সিমা গ্যালারিতে নয়া প্রদর্শনী —নিজস্ব চিত্র।
কোথাও যুদ্ধ, কোথাও অসুখ। গোটা বিশ্ব যেন টালমাটাল। তার মধ্যেই চলছে জীবন। কখনও থেমে যাবে যাবে সব, এমন ভাবনা আসে। আবার কোথাও গিয়ে গতি পায় জীবন। এ ভাবেই চলতে থাকে। নতুন ভয়, নতুন আকাঙ্খা, নতুন ভাবনা, নতুন ছবি, নতুন দৃশ্য, নতুন সুর জন্মায়। এ ভাবেই তো এগিয়ে চলা।
রং মানেই এক প্রকার নয়। আকার কখনও একরৈখিক নয়। আমেরিকার কবি টি এস এলিয়টের ভাবনার কথা মনে করান সিমা গ্যালারির প্রধান প্রশাসনিক কর্তা প্রতীতী বসু সরকার। বলেনও সে কথা। মনে করেন, ‘‘শিল্প গতিময়তার আর এক রূপ।’’ কবিরও তেমনই ভাবনা। আর কবির সেই ভাবনায় ভর দিয়ে বালিগঞ্জের সেই গ্যালারিতে শুরু হয়েছে নয়া প্রদর্শনী। নাম ‘শেপ উইদআউট ফর্ম, শেড উইদআউট কালার’।
জীবনযুদ্ধে হেরে না যাওয়াকে উদ্যাপন করেন যাঁরা, তাঁরাও তো শিল্পের অঙ্গ। তাঁদের নানা ভাবনায় ফিরিয়ে আনে নিত্যনতুন শিল্পকর্ম। আবার পুরনোকে সঙ্গে নিয়েও চলেন সেই শিল্পীরা। সিমা গ্যালারির নতুন প্রদর্শনী তাই একসঙ্গেই নতুন ও পুরনোকে আগলে নিয়ে সেজে উঠেছে। এর মধ্যে যেমন আছে অর্পিতা সিংহের মতো প্রবীণের কাজ, তেমনই আছে নবযুগের প্রতীক প্রশান্ত পাতিলের শিল্পও।
মোট ৪৯টি শিল্পীকাজ প্রদর্শিত হচ্ছে এ বার। শুক্রবার ছিল প্রদর্শনীর সূচনা অনুষ্ঠান। নানা শিল্পীর জমায়েত সিমা গ্যালারির যে কোনও অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শিল্পী বিমল কুন্ডু, সমীর আইচ, জয়া গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় যেমন উপস্থিত ছিলেন, তেমনই নব প্রজন্মের শিল্পী অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায়, রেশমী বাগচী সরকার, কিংশুক সরকারও এসেছিলেন সূচনা অনুষ্ঠানে। তাঁদের সকলেরই কাজ দেখানো হচ্ছে নতুন এই প্রদর্শনীতে।
একঝাঁক শিল্পীর জমায়েতে যোগ দিতে এসেছিলেন প্রবীণ এক দম্পতি। প্রয়াত শিল্পী মাধুরী কপূরের বাবা-মা তাঁরা। শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে কপালে একটি ব্যান্ডের সঙ্গে তুলি আটকে দিনের পর দিন ছবি এঁকে গিয়েছেন মাধুরী। ২০১৬ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এ বারের প্রদর্শনীতে রয়েছে তাঁর আঁকা ছবিও। কন্যার মৃত্যুর এত বছর পরে তাঁর আঁকা ছবি গ্যালারিতে দেখতে এসেছিলেন কপূর দম্পতি। কথায় কথায় জানালেন কত কষ্টকে জয় করে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজের লেখা এবং আঁকার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন মাধুরী। তাঁর যে ছবি এখানে দেখানো হচ্ছে, তার নাম ‘বার্ড’। অর্থাৎ, পাখি। কষ্ট জয় করে উড়ে বেড়ানোর বার্তা দেয় সে ক্যানভাস।
শিল্পীদের এমন নানা কষ্ট থাকে। কথা থাকে। কষ্ট জয় করে তা জায়গা করে নেয় কখনও ক্যানভাসে, কখনও কাগজে। এই প্রদর্শনী সময়ের নানা কাঠিন্যকে জয় করার বার্তা নিয়েই হাজির। দেখা যাবে বিকাশ ভট্টাচার্য, গণেশ পাইন, যোগেন চৌধুরী, লালুপ্রসাদ সাউ, শাকিলা থেকে শুরু করে বিমল কুন্ডু, সুমিত্র বসাক, সোমনাথ হোড়, সোহম গুপ্ত, সুমন চন্দ্র প্রমুখের কাজ।
বালিগঞ্জের সিমা গ্যালারিতে প্রদর্শনী চলবে আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মাঝে আছে নৃত্যের কর্মশালা। আছে শিল্প সংক্রান্ত আলোচনাও।