Poila Baisakh Home Decoration

কুলো, হাঁড়ি, পাখায় লিখে, এঁকে সাজান অন্দরমহল, বৈশাখ বরণে থাক নিজস্ব ছোঁয়া

আধুনিক ঘরেও থাকে সাবেক সাজ। থাক নিজস্বতা। বর্ষবরণে কুলো, হাতপাখা, রজনীগন্ধায় কেমন হবে গৃহের সাজ?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩৯
বৈশাখের অন্দরসজ্জা।

বৈশাখের অন্দরসজ্জা। ছবি: সংগৃহীত।

বছরভর যেমন ভাবেই গৃহসজ্জা হোক না কেন, বৈশাখ বরণের দিনটি যে ভীষণ আলাদা! রবি ঠাকুরের গান, ভূরিভোজ, হালখাতা— এই দিনটিতে যেন নতুন ভাবে ফেরে বাঙালিয়ানা। বছরভর চাইনিজ়, তাই, কন্টিনেন্টালে মজে থাকা বাঙালির এ দিনটিতে পোলাও, পাঁঠার মাংস, মাছের কালিয়া ছাড়া চলে না।

Advertisement

পোশাক থেকে পাতে যখন বাঙালিয়ানা, তখন গৃহসজ্জাও তো অন্য রকম হতেই হবে। সাবেকি অথচ নিজস্বতা, কিছু অদলবদলে বৈশাখ বরণে কী ভাবে সাজিয়ে তুলবেন অন্দরমহল?

কুলোতেই শিল্প

কুলোতে লিখতে পারেন ‘বৈশাখী-বার্তা’।

কুলোতে লিখতে পারেন ‘বৈশাখী-বার্তা’। ছবি: ইন্টারনেট

পুজো, পার্বণ, মঙ্গল অনুষ্ঠানে যে কুলোর দরকার হয়, বাড়ির আনাচকানাচে ধুলো পড়া সেই কুলোটিকেই বার করে আনুন। সাফসুতরো করে নিজের শিল্পীসত্তা উজাড় করে দিন। সেই ছোট্টবেলায় যেমন নিজের মতো করে আঁকিবুকি কেটেছেন, কার্ডে লেখালিখি করেছেন, সে ভাবেই কুলো হোক রঙিন।

প্রথমেই কুলোটিকে রং করে ফেলুন। আঁকার রং চাইলেই সামনের দোকানে পাবেন। কুলোর উপর যে হেতু লেখালিখি করতে হবে, তাই মূল রংটি হলুদ বা সাদা রাখলেই ভাল। কুলোর বেড়ে থাক গাঢ় রঙের ছোঁয়া। ভিতরে পয়লা বৈশাখ বা শুভ নববর্ষ লিখবেন, না কি ফুল লতাপাতা আঁকবেন, পছন্দ থাক আপনার। কুলোর বেড়ে গাঢ় রং শুকিয়ে গেলে সরু তুলিতে সাদা রঙে আলপনা এঁকে দিন।

হাতপাখার দিন কি গিয়েছে?

হাতপাখার ডাঁটিতে চাইলে রং করে নিন। তার পর কাপড়ের কুঁচি আটকে দিন পাখার গোল অংশে।

হাতপাখার ডাঁটিতে চাইলে রং করে নিন। তার পর কাপড়ের কুঁচি আটকে দিন পাখার গোল অংশে। ছবি: ইন্টারনেট।

শহরাঞ্চলে নিত্যদিন লোডশেডিং এখন হয় না। কদাচিৎ যখন হয়, সামাল দিতে ইনভার্টার থাকে। তাই হাতপাখা এখন বাঙালি বাড়িতে চট করে চোখে পড়ে না। তবে চাইলে ফুটপাতে বা স্থানীয় দোকানে খোঁজ করলে বিভিন্ন আকারের হাতপাখা মিলে যাবে। নকশাকাটা সেই হাতপাখা দিয়ে সাজিয়ে তুলুন দেওয়াল।

