দীপাবলির আগে কলকাতার আলো বাজার। ছবি: রয়টার্স।
আলোর উৎসবে আদি অকৃত্রিম মাটির প্রদীপ, মোমবাতি যেমন আছে, তেমনই ভীষণ ভাবে রয়েছে চিনা ল্যাম্প। ব্যাটারি বা ইলেকট্রিকের জোরে চারপাশে আলোয় আলো করে দেওয়া চিনা মিনিয়েচার দেখে ঐতিহ্যপ্রেমীরা যতই নাক সিঁটকোন, তাঁরাও জানেন, দূষণ বাঁচানো, বিপদ এড়ানো, ঝক্কিবিহীন এমন সহজ-সরল দীর্ঘস্থায়ী দীপাবলির অন্দরসজ্জা পাওয়া মুশকিল। প্রদীপ তেল না দিলে নিভবে। বাতি জ্বলবে তার মেয়াদের মাপ মতো। দুয়েরই আয়ু বড় জোর ঘণ্টাখানেক বা দুয়েক। কিন্তু কালীপুজো আর তার উদ্যাপন তো চলবে সারারাত। আলো ছাড়া আলোর উৎসবের উদ্যাপন কি সম্ভব? সেখানেই বাকিদের টেক্কা দিয়ে জয় চিনা ল্যাম্পের। প্রতি বছরই নতুন নতুন চিনে ল্যাম্প আসে বাজারে। এ বারও এসেছে। সেরা সাত চিনা ল্যাম্পের খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
মণি ল্যাম্প
মণি, অর্থাৎ মণিমানিক্য। ছোটবেলার গল্পের বইতে গুপ্তধনের গল্পে যেমন খোলা ট্রাঙ্কের মধ্যে বোঝাই করা রঙিন পাথরের ছবি থাকত, যা থেকে ঠিকরে বেরোতে আলো! এ-ও অবিকল তেমন দেখতে। এ রত্ন থেকে এমনি এমনি আলো ঠিকরোবে না। ব্যাটারি কিংবা বিদ্যুতের ধরতাই লাগবে। তা হলেই লাল-নীল-হলদে-সবুজ রঙের রত্নের ছটায় ঝলমল করবে ঘর। দেখতে পলকাটা হিরের মতো। মাথাটা গোল নীচের অংশ সূচলো। এ দেশে দীপাবলিতে ধনদেবী লক্ষ্মীরও পুজো হয়। সেই ভাবনা থেকে যদি কেউ বাড়িকে রত্নের আলোয় আলোকিত করতে চান তবে মণি ল্যাম্প হতে পারে আপনার বিকল্প। এ বছর চিনা ল্যাম্পের বাজারে নতুন ‘এন্ট্রি’ নিয়েছে মণি ল্যাম্প। দাম ৯০ টাকা থেকে শুরু। দৈর্ঘ্যে বাড়লে দামও বাড়বে।
মিনি টেবিল ল্যাম্প
টেবল ল্যাম্প মানে মায়াবী আলো-আঁধারি খেলা। রাতে বিছানায় শুয়ে যিনি গল্পের বই পড়তে ভালবাসেন, তিনি বুঝবেন ওই বিলাসিতায় মৌতাত আনে টেবিল ল্যাম্প। রাতের অন্ধকারকে বিরক্ত না করে পাশে শুধু সেইটুকু উষ্ণ আলো রাখা, যতটুকু প্রয়োজন। একান্ত সময়ের প্রিয় সঙ্গী সেই টেবিল ল্যাম্প এ বার দীপাবলির আলোর সাজেও। ছোট্ট ছোট্ট স্ফটিকের চিনাল্যাম্প এসেছে বাজারে। দেখতে অবিকল টেবিল ল্যাম্পের মতোই। ব্যাটারিচালিত, তাই সুইচ অন করে যেখানে খুশি বসিয়ে দিন। স্ফটিকের নানা রকম নকশা থেকে উষ্ণ হলুদ রং ঠিকরে পড়বে সিঁড়িতে, বসার ঘরে, জানলায়, বইয়ের তাকে, যেখানে সাজাতে চান সেখানেই। সবচেয়ে ছোটটির দাম ৬০ টাকা।
মিনি ফোয়ারা
আশি-নব্বইয়ের দশকে এক ধরনের ল্যাম্পের রমরমা হয়েছিল। নাম ছিল ফাউন্টেন ল্যাম্প। তার নীচের অংশখানা ‘উড়নচাকির’ মতো দেখতে। উপরে ফোয়ারার মতো ছড়িয়ে থাকত স্বচ্ছ নাইলনের তারের গোছা। ‘উড়নচাকি’র গায়ের ছোট, বড়, মাঝারি বোতামে চাপ দিলেই রঙিন ফোয়ারার মতো জ্বলে উঠত নাইলনের গোছা। ডগাগুলো জোনাকির মতো ঝিকমিকোতে। অন্ধকার ঘরে পুরোদস্তুর রঙিন আলো দেওয়া ফোয়ারাই মনে হত তাকে। সেই আলোর ফোয়ারা এক সময়ে বাড়ির চৌহদ্দি থেকে বিদায় নিলেও আবার এসেছে ফিরিয়া। তবে ছোট সংস্করণে। ছেলেবেলার নস্টালজিয়া তাজা করতে চাইলে ব্যাটারিতে চলা মিনি ফোয়ারা ল্যাম্পে ঘর সাজান। দাম ৩০-৪০ টাকা।
