গ্রাফিক: সনৎ সিংহ। (মূল ছবি: পিটিআই)
সাধারণ সকাল হলে দিন শুরু হত বেশ কিছু ক্ষণ শরীরচর্চা আর তার পরে পুজো দিয়ে। এখন কোনও মতে তৈরি হয়ে ঠাকুর প্রণাম করে কাজে বেরিয়ে পড়েন। জীবন ও তার ধারা একেবারেই বদলে গিয়েছে গত কয়েক মাসে।
ভোটপ্রচার শুরুর আগে ও পরের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নন। রাজনীতিক রচনা আর অভিনেত্রী রচনার মধ্যে বিস্তর ফারাক। ‘পরীক্ষা’র দিন যখন একেবারে দোরগোড়ায়, তখন ভোটের পরে প্রচার থেকে ছুটি পেয়ে কী ভাবে আবার ফিরবেন নিজের জীবনে, সে সব নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা আলাপে বসলেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’।
শুটিংয়ের সেটে পরিশ্রম কম হয় না। কিন্তু ভোটপ্রচারের জন্য শ্রমের ধরন আলাদা। তার জন্য নিজের রুটিন পুরো বদলে ফেলতে হয়েছে হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনাকে। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতে তো একেবারেই ভাত খাই না। এখন প্রচারের জন্য এত জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে, কত জনের সঙ্গে দেখা করছি, এর মধ্যে ভাত না খেয়ে উপায় নেই। প্রায় রোজ দুপুরে ভাত খেয়েছি এই কয়েক মাস। কিন্তু ভোট মিটে গেলে অন্তত এক বছর ভাত খাব না। আবার রুটিনে ফিরতে হবে।’’
সাধারণত নায়িকাদের যেমন হয়, রচনা জীবনধারাও তেমন। অনেক নিয়ম মেনে চলা, শরীরচর্চা, খাওয়াদাওয়া— সব ঘড়ি ধরে। রাজনীতিতে সে সব মানতে গেলে মুশকিল। কাজের ধরন একেবারেই আলাদা। ফলে ভোটের সময়ে পুরনো রুটিন নিয়ে মাথা ঘামাননি রচনা। খাওয়াদাওয়া তো দূরের কথা! বললেন, ‘‘নিজের ছেলের সঙ্গেই দেখা হয়নি ভাল করে। খুব কম সময় দিতে পেরেছি ওকে। এর মধ্যে প্রায় দেখাই হয়নি ওর সঙ্গে। অর্ধেক দিন কাজের সূত্রে অন্য জায়গায় থেকেছি। বাড়ি ফিরলেও দেরি হয়েছে। তত ক্ষণে ও ঘুমিয়ে পড়েছে। ফলে মা-ছেলে যে কত দিন একে অপরকে ভাল করে দেখি না!’’
নায়িকা রচনা বনাম রাজনীতিক রচনাকে নিয়ে নানা প্রকার চর্চা হয়েছে গত কয়েক মাসে। তাঁর কথা, তাঁর সাজ, তাঁর চলাফেরা— সব নিয়েই হয়েছে বিশ্লেষণ। ব্যক্তি রচনা এ সবের মধ্যে চাপা পড়ে গিয়েছেন কি? তাঁর বন্ধুদের অনেকেই তেমন মনে করছেন। রচনা বলেন, ‘‘বন্ধুরা আমার অনেকটা জুড়ে। ওদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাই। ওরাই আমাকে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু ওদের সঙ্গে এর মধ্যে বিশেষ সময় কাটানোর সুযোগ হয়নি।’’ ভোটের কাজ শেষ হলে নতুন করে রচনাকে ফিরে পাবেন তাঁর বন্ধুরা। ব্যক্তিগত সময়, ব্যক্তি রচনাকে দেখার অপেক্ষায় তাঁরা। যদিও রচনা ভোটের সময়েও পাশে পেয়েছেন বন্ধুদের। বলেন, ‘‘আমার প্রচারে এসেছে বন্ধুরা। যে যেমন সময় পেয়েছে, তেমন করে পাশে থেকেছে। এর চেয়ে বেশি ওদের আমি খাটাতে চাই না। এই গরমে অত্যাচার করব নাকি বন্ধুদের উপরে!’’
এই গরমে তিনিই বা এত কাজের বোঝা সামলালেন কী করে? নিজেকে ঠান্ডা রাখার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য বিশেষ কিছু করেছেন গত কয়েক মাসে? ডাবের জল, ওআরএস তো সঙ্গী থেকেছেই, তবে রচনা কষ্ট করায় বিশ্বাস করেন। রাজনীতিক পরিচয়ে ক্রমশ স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠা রচনা বলেন, ‘‘যে কাজে এসেছি, তার নিজস্ব দাবি আছে। তাতে যদি গরমে পুড়তে হয় তো হবে। এ নিয়ে ভাবলে কোনও কাজ ভাল হয় না।’’
সাজগোজেও বদল এনেছেন দিদি নম্বর ওয়ান। ভোটপ্রচারের সাজের ভিড়ে নিজের নায়িকা সত্তাও প্রায় উধাও করে দিয়েছিলেন রচনা। সাধারণ সময়ে যেমন পোশাকে তাঁকে দেখাই যায় না, তা-ই হয়ে ওঠে এ কয়েক মাসের সঙ্গী। বলেন, ‘‘শাড়ি তো এমনিতে তত পরা হয় না। গরমে কষ্টই হয়। কিন্তু মানুষ আমাকে যে ভাবে দেখতে চায়, আমি সে ভাবেই সেজেছি প্রচারের সময়ে। তাতে আমার যতই কষ্ট হোক না কেন!’’ নিজের বুটিক আছে। সেখানে আগেই সুতির শাড়ি, সালোয়ার বানিয়ে রেখেছেন। কোনও দিন ঘোমটা দিয়েছেন রোদ থেকে বাঁচতে। কখনও হালকা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরেছেন গরম সয়ে নিতে। এটুকুই। যা!
রচনা বেড়াতে ভালবাসেন। সে সব হয়নি এর মধ্যে। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ যেমন এত দিন মন দিয়ে কাজ করেছেন, তেমন নিজেকে ছুটি দেওয়াতেও বিশ্বাস করেন। কাজের থেকে ছুটি পেলেই তাই ইচ্ছা রয়েছে ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার। আবার কিছুটা সময় নিজের সঙ্গেও কাটাবেন রচনা। বলেন, ‘‘ইচ্ছা আছে প্রাগ যাওয়ার। আগে যাইনি ওই দেশে। ইচ্ছা আছে, প্রাগের রাস্তায় একা একা হাঁটব।’’ সেই কয়েকটি দিনের ছুটির কথা ভেবেই এখন দারুণ লাগছে তাঁর।