাই দেখতে ইচ্ছে করবে। শুধু তা-ই নয়, সব সময় নজরদারি চালানোর প্রবণতাও তৈরি হবে। সম্পর্কে এমন মনোভাব রাখা কিন্তু মোটেই কাম্য নয়।
সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলেই আপনার কিছুই ব্যক্তিগত থাকতে পারে না কিংবা আপনার সঙ্গীর সব বিষয় আপনাকে জানতেই হবে— এই ধারণাটা থেকেও বেরিয়ে আসার সময় এসে গিয়েছে। সে আপনার সবচেয়ে আপন। কিন্তু তাঁর কোনও নিজস্ব জগত নেই, এমন ভাবাটা আপনার পছন্দের মানুষের প্রতি অন্যায়। তার থেকে অনেক সহজ সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস রাখা। আপনি নিজে চাইলে একশো বার সঙ্গীর সঙ্গে সবটা ভাগ করে নিতেই পারেন। ভেবে দেখুন তো, সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালবাসাটা বড় না কি পাসওয়ার্ড জানতে চেয়ে সম্পর্ক ঠুনকো করে ফেলা, কোনটা বেশি জরুরি আপনার কাছে?