ভুলে যাওয়ার অভ্যাস! সতর্ক হন। আইস্টক
হয়তো বই পড়ে এক জায়গায় গুছিয়ে রাখলেন চশমাটা। কিছুক্ষণ পর তার খোঁজ করলেন অন্য কোনও জায়গায়। সময়ে দরকারি জিনিস তো হাতের কাছে পেলেনই না। উল্টে চারপাশ গরুখোঁজা খুঁজে, হয়রানির চূড়ান্ত। নিজের উপরই নিজের বিরক্তি।
এমন হয় কি কখনও? তখন, ‘ভুলো মন’-এর দৌরাত্ম্যে বিরক্ত হয়ে ‘বয়স হচ্ছে’ বলে এড়িয়ে যান কি! গবেষণা বলছে, ‘ভুলো মন’কে হালকা ভাবে নেওয়াই হল আরও বড় ভুল। কারণ এই ধরনের ভুলে যাওয়ার আড়ালে থাকতে পারে উদ্বেগ, হতাশা, অনিদ্রার মতো রোগের প্রাথমিক উপসর্গ। এড়িয়ে গেলে সেই সব সমস্যা বাড়বে। তবে গোড়াতে সমাধান করলে লাভ আপনারই। সমস্যাকে এড়িয়ে না গিয়ে তাই তার মুখোমুখি হওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
তা হলে কী করা উচিত? ভুলো মনের সঙ্গে লড়তে কোন ব্রহ্মাস্ত্র তুলে নেবেন গাণ্ডিবে? জবাব দিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত ম্যাক লিন হাসপাতালের নিউরো সাইকোলজিস্ট লিডিয়া চো। জানিয়েছেন, এই ব্রহ্মাস্ত্রের নাম ‘ডানসার্স’। বয়সের সঙ্গে কিছুটা বিস্মৃতি স্বাভাবিক। সারা জীবনে যা-যা মাথায় ঢুকছে, তার সবটা মনে রাখা তো সম্ভব নয়। তবে রোজ আমাদের জীবনযাপনে যদি আকছার ভুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। ‘ডানসার্স’ সেই সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ।
ভাবছেন নাচ দেখে স্মৃতি শক্তি বাড়ানো!— ভুলোমনের এমন সমাধান জীবনে শোনেননি কখনও! আসলে এই ‘ডানসার্স’-এর সঙ্গে নাচের সম্পর্ক নেই কোনও। স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে হলে যা যা করতে হবে, তার অদ্যাক্ষরগুলি মিলিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডানসার্স’।
ডিস্কো ডানসার্স গানের কথা গুলো মনে আছে! ডি সে হোতা হ্যায় ডান্স...। ঠিক সেই ভাবেই, ডানসার্সের ক্ষেত্রে—
ডি হল ডিজিজ কন্ট্রোল অর্থাৎ রোগ নিয়ন্ত্রণ। ভুলোমনের সমস্যা হলে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায় আপনারই।
এ হল অ্যাক্টিভিটি। অর্থাৎ শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকা। যে কোনও কার্ডিও ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা, খেলাধূলা, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও রক্তের সঞ্চালন বাড়ে।
এন হল নিউট্রিশন। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক শ্রীময়ী তরফদার জানালেন, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি খুবই জরুরি। কারণ খাবার না পেলে খিদে বোধই থাকে আমাদের মন জুড়ে। সময়ে খাবার পেলে যেমন মন সংযোগে সুবিধা হয়, মেধা বৃদ্ধিতেও কাজে আসে। তা ছাড়া পুষ্টির অভাব মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে। বিশেষ করে ডি-থ্রি ভিটামিনের অভাব হলে হতাশাবোধ কাজ করতে শুরু করে শরীরে। আবার গ্লুকোজ কমে গেলে আমরা সব ভুলে যেতে থাকি।
সি হল কগনিটিভ স্টিমুলেশন। মেধাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে হবে রোজ। একেই বলে কগনিটিভ স্টিমুলেশন। সেটা গেম খেলেও করা যেতে পারে। আবার রোজ যে হাতে ঘড়ি পড়েন সেই হাত বদল করেও মস্তিষ্ককে পরীক্ষার মুখে ফেলা যেতে পারে। এই যে বার বার অন্য হাতে ঘড়ি দেখার কথা মনে রাখা, এতেও কাজ হবে। জানাচ্ছেন মনোবিদ ও মেধা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শ্রীময়ী তরফদার।
ই মানে এনগেজমেন্ট। বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে মেশা। কথা বলা। পাড়া পড়শির সঙ্গে কুশল বিনিময় হতে পারে। আবার অফিসের সহকর্মীও হতে পারেন। একা কোনও ভাবেই না হওয়া।
আর হল রিল্যাক্সেশন। মাথা হালকা করুন। মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা হীন সময়ও দরকার। আর মাথাকে ফাঁকা করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল গভীর শ্বাস নেওয়া। জানালেন শ্রীময়ী।
এস অর্থাৎ স্লিপ। দরকার ঘুম। যথেষ্ট পরিমাণে। শরীরকে বিষমুক্ত করার অনেক রকম টোটকা অনুসরণ করি আমরা। মস্তিষ্ক নিজেকে কালিমামুক্ত করে ঘুম দিয়ে। তাই পরিমাণ মতো ঘুম না হলে তা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলবে। ঘুমের এক ঘণ্টা আগে যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ম্যাক লিন হাসপাতালের প্রাক্তন অধিকর্তা চিকিৎসক জেমস এলিসন।
এলিসনের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে সার্বিক ভাল থাকা সম্ভব নয়। আর মানসিক ভাবে ভাল থাকার জন্য জীবন ধারায় সামান্য বদলই যথেষ্ট। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ‘ডানসার্স’-এর নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করলে মনের স্বাস্থ্য আর স্মৃতি শক্তি ভাল থাকতে যে বাধ্য, তা মানছেন শ্রীময়ীও। তিনি জানাচ্ছেন, বয়স যা-ই হোক ডানসার্সের নিয়মগুলো পালন করলে তা আমাদের মানসিক রোগের সম্ভাবনা কমবে।