হাতপাখায় রং করে তার উপর ‘বৈশাখী-কথা’ লিখতেই পারেন। সে সব করতে না চাইলে সুন্দর কোনও লাল গামছা সরু ফিতের মতো কেটে নিন। পুরনো কাপড়ের শৌখিন পাড়ও কাজে লাগাতে পারেন। আর সে সব ঝক্কি মনে হলে চুল বাঁধার লাল ফিতেতেই কাজ হবে। লম্বা ফিতের এক প্রান্তে আঠা লাগিয়ে কুঁচি করে নিন। সেলাইয়ের দরকার হবে না। সেই কুঁচি হাতপাখার বাইরের অংশে আঠা দিয়ে সেঁটে দিলেই দিব্যি দেখাবে। তিনটি ভিন্ন মাপের হাতপাখায় এ ভাবে কুঁচি আটকান। আর মাঝারি হাতপাখায় ‘এসো হে বৈশাখ’ আর সন-তারিখ লিখে ফেলুন। হাতপাখা যখন দেওয়ালে সাজাবেন, নির্দিষ্ট দূরত্বে উপর থেকে নীচে কৌণিক ভাবে সাজান। দেখতে ভাল লাগবে। সন লেখা পাখাটি মাঝে দিন।

দইয়ের হাঁড়িও হোক সজ্জার অঙ্গ

মিষ্টি এখন প্লাস্টিকের বাটিতে আসে। তবে খুঁজলে দইয়ের হাঁড়ি যে মিলবে না, তা কিন্তু নয়। হাঁড়িটিতে লাল রং করে সাদা বা হালকা রং দিয়ে তুলির সাহায্যে কিছু একটা নকশা এঁকে ফেলুন। পুজো-পার্বণে এখনও অনেকেই মেঝেতে আলপনা দেন। সমাজমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে তেমনই কিছু একটা ফুটিয়ে তুলুন। রং শুকোলেই হাঁড়ি প্রস্তুত। এ বার তাতে জল দিয়ে টাটকা বেল, জুঁই ভাসিয়ে দিন।

বৈশাখ-বরণ

নববর্ষের বার্তা আর হালখাতাও শোভা পাক গৃহে।

নববর্ষের বার্তা আর হালখাতাও শোভা পাক গৃহে। ছবি: ইন্টারনেট

এত কিছুর মাঝে বৈশাখ বরণের লেখালিখি বাদ গেলে কি চলে? বাড়িতে ছোট সদস্য থাকলে তার ভাঁড়ারে দেখুন পিচবোর্ড আছে কি না। স্কেচ পেন, রং এ সবও তার কাছেই পেয়ে যাবেন হয়তো। আর ঝক্কি এড়াতে চাইলে অনলাইনে আনিয়ে নিন ফাঁকা উডেন সাইন। ‘ব্ল্যাঙ্ক হ্যাঙ্গিং উডেন সাইন’ নামে খুঁজলেই মিলবে। সেটির উপর রং করতে পারেন। আর তা না চাইলে শুভ নববর্ষ বেশ চওড়া করে স্কেচপেন দিয়ে লিখে নীচে সন উল্লেখ করতে পারেন। এই জিনিসটিতে হুকে ঝোলানো দড়ি থাকে। চাইলে রবীন্দ্রনাথের গানের পঙ্‌ক্তি লিখেও ঘরের কোথাও ঝুলিয়ে দিতে পারেন।

নববর্ষের হালখাতাই বা বাদ যায় কেন?

নববর্ষে দোকানিরা হালখাতা করেন। আপনি ব্যবসায়ী না হলেও অন্দরসজ্জায় হালখাতা রাখতেই পারেন। পুরনো ডায়েরি লাল শালু দিয়ে মুড়ে সোনালি জরির ডোর কায়দা করে বেঁধে দিলেই হবে।

তবে এত যে জিনিস বানালেন, সাজাবেন কী ভাবে? সেটা কিন্তু ঘরের অবস্থান বুঝে নিজেকে ঠিক করতে হবে। তবে সমস্ত কিছু দু’দিনে বানিয়ে ফেলতে না পারলেও অসুবিধা নেই। যেটুকু হবে, তা দিয়েই সেজে উঠবে অন্দরমহল। আর হ্যাঁ, টাটকা রজনীগন্ধা ছাড়া কিন্তু বর্ষবরণ ঠিক জমবে না। এই সব কিছু সাজিয়ে নিন মনের মতো করে।

Advertisement
আরও পড়ুন