বাব্ল ল্যাম্প
সাবান গোলা জলে বুদবুদ বানাতে ভালবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পেতে বার করতে হবে! বয়স ৮ হোক কিংবা ৮০, মনে মনে ঠাট্টাপ্রিয় হোন বা ‘সিরিয়াস’ মানুষ— বাব্ল বা বুদবুদ বানানোর যন্ত্রপাতি হাতের কাছে পেলে হাত নিশপিশ করবে প্রায় সবারই। হাওয়ায় ভাসা স্বচ্ছ গোলগাল বল দেখে ইচ্ছে করবে আঙুল ছোঁয়াতেও। আসল বুদবুদ বুদবুদের মতো উবে গেলেও বাব্ল ল্যাম্পের স্বচ্ছ বুদবুদকে নিশ্চিন্তে হাতের তালুতে ধরতে পারেন। ফেটে যাবে না। ছেঁকাও খাবেন না। কারণ, ল্যাম্প থাকবে ওই বুদবুদের ভিতরে। বাব্ল ল্যাম্প দিয়ে দীপাবলির অন্দরসজ্জায় তৈরি করতে পারেন ‘ড্রিম সিকোয়েন্স’। দাম শুরু ১০০ টাকা থেকে।
ঝুমর
একেবারে দরবারি ঝাড়বাতি। তবে বাতির বদলে নকল স্ফটিকের ঝুমরের আড়ালে জ্বলবে-নিভবে চিনা মিনিয়েচার। স্ফটিকের প্রতিফলনে সেই আলো ছড়িয়ে পড়বে চারপাশে। দেওয়ালে তৈরি করবে মায়াবী আল্পনা। আলোর রং ইচ্ছেমতো বদলে নেওয়া যাবে। ঝাড়ও মিলবে ছোট, বড়, মাঝারি সব রকম। চাঁদনির মার্কেটে তেমনই উজ্জ্বল ঝাড়বাতির নাম জিজ্ঞাসা করায় জানা গেল, নাম ঝুমর। দাম ৪৫০ টাকা থেকে শুরু। আকার অনুযায়ী বাড়বে। দীপাবলিতে বাড়ির ভিতর রাজদরবারি মেজাজ আনতে চাইলে চাঁদনির আলোর বাজার থেকে ‘ঝুমর’ কিনে বাড়ি ফিরতে পারেন।
এলইডির প্রদীপ
দীপাবলি যখন, প্রদীপ ছাড়া সম্ভব নয়। গত বছর বাজার মাত করেছিল জলপ্রদীপ। টুনি বাল্ব দেওয়া প্লাস্টিকের প্রদীপে জল ঢাললেই ‘ম্যাজিক’। সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে উঠত ইলেকট্রনিক ‘শিখা’। এ বছরেও দু’রকম আলোর প্রদীপ এসেছে। তার মধ্যে একটি তারে গাঁথা ছোট ছোট আলোর প্রদীপের মালা। অন্যটি আলোর রেখা দিয়ে তৈরি প্রদীপ। বসার ঘরে বা সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ের দেওয়ালে অমন একখানি বা পাশাপাশি বেশ কয়েকটি এলইডি রেখা প্রদীপ দেওয়ালে আটকে রাখলে দীপাবলির অন্দরসাজ অন্য মাত্রা পেতে পারে। দাম দেড়শো টাকা থেকে শুরু। আকার অনুযায়ী বাড়বে।
জলপদ্ম
গত বারের জলপ্রদীপের সঙ্গেই বাজারে এসেছিল জলপদ্ম। জলে ভাসমান বাতির সঙ্গে ফুল সাজান অনেকে। ওই জলপদ্ম একাই ফুল আর প্রদীপের অভাব মেটাবে। চওড়া গামলা বা বাটিতে জল ভরে পদ্ম ভাসিয়ে দিলেই জ্বলে উঠবে পরাগের মাঝবরাবর আটকানো টুনি ল্যাম্পের শিখা। এ বারও দেখা গেল জলে ভাসা পদ্মের চাহিদা রয়েছে। দাম ৪০ টাকা থেকে শুরু।