মাশরুমের ‘চামড়া’ বদলে দিতে পারে দুনিয়া। ছবি: সংগৃহীত
হেলাফেলার দীর্ঘ ইতিহাস পেরিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত মাশরুম অবশেষে কিছুটা ছত্রাক কুলের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হলেও ‘ব্যাঙের ছাতা’ শুনলেই বাঙালির মনে অবহেলার উদ্রেক এখনও কার্যত বাধ্যতামূলক। কিন্তু এক বৈপ্লবিক আবিষ্কারে এ বার সেই ‘ব্যাঙের ছাতা’ই বদলে দিতে পারে ফ্যাশন দুনিয়া থেকে দৈনন্দিন জীবন। অন্তত এমনটাই অভিমত এক মার্কিন সংস্থার।
ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুম আসলে এক ধরনের ছত্রাক। ছত্রাকের দেহের একাংশ গঠিত হয় ‘মাইসেলিয়াম’ নামক একটি সুতোর মতো অংশ নিয়ে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার একটি জৈবপ্রযুক্তি সংস্থার গবেষকরা সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, তাঁরা এই ‘মাইসেলিয়াম’ ব্যবহার করেই তৈরি করেছেন এক প্রকার কৃত্রিম চামড়া। গুণগত মানে যা পশুচর্মের থেকে কম নয় কোনও অংশে।
চর্ম শিল্পের প্রয়োজনে পশু হত্যা নিয়ে পশুপ্রেমীদের আপত্তি দীর্ঘ দিনের। আবার জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাঁদের এই দাবি খুব একটা অসঙ্গতও নয়। তাই পশুর বদলে যদি ছত্রাক ব্যবহার করে একই ফল মেলে তা হলে তার সুফল হতে পারে বহুবিধ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বুননে তো বটেই, এমনকি, স্থায়িত্বের নিরিখেও সাধারণ চামড়াকে টেক্কা দিয়ে অনেক বেশি টেকসই হবে এই ‘মাইসেলিয়াম চামড়া’। পাশাপাশি এই চামড়া তৈরি করার সময় বেছে নেওয়া যায় যে কোনও আকৃতি, ফলে এই চামড়া ব্যবহারে কমবে অপচয়ও।
গবেষকদের আরও দাবি, এই চামড়া ভবিষ্যতে কমিয়ে দেবে কৃত্রিম তন্তু ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। ফলে প্লাস্টিক ঘটিত পরিবেশ দূষণ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবে বিশ্ব। পাশাপাশি চর্ম শিল্পের আরেকটি কু-প্রভাব হল বায়ুদূষণ। এই ছত্রাকজাত চামড়ার উৎপাদন নির্মূল করবে সেই সম্ভাবনাও।
তবে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত কিছু সমস্যাও রয়েছে এই উদ্ভাবনে। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই ছত্রাকজাত চামড়ার উৎপাদন বেশ ব্যয় বহুল। ফলে আপাতত এর ব্যবহার নামী-দামি কিছু ফ্যাশন সংস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তা ছাড়া এর গণ-উৎপাদনের ব্যবস্থাও নেই আপাতত। তবে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, গবেষণা এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সমাধান করা যাবে এই সমস্যাগুলির। সব মিলিয়ে এই আবিষ্কার প্রকৃতই বৈপ্লবিক, কিন্তু এই আবিষ্কারের প্রত্যক্ষ প্রয়োগ কতটা সফল হয় তা বলবে সময়ই।